কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উলিপুরে হঠাৎ করে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, নদী পাড়ের মানুষের বসতভিটা ও ফসলি জমি। গত কয়েকদিনে দুইটি মসজিদ প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা, গাছপালা ও ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে, হাট-বাজারসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।
সরেজমিন বুধবার (০২ জুন) বিকালে উপজেলার বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন বজরা জামে মসজিদটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী মসজিদটির অবকাঠামো ভেঙ্গে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়া যে কোন মহুর্তে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
ওই এলাকার সবুজ মিয়া (৪০), সহিদুর রহমান (৫৪), রাকিবুল ইসলাম (৪২), মাঈদুল ইসলাম (৪১)সহ অনেকে জানান, অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের কারনে ভিটে-মাটি, গাছপালা ও ফসলি জমি হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন। নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতর্ৃপক্ষের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হলেও সময়মত কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ।
বজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন বাবলু জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টির পানিতে গত কয়েকদিনে ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে পুরান বজরা জামে মসজিদ, ভাঙ্গনের মুখে পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ভেঙ্গে নেয়া হচ্ছে। ৫০-৬০টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে পুরান বজরাহাট, পশ্চিম বজরা দাখিল মাদ্রাসা, বজরা বাজার থেকে পুরান বজরা যাওয়ার এলজিইডি নির্মিত পাকা সড়ক।
তিনি আরও জানান, সড়ক ও জনপদ বিভাগ কতর্ৃক সদ্য নির্মিত পাকা রাস্তাটির ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এছাড়া ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে চর বজরা পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চর বজরা পূর্ব সাব বাঁধটি (বেড়ি বঁাধ) ভেঙ্গে যাওয়ায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতি হবে। অপর দিকে ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত বেগমগঞ্জ ও সাবেহের আলগা ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গন দেয়া দিয়েছে।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে ৩০টি বাড়ি ও মোল্লারহাট জামে মসজিদটি ইতিমধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে ক্ষুদিরকুটি উচ্চ বিদ্যালয়, বেগম নুরনাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কয়েকশত বাড়ি ঘর।
এছাড়া বজরা ইউনিয়ন সংলগ্ন গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের লকিয়াপাড়া গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি ঘর, গাছপালা ও ফসলি জমি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকি মুখে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাশিমবাজার হাট ও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি জানান, বজরা ইউনিয়নের ভাঙ্গল কবলীত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রাম অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উলিপুর পওর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মোঃ রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ভাঙ্গনের বিষয়গুলো উর্দ্ধতন কর্তপক্ষকে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে কাশিম বাজার ও সাহেবের আলগা এলাকার নদী ভাঙ্গনরোধে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই ভাঙ্গন রোধে কাজ শুরু হবে। ভাঙ্গন কবলীত বজরা ইউনিয়ন পরিদর্শনের জন্য অফিস থেকে লোক পাঠানো হয়েছে।