উলিপুর ( কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : কুড়িগ্রামের উলিপুরে মাত্র ৬ দিনের ব্যবধানে খরস্রোতা তিস্তা নদীর করালগ্রাসে ৮০ টি পরিবার তাদের বসতভিটাসহ সর্বস্ব হারিয়ে বিভিন্ন রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নীচে নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
গোড়াইপিয়ার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোড়াইপিয়ার পিয়ারিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ক্লিনিক গোড়াইপিয়ার জামে মসজিদসহ শতাধিক বাড়ী-ঘর এখন হুমকীর মূখে রয়েছে। যে কোন মহুর্তে এসব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। কুড়িগ্রাম পাউবো ৫ হাজার জিও টেক্সটাইল ব্যাগ নিয়ে ভাঙ্গন রোধে জরুরী কার্যক্রম শুরু করেছে।
এর মধ্যে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন স্হানীয় সাংসদ এমএ মতিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-এ-জান্নাত রুমি ও উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু । তারা ভাঙ্গন প্রতিরোধসহ ক্ষতিগ্রস্থদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তা নদী তীরবর্তী গোড়াইপিয়ার গ্রামের ঘর-বাড়ী হারা মানুষের বুকফাঁটা আহাজারী। এ সব পরিবার জীবনের সমস্ত আয়-রোজগার দিয়ে এক চিলোমাটি ও মাথা গোজার জন্য বসতবাড়ী তৈরি করেছিলো। কিন্তু,খরস্রোতা তিস্তার কড়াল গ্রাসে ৬ দিনের ব্যবধানে তাদের সব কিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ।
থেতরাই ইউ,পি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, দীর্ঘ ১৫-২০ বছর থেকে এই এলাকাটি নদীর ভাঙ্গন থেকে নিরাপদ ছিলো। সম্প্রতি গোড়াইপিয়ারের উজানে দলদলিয়া ইউনিয়রে নদী তীরবর্তী করপূরা এলাকায় পাউবো তীররক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে সেখানে স্রোত বাঁধা পেয়ে সরাসরি গোড়াইপিয়ার এলাকায় আঘাত হানলে আকর্ষিক ভাবে গ্রামটি নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়। ইতোমধ্যে গ্রামটির প্রায় ৮০ টি পরিবার তাদের ভিটেমাটি তিস্তার গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বর্তমান মাত্র ২০ গজের মধ্যে ভাঙ্গনের অপেক্ষায় রয়েছে গোড়াইপিয়ার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোড়াইপিয়ার পিয়ারিয়া দাখিল মাদ্রাসা, গোড়াইপিয়ার জামে মসজিদ ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক।
তিনি আরো বলেন, তিস্তা নদীর বুকে বড় বড় চর জেগে ওঠায় নদীর তীব্রস্রোতের সৃষ্টি হয়ে নতুন নতুন এলাকা ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে। ঐ গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, করপূরা এলাকায় তীররক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় যদি কুড়িগ্রাম পাউবো প্রকৌশলীগণ গোড়াইপিয়ার গ্রামের দিকে আসা নদীর স্রোত ঘুড়িয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নিতেন তাহলে আজ এই গ্রামের এত গুলো পরিবারকে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারাতে হতনা। পাউরো এখানে যেনো ‘চোর যেয়ে খোর দেয়ার অবস্থানে রয়েছে’। এখন জিও টেক্সটাইল ব্যাগ এনে পানির নীচে অন্ধকারে ভাঙ্গন রোধের ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, ‘পাউবো’র প্রকৌশলীদের উদাসীনতা ও খামখেয়ালীপনায় প্রতি বছর এমন জরুরী মেরামত কাজের মুখোমুখি হতে হয় পাউবোকে।
গোড়াইপিয়ার গ্রামের ভাঙ্গনের শিকার পরিবার গুলো হচ্ছে, সাহেব আলী কুটিয়াল, আশরাফুর কুটিয়াল, এরশাদুল কুটিয়াল, তোতা কুটিয়াল, বকুল মিয়া, আতিয়ার রহমান, ছক্কু মিয়া, সাইদুল হক, সফিকুল ইসলাম , নাজমুন নাহার, আঃ ছালাম, আঃ হাই , বাছুর উদ্দিন, শাহাজান আলী, সিরাজুল হক, মহুবর হোসেন, নূর ইসলাম, দবির উদ্দিন, জমিলা, মজনু মিয়া, মান্নন, মরিয়ম বেগম, সোহরাব হোসেন, আবুল কালাম, কালাম, মকবুল হোসেন, খলিলুর রহমান, আজগার আলী, আসিদুল হক, একরামুল, এরশাফুল,আজিজুল, দুলু মিয়া ওবাইদুল ও সৈয়দ আলী সহ প্রায় ৬০-৬৫ জনের বাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গোড়াইপিয়ার এলাকায় জরুরী মেরামত কাজ তদারকির কাজে নিয়োজিত সেকসনাল অফিসার (এসও) মার্জান হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘৩ দিন আগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের চীপ-ইন্জিনিয়ার, এসি সহ উর্ধ্বতন প্রকৌশলীগণ নৌকায় গোড়াইপিয়ার সহ তিস্তাতীরবর্তী এলাকা পরিদর্শন করেছেন। গত শুক্রবার থেকে আমরা ৫ হাজার জিও টেক্সটাইল ব্যাগ নিয়ে ভাঙ্গন রোধে জরুরী কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতিমধ্যে ২ হাজার ব্যাগ নিক্ষেপ করায় অনেকটা সুফল পাচ্ছি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ রয়েছে এলাকাটি রক্ষায় যত জিও ব্যাগ দরকার তা প্রদান করা হবে। ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ভলগেট ড্রেজার তিস্তার ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় পৌঁসেছে। কুড়িগ্রাম পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু জানান, এলাকাটি রক্ষায় ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করেছে। এলাকা রক্ষায় সব ধরণের ব্যবস্থা নোয় হবে।#