এন এস বি ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় মিধিলি উপকূলে আঘাত হেনেছে। ধীরে ধীরে স্থলভাগে উঠে আসছে। ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিক্ষয় করে পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসবে সন্ধ্যার মধ্যে। আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন এনএসবি কে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ আজ দুপুরে খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে মোংলা-পায়রা উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে এবং আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সন্ধ্যা নাগাদ অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরিশাল ও খুলনায় দমকা হাওয়াসহ ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। স্থবির হয় পড়েছে জনজীবন। বরিশাল প্রতিনিধি জানান, বরিশালে সকাল থেকে ভারী বর্ষণ ও দমকা হাওয়া শুরু হয়েছে। শুক্রবার দুপুর নাগাদ নগরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। নগরের সদর রোড, নবগ্রাম রোড, নিউ সার্কুলার রোড পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষের চলাচল থমকে গেছে।ঝড়টি ক্রমশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ায় বরিশাল থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের বরিশালের বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক ভুঁইয়া বলেন, সকাল ১০টার দিকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পায়রা সমুদ্রবন্দর ৭ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। তবে বরিশাল নদীবন্দরে ৩ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এদিকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের নদীবন্দরে এসে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
ওদিকে খুলনা প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে খুলনায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুক্রবার সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে শীতকালীন কৃষিতে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ায় খুলনায় শীত বেড়েছে। গভীর সমুদ্রে যাওয়া মাছ ধরার ট্রলারগুলো উপকূলে অবস্থান করছে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, খুলনা জেলার উপকূলীয় চারটি উপজেলা দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা ঝুঁকিপূর্ণ। এ উপজেলাগুলোতে সাইক্লোন সেন্টার আছে ৪৩৩টি। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় এই সাইক্লোন সেন্টারগুলোকে আমরা প্রস্তুত রেখেছি।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে খুলনা মহানগরীসহ উপকূল এলাকায় মাঝারী আকারের বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি শুরু হয়। বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত খুলনায় ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি বিকেলের মধ্যে উপকূল অতিক্রম করবে। এখন জলোচ্ছ্বাস না থাকলেও জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি খুলনার উপকূল, বরিশাল ও চট্টগ্রাম অতিক্রম করবে।এদিকে পিরোজপুরে ভোর থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। জেলার কচা, বলেশ্বর, কালীগঙ্গাসহ বৃহৎ নদ-নদীগুলোতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ। তবে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে তেমন যেতে দেখা যাচ্ছে না উপকূলসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষকে।