মাসুদুজ্জামান লিটন, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি: : শৈলকুপার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অতি পরিচিত মুখ, একজন দক্ষ সামাজিক – সাংস্কৃতিক সংগঠক,উপস্থাপক, আবৃত্তিকার,নাট্যশিল্পী, লেখক, সাংবাদিক ইত্যাদি বহু প্রতিভার অধিকারী জনাব আলমগীর অরণ্য এর শুভ জন্মদিন আজ ২ জুন। শুভ জন্মদিনে বি এস ডি ক্লাব এন্ড পাঠাগার ও বালিয়াডাঙ্গা গ্রাম উন্নয়ন সংঘ এর পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা, শুভ কামনা ও অভিনন্দন।
জনাব আলমগীর অরণ্য ১৯৮০ সালের এই দিনে শৈলকুপা পৌরসভার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুলনা বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন এবং ব্রহ্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি, ১৯৯৮ সালে শৈলকুপা সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
তিনি খুলনা বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকেই সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে থাকা অবস্থায় শৈলকুপার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। শৈলকুপা সরকারি ডিগ্রি কলেজ এর ছাত্র সংসদ কর্তৃক আয়োজিত বনলতা সেন সাহিত্য আসর অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তিনি প্রথম হন। তারপর থেকেই তিনি কবিতা আবৃত্তিতে উৎসাহিত হয়ে ওঠেন। শৈলকুপা উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে তিনি উপজেলার শ্রেষ্ঠ আবৃত্তিকার হিসেবে নির্বাচিত হন। এছাড়া জেলা পর্যায়ে কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় তিনি বিভিন্ন পুরষ্কার লাভ করেন।
জনাব আলমগীর অরণ্য শৈলকুপার বিভিন্ন সামাজিক – সাংস্কৃতিক সংগঠন – বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী,ফোকাস, আলোক,বন্ধন রক্তদান কেন্দ্র, শৈলকুপা শিল্পকলা একাডেমি, শৈলকুপা শিশু একাডেমি, শৈলকুপা পাবলিক হল ও লাইব্রেরি, প্রেস ক্লাব ইত্যাদি সংগঠনের বিভিন্ন সম্মানজনক পদ অলংকৃত করে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনবার বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, শৈলকুপা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা সংসদের সহ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শৈলকুপা শাখার সহ সভাপতি ও ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় পরিষদ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য ও ডেমরা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক।
তিনি শৈলকুপা উদীচীর ব্যানারে একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবসে একুশের সকাল নামক অনুষ্ঠানটি শৈলকুপায় প্রথম শুরু করেন। যা আজও চলমান রয়েছে।
২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি শৈলকুপা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এর আগে তিনি কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে শৈলকুপা পাবলিক হল ও লাইব্রেরির সাথে যুক্ত হন। এরপর দুইবার নির্বাহী সদস্য ও ২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। বর্তমানে সহ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০০৪ সালে তিনি বন্ধন রক্তদান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আজও মানবসেবায় লাল ভালবাসা উপহার দিয়ে যাচ্ছেন।
সাংবাদিক হিসেবেও তার একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকায় শৈলকুপার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শৈলকুপা প্রেস ক্লাবের অর্থ ও দপ্তর সম্পাদক এবং ২০১৪-১৫ তে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি বিপ্লবী নেত্রীর পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষায় ইলা মিত্র স্মৃতি রক্ষা আন্দোলনেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন।
একসময়ে শৈলকুপার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ভিন্নমাত্রার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ফোকাস তাঁর নিজ হাতে গড়া একটি সংগঠন। ফোকাস থেকেই তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা শুরু করেন এবং শৈলকুপায় ফোকাস ভাই নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তিনি অভিনয়েও বেশ পারদর্শী ছিলেন। বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রে ” বাবুগো সিদুরের দাম অনেক ” নামে একটি যাত্রাপালায় অভিনয় করেছেন। এছাড়া শৈলকুপা শিল্পকলা একাডেমিতে কয়েকটি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন।
শৈলকুপার সামাজিক – সাংস্কৃতিক উন্নয়নে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি শৈলকুপায় বিভিন্ন সামাজিক – সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্ব পালনকালে শহিদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস,বিজয় দিবস, নববর্ষ ইত্যাদি জাতীয় দিবস ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়মিত আয়োজন করতেন। শৈলকুপায় বর্তমানে সেই সাংস্কৃতিক পরিবেশ নেই, সাংস্কৃতিক আয়োজন নেই। নেই আগের মতো কোনো বিনোদন ব্যবস্থা।
জনাব আলমগীর অরণ্য বর্তমানে ঢাকার একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পুথিনিলয় এর সৃজনশীল বিভাগে কর্মরত আছেন। শুভ জন্মদিনে বি এস ডি ক্লাব এন্ড পাঠাগার ও বালিয়াডাঙ্গা গ্রাম উন্নয়ন সংঘ এর পক্ষ থেকে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও সার্বিক কল্যাণ কামনা করি।