নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রাপ্তবয়স্ককে করোনার বুস্টার ডোজ নিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই ধন্ধে পড়ে যাচ্ছেন—কোন টিকাটি নিলে তারা বেশি সুরক্ষিত থাকবেন।
মার্কিন পত্রিকা বিজনেস ইনসাইডার বলছে, মহামারি নিয়ন্ত্রণে এ যাবত অনুমোদন দেওয়া তিনটি টিকার যে কোনো একটি নেওয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক হবে। যে টিকা দিয়ে আপনি নিজের রোগ নিয়ন্ত্রণ জোরাল করতে চান, সেটি নেওয়াই ভালো হবে।
অনুমোদন পাওয়া তিনটি টিকাই নিরাপদ ও কার্যকর। এসব টিকায় একটির সঙ্গে অন্যটির সামান্য পার্থক্য আছে বটে।
বুস্টারের টিকা বাছাইয়ে এই ফারাকটুকুই অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে—তাদের অনেকেই এমআরএনএ বুস্টারকে বেশি পছন্দ করছেন। আরও জোর দিয়ে বললে—তারা মডার্নার বুস্টার ডোজ নিতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
তবে পার্থক্যই যা-ই থাক না কেন; তাতে রোগ থেকে মানুষকে সুরক্ষায় তেমন বেশি হেরফের হবে না।
মডার্নার ডোজে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে কিছুটা বেশি শক্তিশালী করছে। এতে বাকি দুটো টিকার চেয়ে খানিকটা বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবডির উপস্থিতি রয়েছে।
তার মানে এই নয় যে, মডার্নায় দীর্ঘমেয়াদে নাটকীয়ভাবেই ভালো টিকা থাকছে। বরং তাৎক্ষণিক মেয়াদে ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক ওষুধ কোম্পানিটির টিকায় অতিরিক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা আছে। যাতে ফাইজারের চেয়ে তারা কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকছে।
জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক টিকা প্রবেশ কেন্দ্রের পরিচালক ডা. উইলিয়াম মোস বলেন, সত্যি করে বললে, দুটোর মধ্যে বড় ধরনের কোনো ব্যবধান আছে কি না, তা আমার জানা নেই। একটি এমআরএনএ টিকার চেয়ে অন্যটিকে গুরুত্ব দেওয়ার মতো যথেষ্ট জোরালো যুক্তি নেই বলেও দাবি করেন এই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, সবমিলিয়ে আমি বলব, যেটা আপনার জন্য সুবধাজনক হয়; সেটিই নেবেন।
দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর অন্তত ছয় মাস পরে বুস্টার ডোজ নিতে সব প্রাপ্তবয়স্ককে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে যারা জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নিয়েছেন, তাদের জন্য ভিন্ন উপদেশ: টিকা নেওয়ার দুমাস পর যেকোনো সময় যেকোনো একটি এমআরএনএ টিকা দিয়ে তাদের বুস্টার নিতে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য-উপাত্ত বলছে, যারা মডার্না কিংবা ফাইজারের টিকা নিয়েছেন, বুস্টার নেওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের এ দুটিকে বাছাই করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে যারা জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নিয়েছেন, তাদের বুস্টারের জন্য মডার্নাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
জনসনের টিকা নিলে ভিন্নধর্মীয় বুস্টিং কৌশল থেকে সুবিধা নেওয়া সম্ভব। অন্য কোম্পানির টিকা নেওয়ার অর্থ হচ্ছে, তাদেরকে একটি এমআরএনএ টিকা গ্রহণ করতে হচ্ছে। অ্যাডেনোভাইরাসে টিকার (জনসন অ্যান্ড জনসন) জন্য ফাইজার ও মডার্নাকেই এগিয়ে রাখা হচ্ছে।
মডার্নার টিকা বেশি শক্তিশালী, পাশাপাশি এটির তীব্রতাও বেশি। ফাইজারের চেয়ে টিকাটির প্রতিক্রিয়াও প্রবল হয়। যারা বুস্টারের জন্য মডার্নাকে বেছে নেবেন, তাদের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা মাথায় রাখতে হবে।
দুটি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে লোকজনের অভিযোগ—ইনজেকশন দেওয়ার স্থানে কিছুটা ব্যথা ছাড়া মাথাব্যথা, ক্লান্তি ও পেশিতে ব্যথার কথাও বলা হচ্ছে। কিন্তু বুস্টার ডোজে যারা ব্রান্ড পরিবর্তন করেনি, তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকটা দ্বিতীয় ডোজের মতোই।
আসছে মাসগুলোতে আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে—আসলে বুস্টার ডোজের জন্য কোন টিকাটি বেশি ভালো। কিন্তু সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব নিয়ে বেশি মাথা ঘামানোর দরকার নেই। লোকজন বুস্টারে যে কোনো একটি ব্রান্ডের টিকা নিতে পারেন। কারণ জনসনের একটি কিংবা ফাইজার-মডার্নার দুটি টিকার চেয়ে যে কোনো একটি বুস্টার ডোজ মানুষকে বেশি সুরক্ষা দিতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসি বলেন, এখন এ নিয়ে জটিলতা পাকানো ঠিক হবে না। বুস্টারের ডোজের প্রভাবে লোকজন মহামারি সংক্রমণ থেকে অনেক বেশি সুরক্ষিত থাকবেন।
কাজেই ওমিক্রন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কথা মাথায় রেখে লোকজনের নিজের পছন্দমতো বুস্টার ডোজ নিতে হবে। আর তাতেই বেশি সুরক্ষিত থাকা যাবে।