বরগুনার তালতলী উপজেলার চরপাড়া গ্রামের বঙ্গবন্ধুভক্ত ইছাহাক আলী শরীফ। স্থানীয়দের কাছে যিনি ‘মুজিব পাগল’ নামে পরিচিত। পেশায় দিনমজুর সহজ-সরল ইছাহাক আলী শরীফ (৯২) বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তার জীবনযাপনও অত্যন্ত সাদামাটা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তিনি প্রায় বাকরুদ্ধ। সপরিবারে জাতির পিতার এই নির্মম হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে পারেননি তিনি।
পঁচাত্তরের সেই শোক বুকে ধারণ করে দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে খালি পায়ে এবং কালো পোশাক পরে চলাফেরা করছেন।
জরাজীর্ণ একটি কুঁড়েঘরে বসে চোখের পানি মুছতে মুছতে ইছাহাক আলী শরীফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন কইর্যা যে মাটিতে ঘুমাইয়া আছে, আমি সেই মাটিতে জুতা পায়ে হাঁটতে পারি না।’
চরপারা গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছোবাহান গাজী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার খবরটি যখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন থেকেই প্রতিবাদ স্বরূপ ইছাহাক আলী শরীফ কালো লুঙ্গি, গায়ে কালো জামা এবং খালি পায়ে হাঁটা শুরু করেন। শুধু বাড়িতেই নয়, হাটবাজারসহ কোথাও অতিথি হয়ে গেলেও তিনি একই পোশাক পরে থাকেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইছাহাক আলী বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগকে এতটাই ভালো বাসেন, তার সামনে কেউ আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার সমালোচনা করতে পারেন না। কেউ কোনো খারাপ মন্তব্য করলে উত্তেজিত হয়ে এর প্রতিবাদ করেন। এরকম প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি তিন-চারবার হামলারও শিকার হয়েছেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষতায় আসার পর ইছাহাক আলী শরীফ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের জন্য নানা রকম অত্যাচার-নিপীড়ন সহ্য করেছেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতা আক্কাচ মৃধা, বাদশা মৃধা ও হেলাল আকন তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছিলেন। তারপরও তাকে কেউ মুজিব আদর্শ এবং জয় বাংলা থেকে সরাতে পারেনি।
তবে ‘মুজিব পাগলা’ ইছাহাক আলী শরীফ এত অভাব-অনটনের মধ্যেও কিছুর জন্য কোনো আওয়ামী লীগ নেতার কাছে ধরনা দেননি বা হাত পাতেননি।
ইছাহাক আলী শরীফ বলেন, ‘এহোনগো নেতাগো ধারে মোর কিছু চাওয়ার নাই। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন করা এই জমিনে তিনি শুয়ে আছেন। আর সেই জমিনে মুই কোনো দিনই জুতা পায়ে হাঁটিনি আর হাঁটবও না। শুধু গ্রামে গ্রামে ঘুরে শেখ সাহেবের নামে দোয়া চাচ্ছি। এহোন সবাই আওয়ামী লীগ করে, আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে। আর মুই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবাসি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ব্যস্ত মানুষ। কখনও তিনি সময় দিলে দেখা করব। কিন্তু তার কাছে মোর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই। তার বাবা দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন। শেখ হাসিনাও তার বাবার মতো মানুষের জন্য কাজ করছেন।’
চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস শরীফ বলেন, ইছাহাক আলী শরীফের চার ছেলে ও চার মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। চার ছেলে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। ছেলেদের কাছেই থাকেন ইছাহাক আলী শরীফ।
তালতলী উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক চরপারা গ্রামের বাসিন্দা রতন কুমার বিশ্বাস বলেন, ইছাহাক আলী শরীফ একজন নির্লোভ মানুষ। অভাব-অনটনের সংসার হলেও তিনি কারও কাছে হাত পাতেন না। শত কষ্টের মধ্যেও তাকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরাতে পারেননি কেউ।
তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছোটবগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ তৌফিকউজ্জামান তনু বলেন, ইছাহাক আলী শরীফ কোনো কিছু দাবি না করলেও চেয়ারম্যান হিসেবে তার পরিবারের দিকে আমি বিশেষভাবে খেয়াল রাখি।