রকিবুল ইসলাম রুবেল, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস রিপা(১৯) নামে এক গৃহবধূকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারধর করেই ক্ষ্যান্ত হননি বেল্ড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেটে দেয়াও হয়েছে। আহত ওই গৃহবধূ বর্তমানে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ঘটনায় রোববার (১৬ মে) দুপুরে আহত ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে তার স্বামীকে প্রধান আসামী করে আরও ৫ জনের নামে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
এর আগে ১৬ মে ভোর রাতে উপজেলার পূর্ব-বিছনদই এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার পূর্ব-বিছনদই এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে ও রিপার স্বামী আল-আমিন এনামুল(২৫), ভাই আকিমুল(৩০) ও তার মা আঞ্জুয়ারা বেগম(৫০)। আহত ওই গৃহবধূ উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর সিন্দুর্না এলাকার জহরুল হকের মেয়ে। জানা গেছে, এক বছর আগে ভালো বেসে বিয়ে করেন রিপা ও এনামূল। প্রথমে এনামূলের পরিবার মেনে না নিলেও পরে ৪ লক্ষ্য টাকা যৌতুকের বিনিময়ে পারিবারিক ভাবে আবারো বিয়ে হয় তাদের। বিয়েতে ২ লক্ষ্য ৫০ হাজার টাকা দেয় হয়। বাকী টাকা পরে দিতে চান রিপার বাবা। এরপর ভালোই চলছিলো তাদের দুজনের সংসার। কিন্ত এনামূল যৌতুকের বাকী টাকার জন্য রিপাকে চাপ দিতে থাকে। আর এতে যোগ দেন রিপার ভাসুর ও শাশুড়ি।
১৬ মে রাত ৩টার দিকে এনামুল বাড়িতে এসে রিপাকে ঘুম থেকে তুলেই টাকার জন্য গালিগালাজ শুরু করেন। বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলেন। এতে রিপা রাজি না হলে শুরু হয় মারধর। এক পর্যায়ে তাতে যোগ দেন ভাসুর ও শাশুড়ি। বাশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়। এতে রিপা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন আর কিছু বলতে পারেন না। পরে ভোরের দিকে জ্ঞান ফিরলে চিৎকার শুরু করেন এবং প্রতিবেশীরা এসে রিপাকে আহত অবস্থায় দেখে বাবার বাড়িতে খবর দেন। পরে তারা দ্রুত সেখানে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। রোববার দুপুরে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, আহত রিপা ব্যাথার যন্ত্রনায় বেডে শুয়ে ছটফট করছে আর কাতরাচ্ছে। তার দু-হাতে অসখ্য কাটা দাগ। এমনকি গলায় দড়ি দিয়ে পেছানোর দাগ। এ সময় রিপার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ওরা অনেক খারাপ। বাকী টাকা ঈদের আগেই আনতে বলছিলো। আমি টাকা আনতে পারিনি। তাই ঈদের দিন আমাকে না খেয়ে রাখে। পরে স্বামী-ভাসুর ও শাশুড়ি মিলে মারধর শুরু করে। এতে আমি জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফিরে দেখি আমার দু হাতে বেøড দিয়ে কেটে দেয়ার দাগ। গলায় ক্ষত বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রিপা। এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত এনামুলের ফোন নম্বরে কল করা হলে সে কলটি রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্রই কলটি কেটে দেন। এরপর কয়েকবার চেষ্টা করেও তাকে আর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক ও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মহসিন আলম বলেন, আহত ওই গৃহবধূকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা দাগ ও গলায় ক্ষত রয়েছে। ওনাকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।