রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়-হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শঙখচিল শালিকের বেশে, বহুবছর পূর্বে কবি জীবনানন্দ দাশ মনের মাধুরি মিশিয়ে কথাগুলো লিখে গিয়েছেন। প্রতিদিন হাজারো শালিকের দেখা মেলে এখানে-ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই অপেক্ষা শুরু হয় হাজারো ‘গাঙ শালিকের’। ব্যস্ততম রাস্তার পাশে, টিনের চালে দলে দলে আসতে শুরু করে। তাদের কিচির মিচির শব্দে ক্ষণিকের জন্য চারপাশে ভিন্ন রকমের আবহ তৈরি হয়। এক সময় অপেক্ষার অবসান হয় জয়ন্ত ঘোষ আসলে। রোজ সকালে এই পাখিদের জন্য খাবার নিয়ে হাজির হন তিনি।
শুনতে অবাক লাগলেও দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এমনই ঘটে আসছে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাজারে। জয়ন্ত ঘোষ এই পাখিদের বন্ধু। পেশায় তিনি হোটেল মালিক। এমন বাস্তবতা দেখলে যে কেউ বিস্মিত হবেন। জয়ন্ত পাখিদের খেতে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ গাছ ও গাছ, এ ছাদ-ও ছাদ থেকে হাজার হাজার পাখি চলে আসে উড়ে। এমনই ভিন্ন রকমের ভালোবাসা দেখে পথিকও দাঁড়িয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য।
সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই পাখিগুলোর অপেক্ষা কখন আসবে তাদের বন্ধু। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জে অবস্থিত ঘোষ সুইটস এর মালিক মিলন ঘোষের ছেলে জয়ন্ত ঘোষ এসেই শুরু করেন খাবার দিতে। যেখানে একটি কাক-পক্ষিও ছিল না হঠাৎ করে নেমে আসতে শুরু করে হাজারো পাখি। কিচির মিচির শব্দে প্রতিযোগিতা শুরু হয় খাবার খাওয়ার। এ ঘটনা চলতে থাকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী। হাজারো ‘গাঙ শালিক’ এক সঙ্গে নেমে পড়ে। রাতে হোটেলের বেঁচে যাওয়া রুটি, পরোটা ছিঁড়ে ছিটিয়ে দিলেই চলে খাবার খাওয়ার এ মহোৎসব। সাধারণ মানুষও চলতি পথে এমন দৃশ্য দেখে না থেমে পারেন না। তারাও উপভোগ করতে থাকেন এ বিরল দৃশ্য একপলক দেখার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোথায় যেন হারিয়ে যায় গাঙ শালিকের দল।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রভাষক মৃত্যুঞ্জয় জানান, এমন দৃশ্য আমরা খুব কমই দেখতে পাই। পাখির প্রতি মানুষের এমন বিরল ভালোবাসা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। অত্যন্ত ব্যস্ততম এ বাজারে মানুষের কোলাহলের সঙ্গে পাখির এমন বন্ধুত্ব সবাইকে অবাক করে। এ ঘটনা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে দেখে আসছি। আমরা অবাক হয়ে যাই, পাখির প্রতি মানুষের এমন বিরল ভালোবাসা দেখে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওরা কোথায় যে হারিয়ে যায় তা আজও জানা যায়নি। তবে ভোর হলেই চলে এমন মিলন মেলা।
শৈলকুপা গাড়াগঞ্জ বাজারের ঘোষ সুইটসের স্বত্বাধিকারী জয়ন্ত ঘোষ জানান, আমার বাবা-চাচারা ২০ বছরের ওপর এ পাখির খেদমত করে আসছে। এখন আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। একসময় পাখি কম আসলেও এখন দিনের পর দিন পাখির সংখ্যা বাড়ছে। হাজারো পাখির মিলন মেলা দেখতে ভালোই লাগে।