মাসুদুজ্জামান লিটন, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি : ঝিনাইদহে চাষের প্রারম্ভে পেঁয়াজ বীজ নিয়ে কৃষকেরা নানা সংকটে পড়লেও এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন ও উর্দ্বগতি মুল্যে কৃষকের চোখে মুখে হাঁসির ঝিলিক। মাঠ থেকে পেঁয়াজ বাড়িতে এনে কাটা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা সহ বাজারজাত ও ঘরে রাখার ধুম পড়েছে। যেন হাঁসছে পেঁয়াজ, বাজারদরও যাচ্ছে ভাল তাই হাঁসি ফুটেছে কৃষকের মুখেও। প্রতি মন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪’শত থেকে ১৫’শত টাকা দরে। প্রতি ১ বিঘা জমি থেকে কৃষকেরা কমপক্ষে ১শ ২০মন করে পেঁয়াজ ঘরে তুলছে। কৃষি সম্প্রসারণ অদিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহে এবার পেঁয়াজ চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে, তবে চাষ হয়েছে লক্ষমাত্রার চেয়েও বেশী। ১০ হাজার ৪’শ ৭২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার ভেতরে শৈলকুপা উপজেলায় সবচেয়ে বেশী পেঁয়াজ চাষ হয়। এই উপজেলার মাঠের পর মাঠ শুধুই পেঁয়াজ। জেলার ৯ হাজার ৫০ হেক্টর জমির পেঁয়াজের মধ্যে এখানেই চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৮’শ ৯০ হেক্টর জমিতে। দেশের পেঁয়াজের চাহিদার বড় একটি অংশের যোগান হয় শৈলকুপাতে। এখন চলছে পেঁয়াজ উত্তোলনের মৌসুম। শৈলকুপাতে সাপ্তাহিক শনি ও মঙ্গলবার দুটি হাট বসে পেঁয়াজের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার ও ব্যাপারীরা একদিন আগেই চলে আসে শৈলকুপাতে, তারা ট্রাকে ভর্তি করে পেঁয়াজ নেয় দেশের অন্যান্য বড় বড় হাট-বাজারে। ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার পেঁয়াজ ঢাকার কারওয়ান বাজার, ভৈরব, সিলেট, চট্রগাম, খুলনা, বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। সরেজমিনে শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের ছড়াছড়ি, হয়েছে বাম্পার ফলন। পৌরসভার হাসনাভিটা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পেঁয়াজ,ক্ষেতেও রয়েছে। কৃষকেরা বাড়িতে এনে স্তুপ করে রাখছেন বিক্রির আশায়। তবে পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বেশীর ভাগ পেঁয়াজ তুলেই বিক্রি করতে বাধ্য হন উপজেলার কৃষকরা। শৈলকুপা কৃষি অফিস জানিয়েছে, উপজেলায় চাষযোগ্য মোট জমি আছে ২৮ হাজার ৫শ হেক্টর। তারমধ্যে এ বছর পেঁয়াজের চাষ হয়েছে ৭হাজার ৮শ ৯০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে শুধু পাইকপাড়া গ্রামে চাষ হয়েছে ৩৫০ হেক্টর জমিতে। বারি-১, লাল তীর, লাল তীর কিংসহ বেশ কয়েকটি জাতের পেঁয়াজ বেশি চাষ হচ্ছে। এবছর অনেক কৃষক সুখসাগর জাতও চাষ করেছেন। হাসনাভিটা গ্রামের কৃষক আলিমুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বাইরে মেয়েরা পেঁয়াজ থেকে গাছ কেটে আলাদা করছেন। বাড়ির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পেঁয়াজ। ঘর-বারান্দা কোথাও একটু খালি জায়গা নেই। শোবার ঘরের খাটের নিচেও পেঁয়াজ। তিনি আরো জানান, এবছর ৮ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন । এসব জমিতে হাইব্রীড লাল তীর কিং জাত রয়েছে। যার মধ্যে অর্ধেক জমির পেঁয়াজ বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। এখনও মাঠে পেঁয়াজ রয়েছে। প্রতি বিঘায় সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। একবিঘায় (৪০ শতাংশ) ১’শ ২০ মণ করে পেঁয়াজ পাচ্ছেন। যা বর্তমান বাজার প্রতি মণ ১৪’শত টাকা দরে বিক্রি করছেন। ১ বিঘাতে ঘরে আসবে কমপক্ষে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। শৈলকুপার চর সোন্দহ গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, তিনিও তার জমিতে এবার পেঁয়াজ চাষ করেছেন। ক্ষেত থেকে ৬’শ মণ পেঁয়াজ পাবেন বলে আশা করছেন। আমিরুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে এ উপজেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। যে কারণে কৃষকরা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন না। তাই অনেক সময় সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। কৃষকেরা জানান, এ মৌসুমে পেঁয়াজ চাষের শুরুতে বীজ নিয়ে তারা সংকটে পড়ে। বেশীরভাজ বীজে ভাল অঙ্কুরোদগম হয়নি, চারা গজায়নি, ফলে বাড়তি বীজ লাগে। কেউ কেউ ডবল করে বীজতলায় বীজ ফেলতে বাধ্য হয়। অসাধু ব্যবসায়ী ও বীজ ডিলাররা সুযোগ বুঝে বাড়িয়ে দেয় দামও । শৈলকুপার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রেজাউল বিশ্বাস জানান, দেশের চাহিদার বড় একটি অংশের যোগান শৈলকুপা থেকে হয়ে থাকে। উপজেলার পাইকপাড়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কোরবান আলী জানান, এ ব্লকে ৪’শ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এখানে ১,৫৬০টি কৃষি পরিবার রয়েছে। কম-বেশি প্রায় সব পরিবারে জমিতে রয়েছে পেঁয়াজ । চাষটি ক্রমেই বাড়ছে বলে তিনি জানান। শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, এ উপজেলায় ক্রমেই পেঁয়াজের চাষ বাড়ছে। গত ১০ বছর ধরে এ চাষ বেড়েই চলেছে। এবার উপজেলায় পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। তবে পেঁয়াজের বাজার দর আরো একটু বৃদ্ধি পেলে চাষীরা আরো খুশী হবে। এখানে একটি কোল্ড স্টোর জরুরী বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহের উপ-পরিচালক মো: আজগর আলী জানান, অনূকূল আবহাওয়া থাকায় এবার ঝিনাইদহে লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে, ফলনও বাম্পার হয়েছে।