রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ‘আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলী দলি, সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে, হাপুস হুপুস শব্দ, চারিদিক নিস্তব্ধ, পিঁপড়া কাঁদিয়া যায় পাতে।’ রবীন্দ্রনাথের প্রথম দিকের রচনায় ওঠে এসেছে সেকালের উপাদেয় খাবারের তালিকায় আমসত্ত্বের নাম। আবহমান কাল ধরেই বাংলার ঘরে ঘরে মুখরোচক খাদ্যের তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে ছিল আম। একই সঙ্গে আমের আচার, আমসত্ত্ব, আমতেল, আমচুরও ছিল সমান জনপ্রিয়। আগে প্রতিটি বাড়িতেই লোভনীয় এসব খাদ্যসামগ্রী পাওয়া যেত। কালের বিবর্তনে গ্রামীণ ঐতিহ্যের এসব খাবার তৈরি অনেকটা কমে এলেও আমের মৌসুমে এখনো অনেক বাড়িতেই তৈরি করা হয় এসব খাদ্যসামগ্রী।
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠোন বা ঘরের চালে দেখা মিলছে আমসত্ত্বের । উপজেলার সব গ্রামেই পর্যাপ্ত পরিমাণে আমের ফলন হওয়ায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আমসত্ত্ব দেওয়ার ধুম পড়েছে। মা-চাচি-দাদিরা যত্ন করে তৈরি করছেন এসব খাবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শৈলকুপা উপজেলার বাড়িতে বাড়িতে এখন ডালা-কুলা, স্টিলের থালা এমনকি খেজুরের পাটিতে প্রতিটি বাড়িতেই আমসত্ত্ব দেওয়ার ধুম পড়েছে। আমসত্ত্ব দিয়ে রোদে শুকাতে দিয়েছেন বাড়ির আঙ্গিনায় বা চালে।
কথা হয় শৈলকুপা উপজেলার রঘুনন্দনপুর গ্রামের বৃদ্ধা যমুনা দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, সারাবছর আম পাওয়া যায় না। এবার প্রচুর আম হইছে। তাই বেশি করে বানিয়ে রাখছি। সারাবছর খাওয়া যাবে। দুধের সঙ্গে আমসত্ত্ব দিয়ে ভাত দিয়ে খেতে খুব মজা। বাচ্চারাও আমসত্ত্ব খেতে খুব ভালোবাসে।
আমসত্ত্ব তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, মাত্র ৭ থেকে ৮ দিন রোদে দিলেই হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে আমসত্ত্ব উল্টিয়ে দিতে হয়। যাতে দু’পাশেই রোদ লেগে শুকিয়ে যায়। এরপর নিজের ইচ্ছেমতো কেটে কেটে সংরক্ষণ করতে হবে।
আমসত্ত্ব খাওয়ার বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন বলেন, আমসত্ত্ব সর্দি কাশি দূর করতে সাহায্য করে। শিশুদের স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। গর্ভবতী মায়েদের ক্যালসিয়াম সমস্যা দূর করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। হজমের সমস্যা দূর করে, হজমশক্তি বাড়ায়। এতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক সুরক্ষায় সাহায্য করে।
তিনি আরও বলেন, আমসত্ত্ব প্রচুর ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই রয়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস এবং হৃদরোগে আমসত্ত্ব ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। আমসত্ত্ব সাইট্রিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পেকটিন ও ভিটামিন সি থাকে যা কোলেস্টেরল লেভেলের ভারসাম্য রক্ষা করে। ১০০ গ্রাম আমসত্ত্বে প্রায় ১৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে এবং ১৯৯০ মাইক্রোগ্রাম বিটাক্যারোটিন থাকে।