এনএসবি ডেস্ক:বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দেয়া ভারতের বক্তব্য কূটনীতির কড়া বার্তা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। ভারতের এ বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে মার্কিনদের নাক না গলানোর বার্তা স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ড.ওয়ালিউর রহমান।শুক্রবার (১০ নভেম্বর) নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টু প্লাস টু (২+২) বৈঠকে ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু, দেশটির ভবিষ্যৎ ঠিক করবে তাদের জনগণই। বিশ্লেষকদের আশা, সমৃদ্ধি বজায় রাখতে বাংলাদেশকে বরাবরের মতোই সমর্থন করবে পার্শ্ববর্তী ভারত।দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গত কয়েকমাস ধরে অতি আগ্রহ দেখাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ বছর প্রায় ১৫ বার মার্কিন প্রতিনিধিরা সফর করেছেন বাংলাদেশে। নির্বাচন সামনে রেখে পুরনো ভিসানীতি নতুন করে ঘোষণা করেছে দেশটি। আর ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বরাবরই বক্তব্য দিয়ে আসছেন নির্বাচন নিয়ে।এরই মধ্যে শুক্রবার ভারত সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। এর আগেই দিল্লিতে উড়াল দেন পিটার হাস। প্রত্যাশিত ছিল মার্কিন মন্ত্রীদের সঙ্গে ভারতের মন্ত্রীদের বৈঠকে উঠে আসবে এদেশের নির্বাচন ইস্যু।ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন মন্ত্রীদের বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা।
তিনি জানান, ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের নেতারা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
বিনয় কোয়াত্রা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন কেমন হবে, নির্বাচন কেমন হবে, তা সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের জনগণই তা ঠিক করবেন। বাংলাদেশকে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল করে তুলতে সে দেশের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভারত বরাবর সমর্থন করে আসছে। সেই সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব আরও বলেন, বৈঠকের বর্ধিত আলোচনায় আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যু দক্ষিণ এশিয়া এবং অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। তৃতীয় কোনো দেশের বিষয়ে ভারত কখনোই মাথা ঘামাই না। আমি মনে করি, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন কেমন হবে, নির্বাচন কেমন হবে, তা সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের জনগণই তা ঠিক করবেন। তারাই তাদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন। বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভারত। সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি ভারত শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশকে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী করে তুলতে সে দেশের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভারত বরাবর সমর্থন করে আসছে। সেই সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
বিশ্লেষক ড.ওয়ালিউর রহমামনের মতে, ভারতের ব্ক্তব্য কূটনৈতিক ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া বার্তা। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রগতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখতে মার্কিনদের নির্বাচনে মাথা না ঘামানোর বার্তা স্পষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারত বলেছে যে; বাংলাদেশে যে নির্বাচন হবে সেখানে কেউ কথা বলুক আমরা তা চাই না, এই বার্তাটাই তারা দিয়েছে। বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে এই কথাটাই ভারত বোঝাতে চেয়েছে যে, আপনারাও (যুক্তরাষ্ট্র) নাগ গলাতে আসবেন না। গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচন হোক, নির্বাচনের পরে যদি আপনাদের কিছু বলার থাকে; তখন বলতে পারেন। আমরা চাইব না, নির্বাচনের যে গতিটা সেখানে আছে সেখানে যেন কোনো বাধা না আসে।
উপমহাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রের কাছ থেকে এমন বার্তা নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের তোড়জোড় কিছুটা কমবে বলেও মনে করেন তিনি।
প্রসঙ্গত: ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে (২+২) আলোচনায় প্রত্যাশিতভাবে উঠে এসেছে নির্বাচনমুখী বাংলাদেশের প্রসঙ্গ। বৈঠকে ঘনিষ্ঠতম প্রতিবেশী বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের চিন্তাভাবনার কথা আরেকবার যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেয়া হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে ওই বৈঠকে অংশ নেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।