রেজাউল হক, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার সালামাবাদ ইউনিয়নের বাকা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মোল্যা জহুরুল হকের দ্বিতীয় পুত্র মনিরুল ইসলাম ছিলেন পরীমনির বাবা।
পরীমনির বাবার ডাক নাম ছিল মনি।পরীমনির বাবা প্রথমে নড়াইলের লোহাগড়ায় বিয়ে করার পর স্ত্রী বিয়োগ হন।
এরপর পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর সীমান্তের ( সিংহখালী গ্রাম সংলগ্ন ) ভগিরথপুর বাজারে পুলিশ ফাঁড়িতে কনেস্টবল হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন স্মৃতির (পরীমনি) বাবা সুদর্শন মনিরুল ইসলাম পুলিশ ফাঁড়ির অদূরে সিংহখালী গ্রামের সামছুল হক গাজীর বড় মেয়ে সালমা সুলতানা কে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন।
পরী মনির নানা সামছুল হক গাজী ভগিরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরীমনির জন্ম ১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বাকা গ্রামে। জন্মনাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। ছোট্ট স্মৃতিকে নিয়ে বাবা মনিরুল ইসলাম ও মা সালমা সুলতানার ছিল সুখের সংসার। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন সয়নি পরীর কপালে।
১৯৯৭ সালে কালিয়া পৌর শহরের পাইলট স্কুলের বিপরীতে ‘ক্যাফে ঝিল’ নামক একটি কফি শপের ব্যবসা পরিচালনা করেন মনিরুল ইসলাম। এ সময়ে পৌর শহরের চাঁদপুর গ্রামের সাবেক ৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম শেখের ভাড়া বাড়ীতে থাকাকালীন এক সন্ধ্যায় রান্না করার সময় আগুনে দগ্ধ হন পরীমনির মা সালমা সুলতানা। মুমূর্ষু অবস্থায় সালমা সুলতানাকে নিয়ে পরীর নানা সামছুল হক গাজী পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে কিছুদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তখন পরীমনির বয়স ছিল ৩ বছরের।
জানা গেছে, আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে পরীমনির বাবা মনিরুল ইসলাম বাংলাদেশ পুলিশে সদস্য পদে চাকরি করতেন। কিন্তু শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে চাকরিচ্যুত হন তিনি।
এরপর সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখান থেকে ৫/৬ বছর পর দেশে ফিরে জড়িয়ে পড়েন রিকন্ডিশন গাড়ির ব্যবসায় ও জমি বেচা কেনায়। শৈশবে মাতৃহারা পরীমনি প্রায়ই পিরোজপুরে তার নানা বাড়ি গিয়ে থাকতেন। সেখানে নানা শামসুল হক গাজীর তত্ত্বাবধানে শৈশব ও কৈশোরবেলা কাটে অভিনেত্রীর। নানাবাড়িতে থেকেই পরীমনি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তবে পরিমনি বরাবর ই ছিলেন খুব মেধাবী।
২০১১ সালে পরীমনিকে নিয়ে তার বাবা সাভারে ভাড়া বাসায় থাকতেন। এ সময় পরীমনি সাভার কলেজেও ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু জমি কেনা-বেচার জের ধরে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার মাদবপুর থানায় সড়কের পাশে তার বাবার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।
মাদবপুর থানা পুলিশ বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে দাফন করেন। পরে সংরক্ষিত কাপড়সহ অন্যান্য ব্যবহৃত জিনিস দেখে লাশ শনাক্ত করেন। এরপর ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সে লাশ কবর থেকে তুলে নিজের গ্রামের বাড়িতে আনেন পরীমনি ও তাঁর স্বজনরা। এরপর থেকে পরীমনি একা হয়ে পড়েন।
সাভারে তার এক খালার বাসায় থাকতেন। এ সময় উক্ত মডেল পরীমনিকে মিডিয়ায় কাজ করার সুযোগ করে দেন। একবুক স্বপ্ন নিয়ে বিনোদন জগতে পা রাখলেন এই রুপসী পরীর মত সুন্দরী তরুণী নড়াইল কণ্যা শামসুন্নাহার স্মৃতি।
এরপর নিজে নিজে ধারণ করেন নানীর আদর করে ডাকা নাম ‘পরী’ আর বাবার ডাক নামের ‘মনি’ উভয় নামের সমন্বয়ে হয়ে যান পরীমনি
কালিয়া থানার বাকা গ্রামে পরীমনির বাবার বিশাল সীমানার ফুল ও ফলজ ঘেরা মোল্যা বাড়ির পৈত্রিক ভিটায় গিয়ে দেখা যায় মনিরুল ইসলামের হাতে গড়া অসম্পূর্ণ সিমসাম একতলা বাড়িতে তার দাদা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মোল্যা জহুরুল ইসলাম ও দাদী রয়েছেন। বাড়ির সীমানার অন্য প্রান্তে চাচারা বসবাস করেন।এলাকাবাসী জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর পৈত্রিক বাড়িতে বেড়াতে না এলেও পরীমনি মুঠোফোনে বৃদ্ধ দাদা-দাদী ও চাচা-চাচীদের খোঁজ নিতেন।
তথ্যবহুল লেখা,যা অন্য কোন মিডিয়ায় আসেনি।