রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় খুনোখুনি ক্যাইজা আর হানাহানিতে বিভিন্ন সময় ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রের মধ্যে অন্যতম হলো ধারালো রামদা। তবে ছোট্ট এক শিশু এমনই এক অস্ত্র নিয়ে রাস্তা দিয়ে ছুটে যাচ্ছে সামনের দিকে! আবার কেউ দেশীয় এই অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
অথচ শিশুটির হাতে থাকার কথা ছিল বই খাতা কলম। স্যোশাল মিডিয়া ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন ছবিগুলো শৈলকুপার দৃশ্য বলে ফেসবুকে প্রচার চলছে!
শৈলকুপায় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে স্যোশাল মিডিয়া ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে চাঞ্চল্যকর এই ছবি দুটি। একটি শিশু রামদা হাতে সামনে ছুটে চলছে, আরেক শিশু রামদা হাতে দাঁড়িয়ে আছে ।
স্যোশাল মিডিয়ায় অবুঝ শিশুর হাতে অস্ত্রসহ এমন ছবি দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে নানা শ্রেণিপেশার মানুষসহ সাধারণ মানুষ। ছবি দেখে তারা শৈলকুপার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ আর সংশয়-শঙ্কা প্রকাশ করছে, শেয়ার করছে, কমেন্ট করছে। ফেসবুকের হোম বা স্ক্রলের সময় দেখামাত্র ইউজাররা লাইক, কমেন্ট করছে যা ভাইরাল হয়ে পড়েছে।
সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে ছবি দুটি, অনেকে রিল বানাচ্ছে, স্টোরিতে রাখছে আবার অনেকে ট্রল করছে! ঘৃণা প্রকাশ করছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের সম্ভাবনা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছে। ছবিটি ব্যাপকভাবে শেয়ার চলছে।
শৈলকুপা পাবলিক হল ও লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক স্বপন বাগচী জানান, যদি ক্রিয়েট বা পরিকল্পিতভাবে শিশুর হাতে অস্ত্র তুলে ছবি করে স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয় তবে প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারে না। একইসাথে তিনি বলেন, স্থানীয় সাংবাদিকদের অনেকে দায়িত্বশীল নয়, ফেসববুকে কি লেখা যায় কি লেখা যায় না বা কোনটা দেয়া যায়না, তা সম্পর্কে ধারণা নেই বা তাদের অজ্ঞতায় বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে মন্তব্য করেন, তিনি পুলিশের দায়-দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
শৈলকুপা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন অরণ্য জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শৈলকুপার অনেক ফেসবুক ইউজারদের পোস্টে ছবিটি প্রথম দেখতে পান।
তিনি বলেন, এটা সত্য হলে বুঝতে হবে শৈলকুপায় চরমভাবে সামাজিক অবক্ষয় ঘটে চলেছে, যার প্রমাণ শিশুর হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া। তবে তিনি মনে করেন কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে শিশুর হাতে এভাবে দেশীয় অস্ত্র তুলে দিয়ে ছবি করে ফেসবুকে ছেড়ে দিতে পারে, যা গুরুত্বর অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
শৈলকুপা প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহিন আক্তার পলাশ বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে প্রায় একই রকম ছবি তিনি ফেসবুকে দেখেছেন। তিনি বলেন, অপরাধপ্রবণ এলাকায় কোনো কিছু ঘটলে কোনো কোনো মহল এমন কিছু ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় যা দুঃখজনক। এ সবের প্রতিকার করা উচিত বলে মন্তব্য করেন।
ছবি দেখে অনেকে প্রশ্ন তুলেছে, সত্যিই কি শিশুটি নিজে নিজে অস্ত্র হাতে রাজপথে মুভ করছে? এই অস্ত্র শিশুটি পেল কোথায়, অভিভাবক বা পরিবার কি তার হাতে তুলে দিয়েছে? নাকি তার হাতে ইচ্ছাকৃতভাবে ভয়াবহ এমন অস্ত্র তুলে দিয়ে একটি মহল শৈলকুপার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থতি যে ‘অবনতিশীল’ তা বোঝানো বা দেখানোর অপচেষ্টা চেষ্টা করছে?
অনেকে কমেন্টে বলছেন, যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তি বা মহল এমনটি করে থাকে তবে সাইবার ক্রাইম অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে শৈলকুপা থানা পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে? গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরে আছে কি বিষয়টি? যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা তাদের কোনো পদক্ষেপ বা বক্তব্য না থাকে তবে ঘটনাটি সত্য বলে বিশ্বাস করবে জনগণ। আর শৈলকুপা যে ভয়ঙ্কর এক অপরাধপ্রবণ জনপদ হিসেবে এখনো চিহ্নিত এবং শিশুরা অপরাধী হিসেবে বেড়ে উঠছে। তার সপক্ষে এই শিশুর অস্ত্র ধরা অকাট্য প্রমাণ বহন করতে পারে বলে মনে করছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
শৈলকুপায় দুপুর থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া শিশুর হাতে অস্ত্রসহ ছবি প্রসঙ্গে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, ছবিটি তার নজরে এসেছে, তবে কানো মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটি ছড়িয়েছে বলে জানান। তিনি বিষয়টির খোঁজ খবর করবেন বলেও জানান।
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, স্যোশাল মিডিয়া ফেসবুকে শিশুর হাতে দেশীয় অস্ত্রসহ ছবিটি তার নজরে এসেছে, তবে কে কোথা থেকে ছেড়েছে তার বিস্তারিত জানতে পারেননি।
তিনি বলেন, এলাকার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেও কোনো মহল এটি করতে পারে। তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পেলে দ্রুত তাকে অবগত করিয়ে যেন সহযোগীতা করা হয়। তিনি বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সাথে কথা বলবেন বলেও জানান।
এমন পরিস্থিতিতে শৈলকুপার সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা শৈলকুপা থানা পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং জেলার সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখবে।