মেডিকেলের প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও পাঁচ চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুলনার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে প্রশ্নফাঁস চক্রের এ পাঁচসোমবার (২১ আগস্ট) সিআইডর পক্ষ থেকে দেয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম (৪০), ডা. লুইস সৌরভ সরকার (৩০), ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া (২৫), ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল (২৬) ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশাকে (২৪)।
তাদের থেকে ছয়টি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে দুপুরে খুলনার বিএমএ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে চার চিকিৎসক ১৮ আগস্টের পর থেকে নিখোঁজ বলে দাবি করেন স্বজনরা। তারা অভিযোগ করেন- সিআইডি পরিচয়ে তল্লাশির নামে বাড়ি তছনছ করে চার চিকিৎসককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আর তাদের হদিস মিলছে না।
এরইমধ্যে বিকেলে সিআইডির পক্ষ থেকে ওই চার চিকিৎসকসহ পাঁচ চিকিৎসককে প্রশ্নফাঁসের মামলায় গ্রেফতার করার তথ্য জানানো হয়।
সিআইডির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডাঃ মোঃ ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরস-এর মালিক। ডাক্তারি পেশা বাদ দিয়ে জড়ান কোচিং ব্যবসায়। প্রতিষ্ঠা করেন থ্রি ডক্টরস কোচিং খুলনা। তিনি নিজেকে ‘ডাক্তার তৈরির কারিগর’ হিসেবে পরিচয় দেন। মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন।
মেডিকেল প্রশ্নফাঁস চক্রের এই সদস্য শত শত শিক্ষার্থীকে এভাবে ভর্তি করিয়ে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার এবং তার স্ত্রীর একাউন্টে প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে। হাসপাতাল, ফ্লাট, জমি, মাছের ঘের, হোটেল শেয়ারসহ গড়েছেন বিপুল সম্পদ। ডা: তারিমের বিরুদ্ধে একাধিক গোয়েন্দ প্রতিবেদনে এর আগেও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে।
গ্রেফতার ডা. লুইস সৌরভ সরকার (৩০) খুলনা মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরস’র শিক্ষক। বর্তমানে একটি বেসরকারি এনজিওতে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত।
ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া (২৫) ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান অর্জন করেন। তিনি খুলনার থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক ডা. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিমের স্পেশাল ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তারিমের ঘনিষ্ঠজন ও কোচিংয়ের তৎকালীন তিন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়ার পরও তিনি চারটি ফাইনাল প্রফেশনাল এক্সামের সব সাবজেক্টেই ফেল করেন।
পরবর্তীতে একাধিকবারের চেষ্টায় পাস করেছেন। লামিয়ার প্রশ্ন পেয়ে চান্স পাওয়ার বিষয়টি খুলনার চিকিৎসক মহলে ওপেন সিক্রেট। লামিয়ার ভর্তি জন্য তার স্বামী শেখ ওসমান গনি ও ডা. তারিমের মাঝে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল (২৬) ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা উভয়েই ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আগে টাকার বিনিময়ে ডা. তারিমের থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কেনেন।
গ্রেফতারদের মিরপুর মডেল থানার মামলা নম্বর- ৪৩, তারিখ- ২০/০৭/২০২০ খ্রি., ধারা: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২২(২)/৩৩(২) তৎসহ পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনের ১৯৮০ এর ৪/১৩) ধারায় আদালতে পাঠানো হয়।
এরআগে, সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন প্রশ্নফাঁস চক্রের মূল উৎপাটনে ও অবৈধ উপায়ে চিকিৎসকের মতো মহান পেশায় ভর্তি হওয়া ডাক্তারদের চিহ্নিত করতে সিআইডির কার্যক্রম চলবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ আগস্ট প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত সাত চিকিৎসকসহ চক্রের ১২ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডির সাইবার টিম। গ্রেফতারদের মধ্যে আটজন দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।