বিশ্বজিৎ সরকার রনি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি — ঠাকুরগাঁও:দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে এবার গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে গমের বিক্রয়মূল্য নিয়ে চিন্তুত এখানকার গম চাষিরা। বর্তমান বাজারে দরে গম বিক্রি করলে তারা লাভের মুখ দেখবেন না।জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এ জেলায় গম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। তবে গম আবাদ হয়েছে ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন হাজার হেক্টর কম জমিতে গম আবাদ হয়েছে।এরই মধ্যে গম কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ঘরে উঠতে শুরু করেছে নতুন গম। এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে ১৪ থেকে ১৬ মণ করে গমের ফলন হয়েছে। ফলন বেশী হওয়ায় চাষীদের মুখে দেখা দিয়েছে প্রাপ্তির হাসি। তবে সে হাসি বিলীন হতে চলেছে গমের বাজারদরে ফলে।কৃষকরা জানিয়েছেন, ন্যায্যমূল্য পেলে উৎপাদিত গম দিয়ে তাদের নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরও বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন তারা। কিন্তু বর্তমান বাজারদরে সেটি মোটেও সম্ভব নয়।কথা হয় মোহাঃ পুর ইউনিয়নের হরিনারায়ন পুর গ্রামের সহিদুল (৪০) ও নাসিরুদ্দিন (৪৫) সঙ্গে। তারা জানান, এ বছর এখানকার চাষীরা কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার পেয়েছে। ফসলে পোকামাকড়ের উপদ্রবও অনেক কম ছিলো। তাই সবমিলিয়ে ফলন বেশ ভালোই হয়েছে। তবে গম পাকার শেষ মুহূর্তে শিলা বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতি হলেও ন্যায্যমূল্য পেলে তা পুষিয়ে যাবে। পাশাপাশি গম চাষে আগামী বছর আগ্রহ আরও বাড়বে। বাড়বে গম উৎপাদনের পরিমানও।পীরগঞ্জ উপজেলার ঘিডোব গ্রামের প্রদিব রায় বলেন, ‘গত বছর এক একর গম চাষ করে কিছুটা লাভবান হয়েছি। তাই এবার তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছি। কিন্তু বর্তমানে বাজারে গমের যে দাম, তাতে আমার লাভ হবে না। আর আগামী বছর গমের আবাদ কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া উপায় দেখছি না।’একই কথা জানান রাণীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলার কৃষকরা। তারা আক্ষেপ করে জানান, প্রতিবছরই যখন কৃষকের ঘরে গম থাকে, তখন বাজারে গমের দাম কম থাকে। আর কৃষকদের গম বিক্রি শেষেই আবার বেড়ে যায় দাম। এভাবে চলতে থাকলে গম চাষে আগ্রহ হারাবেন কৃষক। একসময়ে আর হয়তো গম চাষই হবে না।এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ রায় জানান, মাঠে সুষ্ঠু তদারকি ও কৃষকদের ভাল গম উৎপাদনে পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছে কৃষি অধিদপ্তর। গম চাষ বৃদ্ধির জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদেরকে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। আর এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গমের ভাল ফলন হয়েছে।