ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ বছরের শুরুতে দোকানপাট বা ব্যবসায়ের হিসাব হালনাগাদ করতে ব্যবসায়ীরা দেনা-পাওনার হিসাব সমন্বয় করে নতুন করে হিসাব খোলেন তারা। হালখাতা শুধুমাত্র ব্যবসায়ীরা করলেও এবার ঝিনাইদহে ধার দেওয়া টাকা আদায়ে মাইক বাজিয়ে বিরানি ভোজ দিয়ে হালখাতা করেছেন এক ছাগল ব্যবসায়ী। টাকা পরিশোধ করার পর দেওয়া হয়েছে ডিমসহ বিরানি। শনিবার বিকেলে ব্যতিক্রমী এমন হালখাতার আয়োজন হয়েছিলো ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়ীয়া গ্রামের আশার মোড়ে। কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের ছাগল ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম দেড় বছর ধরে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দেওয়া ধারের টাকা আদায় করতে এমন হালখাতার আয়োজন করেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর আগে বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা ৪ লাখ টাকা জমান তিনি। বিদেশ যেতে না পারায় টাকাগুলো দিয়ে ছগলের ব্যবসা করতেন এবং তার কাছেই জমা ছিলো। মানুষের জরুরী প্রয়োজনে গত দেড় বছর ধরে তিনি তার সেই জমানো টাকা ধার দিয়েছেন। কেউ বিপদে পড়ে টাকা ধার চাইতে এলে কখনো ফেরাননি তিনি। কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৫ গ্রামের ৭৪ জন ব্যক্তির নিকট ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ধার দিয়েছেন তিনি। পাওনা টাকা ফেরত চাইতে গেলে অনেক সময় পান না দেনাদারকে। আর এতগুলো লোকের কাছে দিনের পর দিন না গিয়ে এমন হালখাতার আয়োজন করেন তিনি। ৩৮’শ টাকা খরচ করে খিচুরি আর ডিমভাজী করে দেওয়া হয় হালখাতায় আসা দেনাদারদের।
মিল্টন নামের একজন বলেন, আমার টাকার খুব দরকার ছিলো। আমি সাইফুলের কাছে গিয়েছিলাম। উনার কাছ থেকে ৩৫’শ টাকা ধার নিয়েছিলাম। সেই টাকা আজ পরিশোধ করলাম।
জসিম নামের এক ব্যক্তি বলেন, সাইফুল ইসলাম খুব ভালো মনে মানুষ। কেউ তার কাছে গেলে ফিরে আসে না। যদি সাইফুলের কাছে টাকা থাকে তাহলে দেয়। তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে অনেকেই উপকার পেয়েছে। তিনি খুব ভালো মনের মানুষ।
রামনগর গ্রামের জহির রায়হান বলেন, আমার জীবনে এমন ব্যতিক্রমী হালখাতার কথা শুনিনি। আজ দেখলাম টাকা ধারের হালখাতা।
এ ব্যাপারে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার তো কোন দোকান-পাট নেই। আমি মানুষের টাকা ধার দিয়েছি যাতে তাদের উপকার হয়। টাকা ধার দিতে দিতে ব্যবসা করব সেই পুঁজিতেও কম পড়েছে। প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে টাকা চাওয়া সম্ভব না তাই হালখাতার আয়োজন করেছি। আমার টাকার কোন সুদ-লাভ নেই। আমার ছাগল ব্যবসার জন্য টাকার দরকা তাই টাকাগুলো ফেরত নিচ্ছি। পরে আবার যদি কেউ চাই তাদের আবার দেব।
হালখাতায় ৩৮’শ টাকা খরচ করে খিচুরি আর ডিম ভাজি করেছি। কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৫ গ্রামে ৭৪ জন লোকের কাছে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পেতাম। হালখাতায় ৪৭ জন লোক এসেছিলো আর আমার টাকা আদায় হয়েছে ১ লাখ।