মোঃ শাহানুর আলম, স্টাফ রিপোর্টারঃ ঝিনাইদহে এখন শহরের পাশাপাশি গ্রামেও করোনা সংক্রমন সংখ্যা বেড়ে চলেছে। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে জেলা শহরের চেয়ে উপজেলাগুলোতে সংক্রমনের হার বেশি।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্যমতে, চলতি জুন মাসের প্রথম ১৮ দিনে ঝিনাইদহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ৩৬৭ জনের। এর মধ্যে সদর উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে ১৩৮ জনের আর ৫টি উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে ২২৯ জনের। এই হিসাবে জুনের ১৬ দিনে জেলার মোট শনাক্তের প্রায় ২৬ শতাংশ সদরে এবং ৭৩ শতাংশ অন্য উপজেলায়। এই সময়ে জেলায় করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়া ৮ জনের মধ্যে শহরের ৩ জন এবং উপজেলা গুল্ইো রয়েছে ৫ জন।
ঝিনাইদহে এ পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া ৩ হাজার ২’শ ৮২ জন করোনা রোগীর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ১ হাজার ৬৯৪ এবং উপজেলাগুলোর বাসিন্দা ১ হাজার ৫৮৮ জন। এর মধ্যে শহরে মোট শনাক্তের প্রায় ২৩ শতাংশই শনাক্ত হয়েছে চলতি মাসে। আর ৫উপজেলায় মোট শনাক্তের প্রায় ২৫ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে এই মাসে।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে আগের তুলনায় সদরে করোনা পজিটিভ রোগী বেড়েছে প্রায় দেড় গুন। বিপরীতদিকে অন্য উপজেলাগুলোয় চলতি মাসে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে তিন গুনের বেশী।
ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা গুলোতে গত মাসের শেষ দিক থেকে চলতি মাস জুড়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শহরেই মাস্ক ব্যবহারে ব্যাপক অনীহা আর উপজেলায় তো মাস্কের ব্যবহার নেই বললেই চলে। পারিবারিক-সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বেড়ে গেছে। স্বাস্থ্য বিধির বিষয়েও উদাসীনতা চোখে পড়ার মতো, এসব কারণেই গ্রামের সংক্রমণ পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী।
এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করা, বেশি করে টেস্টের আওতায় আনা, হাটবাজারে নজরদারি জোরদার করা, খেয়া পারাপারের সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা এবং সর্বোপরি সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
ঝিনাইদহ সদরের বাইরে ৫টি উপজেলায় এ পর্যন্ত শৈলকূপায় ৩৮১ জন, হরিণাকু-ুতে ২০১ জন, কালীগঞ্জে ৬৫৭ জন, কোটচাঁদপুরে ১৭৪ জন, মহেশপুরে ১৭৬ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ১৬ দিনে নতুন রোগী যোগ হয়েছেন শৈলকূপায় ৬০ জন, হরিণাকু-তে ৩২, কালীগঞ্জে ৭৪, কোটচাঁদপুরে ১১ ও মহেশপুরে ৫২ জন।
বেশির ভাগ উপজেলায় হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
উপজেলার প্রায় প্রতিটি পাড়ায় এখন এ ধরনের রোগী থাকলেও করোনা পরীক্ষায় তেমন আগ্রহ নেই। তাঁদের অনেকের ভয়, করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হলে বাড়ি লকডাউন করে দেবে। চলাফেরায় ব্যাপক বিধি নিষেধ দেবে প্রশাসন। বেশির ভাগই স্থানীয় বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ কিনে সেবন করছেন। এভাবে ইতিমধ্যে অনেকে সুস্থও হয়ে উঠছেন।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্বাশতী শীল বলেন, ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়াতে এখানে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে। লোকজনকে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলছি এবং না মানলে আইনের আওতায় আনছি।
হরিণাকু-ু উপজেলাতেও সংক্রমণ বাড়ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নাফিস সুলতানা বলেন, ‘আগের চেয়ে শনাক্তের হার বেড়েছে। জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে আগের তুলনায় বেশি মানুষ হাসপাতালে এসে পরীক্ষা করাচ্ছে।
তিনি বলেন আরও বলেন করোনা সংক্রমন রোধে ‘স্বাস্থ্যবিধি মানতে আমরা প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করছি এবং মানুষকে সচেতন করতে মাইকিংসহ বিভিন্ন প্রচার প্রচারণ অব্যাহত রেখেছি। উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সংক্রমন প্রতিরোধে জোরালো ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।