স্টাফ রিপোর্টারঃ সকাল ৮টার আগেই নাস্তা তৈরি। তবে দেয়ার মানুষ নেই। হাসপাতালের রোগীরা রীতিমতো সবাই অবাক। সেই নাস্তা দুপুর ১২টার রোগীদের কাছে পৌঁছুলো। তাও অভিযোগের অন্ত নেই। কেউ পাউরুটি পেলেও আবার কেউ পায়নি ডিম (সিদ্ধ)। গতকাল সোমবার সকালে এমন একটি ঘটনা ঘটে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের চরম ভোগান্তি শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, একদিকে জনবলের সঙ্কট, অপর দিকে নাস্তা দেয়ার জন্য দায়িত্বরত ছেলেটি সকালে না আসায় এ সমস্যা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের রান্না ঘরেই সকালের নাস্তা রাখা ছিলো। কথা হয় ওয়ার্ডে থাকা দরিদ্র ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের সাথে। এক রোগী বলেন, গত তিন দিন যাবত কিডনিজনিত সমস্যার হাসপাতালে ভর্তি আছি। আমার বাড়ি জীবননগর উপজেলায়। সকালে হাসপাতাল থেকে দেয়া নাস্তার পর ওষুধ খাই। আজ সকালে নাস্তাও আসলো না। এখনো ওষুধটাও খেতে পারলাম না। মহিলা ওয়ার্ডের আরেক রোগী শেফালী খাতুন বলেন, আমার বাড়ি আলমডাঙ্গা উপজেলায়। আমার মা সকালে বাড়ি চলে যাওয়ায় আমি একা হয়ে যায়। গত ৫দিন যাবত বেশকিছু সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাসা থেকে খাবার আনা সম্ভব নয়। তাই হাসপাতালের দেয়া খাবারই ভরসা। আজ (গতকাল) সকাল সাড়ে ১১টা বাজে। এখনো নাস্তা পেলাম না। আমার মাও নেই যে খাবার কিনে নিয়ে আসবে। শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। অসুস্থ শিশু নিয়ে পড়েন বিপাকে। একাধিক স্বজন না থাকায় নাস্তা না পেয়ে না খেয়েই বেলা ১২টা পর্যন্ত কাটিয়ে দেন কিছু কিছু শিশুর মায়েরা। অসুস্থ শিশু রেখে বাইরে থেকে খাবার ও কিনতে যেতে পারছেন না। কর্তৃপক্ষ চরম অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মত একটি জায়গায় রোগীদের সকালের নাস্তা যদি দুপুরে দেয়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা বলে মন্তব্য করেছেন বেশির ভাগ রোগীরা। বাইরের কেনা খাবারের থেকে হাসপাতাল থেকে দেয়া খাবারটাকে রোগীদের জন্য উপযুক্ত খাবার বলেও মন্তব্য করেন তারা। পরে বেলা ১২ টার দিকে সকালের নাস্তা দিতে দেখা যায়। এদিকে, গতকাল সকালে নাস্তা বিতরণের পর জানা যায়, সার্জারি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ রোগীরাই নাস্তা পায়নি। আবার কোনো কোনো ওয়ার্ডে রোগী ব্যতীত ও অন্যদেরকে দেয়া হয়েছে ভুলবশত। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। জনবল সঙ্কটকেই বেশি প্রধান্য দিচ্ছেন তারা। খাবার বিতরণের জন্য নির্ধারিত (সরকারি) কোনো জনবল না থাকায় সেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে কাজ চলমান রয়েছে। এতে জনবল সঙ্কটের বিষয়টি সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভুক্তভোগী ও সদর হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নব্য যোগদানকৃত আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম বলেন, সদর হাসপাতালের জনবল সঙ্কট। তাই সেচ্ছাসেবকদের দিয়েই খাবার বিতরণ করা হয়। গতকাল সকালে ওই সেচ্ছাসেবক না থাকায় এই সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে দ্রুত সমাধান করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুংখজনক। জনবল সঙ্কটের কারণে নির্ধারিত খাবার বিতরণের কোন কর্মী নেই। মৌখিকভাবে বিতরণের জন্য নির্ধারিত ছেলেটি না থাকায় রোগীদের নাস্তা দিতে সামান্য দেরি হয়েছে। পরে অন্যরা খাবার বিতরণ করেছেন।