বিশেষ প্রতিনিধি: শাশুড়ির জমি বিক্রিতে বাঁধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার হরিপুরের শালদাহ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে মৃত ব্যক্তির স্বজনরা। নিহত ব্যক্তির নাম আনছার আলী। তিনি কুষ্টিয়া শহরের পূর্ব মজমপুর এলাকার আহম্মদ মন্ডলের ছেলে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে ও তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, হরিপুরের শালদহ গ্রামের মৃত মোশাররফ হোসেন ২০১৯ সালে মৃত্যুবরন করেন। মোশাররফ হোসেনের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী জাহানারা জাহানের সুষ্ঠু সুন্দরভাবে জীবন যাপনের জন্য তার নিজ নামে থাকা ২২ কাঠা জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তার সন্তানরা। ২২ কাঠা জমির বাজার মূল্য হিসেবে ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে মায়ের জমিটি ক্রয় করেন মৃত মোশাররফ হোসেন ও জাহানারা জাহান দম্পতির সন্তান নিলুফা ইয়াসমিন। জমি বিক্রির ৪০ লক্ষ টাকা নিলুফা ইয়াসমিন তার মা জাহানারা জাহানের ব্যাংক একাউন্টে পে অর্ডার চেকের মাধ্যমে প্রদান করেন। জাহানারা জাহানের সন্তানদের পরিকল্পনা যেহেতু বাবা নেই তাই তাদের মায়ের যাতে কোন সমস্যা না হয় সেই জন্য ৪০ লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে মাসিক যে টাকা মুনাফা আসবে সেই টাকায় তাদের মা ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন। জাহানারা জাহানের সন্তানদের এই পরিকল্পনা মেনে নিতে পারেননি মৃত মোশাররফ হোসেনের আরেক পক্ষের সন্তানরা। মৃত মোশাররফ হোসেনের অপর পক্ষের সন্তানরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা শুরু করেন। তারা অযৌক্তিক দাবি তুলে জাহানারা জাহানের নামের সম্পত্তির ভাগ তাদের প্রদান করতে হবে বলে দাবি করেন। এই নিয়ে মৃত মোশাররফ হোসেনের দুই পক্ষের সন্তানদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। তাদের সাথে যোগ দেন জাহানারা জাহানেরও দুই মেয়ে। এদিকে জাহানারা জাহানের মেয়ে নিলুফা ইয়াসমিন ৪০ লক্ষ টাকায় মায়ের জমি ক্রয় করার পর একজন কেয়ারটেকার রাখেন বাড়িটি দেখাশোনার জন্য। গত ফেব্র“য়ারী মাসের ১৯ তারিখ কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আনসার আলী অস্স্থ্যু হয়ে পড়েন। তাকে দ্রুত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, এই রোগীর কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট, তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে তিনদিন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পর ডাক্তাররা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করেন। পরিবারের লোকজন তাকে রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করেন। রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। আনসার আলীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আবার ঢাকায় নেয়া হয়। ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আবার ভর্তি করা হয়। এই ঘটনায় আনসার আলী বেঁচে থাকা অবস্থায় কুষ্টিয়া আদালতে একটি মামলা করেন। আনসার আলীর এক নিকটত্বীয় নাম না প্রকাশের শর্তে দাবি করেন, ঢাকায় নিয়ে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে আনসার আলীকে আবার কুষ্টিয়ায় ফেরত নিয়ে আসা হয়। এর উদ্দেশ্য একটাই আনসার আলী মৃত্যুবরন করলে এই ঘটনাকে হত্যাকান্ড হিসেবে প্রমাণ করে সুবিধা হবে। তার দাবি অনেকটা বিনা চিকিৎসায় তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের এক চিকিৎসকের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি দাবি করেন, বেশ কয়েকদিন আগে আনসার আলী নামে ঐ রোগী কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হয়ে ভর্তি হন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয়। ঐ রোগী আবার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে এসে কেন ভর্তি হলো আমার বোধগম্য না। আনসার আলী শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে সে কি কারণে মারা গেছেন। এ বিষয়ে মুস্তাক হোসেন মাসুদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বোনে বোনে ঝামেলা হয়েছিল। এসময় হয়তো ধাক্কাধাক্কি হয়। এদিকে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শওকত কবির এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাদীপক্ষ কোর্টে মামলা করেছে সেই মামলা থানায় এসেছে। মামলাটি রেকর্ড করতে বলা হয়েছে, আমরা মামলা রেকর্ড করেছি। আনসার আলী অসুস্থ ছিল। অসুস্থ থাকার কারণে মেডিকেলে মারা গেছে। প্রথম অবস্থায় আমরা ডাক্তারের সাথে কথা বললাম বা ডেট সার্টিফিকেটে যেটা দেখলাম সেটা একরকম আবার মামলার বর্ণনা আরেকরকম। আমরা মামলার তদন্তের স্বার্থে পোস্টমর্টেম করিয়েছি। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসার পরেই আমরা নিশ্চিত হতে পারবো কিভাবে মারা গেছে। জাহানারা জাহানের নামীয় জমির ক্রেতা তার মেয়ে নিলুফা ইয়াসমিন জানান, আমরা ৬ বোন। আমাদের কোন ভাই নেই। আমার বোন সানজিদা আক্তার পলিকে আবার বাবা ২৭ বছর আগে নোটারী পাবলিবের মাধ্যমে তাজ্য করেন। সেই থেকে আমাদের সাথে তার কোন যোগাযোগ বা সম্পর্ক নেই। আবার বাবার মৃত্যুর পর সে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের পারবারিক অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমার আরেক বোন সুমাইয়া আক্তার মীম আমার মায়ের নামে থাকা প্রায় ৫৩ লক্ষ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে তুলে নেয়। এসব জটিলতা নিয়ে আমার মা তার নামে থাকা ২২ কাঠা জমি বিক্রি করে ফিক্সড ডিপোজিট করেন। যাতে তাকে আর কারো কাছে হাত পাততে না হয়। আমার মায়ের নামে থাকা সম্পত্তি আমার বাবার অন্যপক্ষের ছেলে মেয়েরা ও আমার দুইবোন হাত মিলিয়ে একটি পারিবারিক জটিলতা তৈরী করে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে। আমার বোন জামাই আনসার আলী যখন অসুস্থ্য হয়ে পড়েন তখন আমরা কেউ ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ঐদিন আমাদের কুষ্টিয়া মডেল থানায় বসে আমাদের ভাইবোনদের দুই পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ নিরোসনের জন্য শালিস বৈঠক ছিলো। আমরা সে