সনতচক্রবর্ত্তী: বাংলা সাহিত্যের কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ। ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবানন্দপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। তাঁর ডাক নাম ছিল ‘নেড়া’ তার উপন্যাসের মূল বিষয় পল্লী জীবন ও সমাজ। মানুষের জীবনের নানা ভাবাবেগের অপরূপ রূপান্তর তার মতো আর কেউই করতে পারেননি। সমাজ, জীবনের বাস্তবতায় তার সৃষ্টি চরিত্রগুলো আজও তারই মতো অমর।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রাথমিক পর্যায়ে দেবানন্দপুরের হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুল ও ভাগলপুরের দুর্গাচরণ এম ই স্কুলে অধ্যয়ন করেন। তারপর টিএন জুবিলি কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৪) পাশের পর একই কলেজে এফএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে তার শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটে। এপর তিনি বনেলি স্টেটে সেটেলমেন্ট অফিসারের সহকারী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের অনুবাদক এবং বার্মা রেলওয়ের হিসাব দপ্তরের কেরানি পদে চাকরি করেন। তিনি ১৯২১ সালে কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।
শরৎচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস বড়দিদি (১৯০৭) ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাহিত্য জগতে সেই সময়েই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তিনি একে একে বিন্দুর ছেলে ও অন্যান্য (১৯১৪), পরিণীতা (১৯১৪), বৈকুণ্ঠের উইল (১৯১৬), পল্লীসমাজ (১৯১৬), দেবদাস (১৯১৭), চরিত্রহীন (১৯১৭), নিষ্কৃতি (১৯১৭), শ্রীকান্ত (৪ খণ্ড, ১৯১৭-৩৩), দত্তা (১৯১৮), গৃহদাহ (১৯২০), দেনা-পাওনা (১৯২৩), পথের দাবী (১৯২৬), শেষ প্রশ্ন (১৯৩১) ইত্যাদি গল্প-উপন্যাস রচনা করেন। বাংলাসহ ভারতীয় বিভিন্ন ভাষায় তার অনেক উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। তার মধ্যে দেবদাস, শ্রীকান্ত, রামের সুমতি, দেনা-পাওনা, বিরাজবৌ ইত্যাদি। সাহিত্যকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য শরৎচন্দ্র কুন্তলীন পুরস্কার (১৯০৩), জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯২৩), বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্যপদ (১৯৩৪) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট উপাধি (১৯৩৬) লাভ করেন।
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে শরৎচন্দ্র প্রায়শই অসুস্থ থাকতেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি স্বাস্থ্য উদ্ধারের উদ্দেশ্যে দেওঘরে তিন চার মাস কাটিয়ে কলকাতা ফিরে এলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সময় তার যকৃতের ক্যান্সার ধরা পড়ে, যা তার পাকস্থলী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। বিধানচন্দ্র রায়, কুমুদশঙ্কর রায় প্রমুখ চিকিৎসক তার অস্ত্রোপচারের পক্ষে মত দেন। চিকিৎসার জন্য তাকে প্রথমে দক্ষিণ কলকাতার সাবার্বান হসপিটাল রোডের একটি ইউরোপীয় নার্সিং হোমে ও পরে ৪ নম্বর ভিক্টোরিয়া টেরাসে অবস্থিত পার্ক নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি শল্য চিকিৎসক ললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তার দেহে অস্ত্রোপচার করেন, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। চার দিন পর ১৬ জানুয়ারি সকাল দশটায় শরৎচন্দ্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।