ইউক্রেনে যুদ্ধরত প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি (পিএমসি) ওয়াগনারকে অফুরন্ত অস্ত্র দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন নিজেই এ কথা নিশ্চিত করেছেন। বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ শহর বাখমুতে যুদ্ধ করছে ওয়াগনার। রুশ বাহিনীর কোনো প্রকার সাহায্য ছাড়াই ওয়াগনার যোদ্ধারা এই শহরটি দখল করেছে। বাখমুতের দুই শতাংশেরও কম এলাকা এখন ইউক্রেনের দখলে। এর আগে জানুয়ারি মাসে ডনবাস অঞ্চলের আরেক শহর সোলেদারের নিয়ন্ত্রণ নেয় ওয়াগনার যোদ্ধারা। ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বারবার এসব শহর দখলের শতভাগ কৃতিত্বের দাবি জানিয়েছেন। এমনকি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কোনো অংশগ্রহণ ছাড়াই যে তারা এমন সফলতা পেয়েছেন তা উল্লেখ করেছেন তিনি। যদিও তার অভিযোগ, রুশ সামরিক বাহিনীকে যেভাবে অস্ত্র সরবরাহ করে মস্কো, ওয়াগনারের ক্ষেত্রে তা হয় না। তিনি একাধিকবার ভিডিও বার্তা দিয়ে তাদের অস্ত্র সংকটের কথা জানিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি জানিয়েছিলেন, তাদের যদি প্রয়োজনীয় অস্ত্র না দেয়া হয় তাহলে বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ যেনো রুশ বাহিনী নিয়ে নেয়, ওয়াগনার ১০ই মে’র পর আর যুদ্ধ করবে না।
এরপরই ওয়াগনারের জন্য অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা এলো রাশিয়ার তরফ থেকে।ফলে ধারণা করা হচ্ছে, বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ রুশ বাহিনীর হাতে দেয়ার যে প্রস্তুতি হচ্ছিল, তা আপাতত স্থগিত হতে যাচ্ছে। রোববার প্রিগোজিন তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি ভয়েজ মেসেজ পাঠান। এতে তিনি বলেন, ওয়াগনারের যত অস্ত্র ও গোলাবারুদ লাগবে, সরবরাহ করবে রাশিয়া। তাদেরকে এখন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ক্রেমলিন থেকে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার উপরিমহল থেকে বলা হয়েছে যে- যেভাবে ভালো মনে হয়, ওয়াগনার যেনো সেভাবেই যুদ্ধ চালিয়ে যায়। বাকিটা রাশিয়া দেখবে। বাখমুত হারিয়ে শহরটিকে পুনরুদ্ধারের জন্য তীব্র লড়াই শুরু করেছে ইউক্রেনের সেনারা। বাখমুতকে ইউক্রেন এবং রাশিয়া দুই দেশের তরফেই স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট বা কৌশলগত অঞ্চল বলে মনে করা হয়। ফলে কোনো দেশই বাখমুত ছাড়তে চাইছে না। তবে রাশিয়া তাদের মূল সেনাবাহিনীকে এই শহরে ব্যবহার করেনি। ধারণা করা হচ্ছে মূল বাহিনীকে রাশিয়া আরও বড় যুদ্ধের কথা মাথায় রেখে পেছনে রাখছে। সে কারণেই যুদ্ধে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভাড়াটে যোদ্ধাদের ওই অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে।এদিকে ক্রাইমিয়ায় রাশিয়া সমর্থিত প্রশাসন জানিয়েছে, ইউক্রেন তাদের সেভাস্তোপোল অঞ্চলে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। তবে ঘটনায় হতাহতের কোনো কথা বলা হয়নি। অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ফের ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন, ইউক্রেন-জুড়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়া একটি সন্ত্রাসী দেশ। কিয়েভেও এখনো বিমান হামলা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন জেলেনস্কি।
এদিকে একই অডিও বার্তায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন প্রিগোজিন। তিনি জানান, এখন থেকে ওয়াগনারের সকল অভিযানের বিষয়ে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করবেন আলোচিত জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন। তিনি বর্তমানে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের ডেপুটি কম্যান্ডার। এর আগে গত শীতে তিনি প্রধান কম্যান্ডার ছিলেন। সে সময় ইউক্রেনের ওপর রুশ বাহিনীর মিসাইল ও ড্রোন হামলা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। এবার তিনি ওয়াগনারের নিয়ন্ত্রণও পাচ্ছেন।