বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:০৬ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙননদী’গর্ভে স্থাপনা-ফসলী জমি, বাস্তু হারা হয়েছে দু’শতাধিক পরিবার

হাফিজ সেলিম, কুড়িগ্রাম
Update : মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ৭:০০ অপরাহ্ন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে বাস্তুহারা হয়ে পরেছে অনেক পরিবার।  বর্তমানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,দু’টি মসজিদ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ (ক্রসবাঁধ) হুমকির মুখে পরেছে সংযুক্ত কর্পুরা চাপড়ারপাড়-কানিপাড়া,রেডক্রস, বকসাপাড়া, বসুনিয়াপাড়ার প্রায় দু’শতাধীক বাড়ী-ঘর।মঙ্গলবার (১২ আগষ্ট) বিকেল সারে ৫ টায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম তিস্তার আগ্রাসনে বাস্তুহারা হয়েছে ওই এলাকার অন্তত ২ শতাধিক পরিবার। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও কয়েক শত পরিবার। এছাড়া, দলদলিয়া ইউনিয়নের কর্পূরা মৌজার চাপড়ারপাড় এলাকার কানিপাড়া ও রেডক্রস পরিবারের শতাধিক বাড়ী-ঘর নদীর তীব্র ভাঙনে সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা।হুমকির মুখে পরেছে কয়েকটি স্থাপনা, ফসলি জমি।  নদীগর্ভে বিলীনের অপেক্ষায় সেচকাজে ব্যবহৃত বিএডিসি নিয়ন্ত্রিত চাপরারপাড় সোলার প্যানেল, কর্পূরা  সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বসুনিয়া  পাড়া জামে মসজিদ, কানিপাড়া জামে মসজিদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গত বর্ষা মৌসুমের আগে কর্পূরা মুন্সিবাড়ী ও বসুনিয়াপাড়া রক্ষায় কিছু জি,ও ব্যাগ ডাম্পিং করলেও তা খরস্রোতে নদীর গর্ভে চলে গেছে। এবারের  তীব্র ভাঙন চললেও এখনো পর্যন্ত সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ পৌঁছেনি সেখানে।

ভাঙ্গন কবলিত  চাপরারপাড়া  গ্রামে তিস্তার তীরে ভাঙ্গনের ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে। গত ৭২ ঘন্টার  ব্যবধানে ভয়াবহ ভাঙ্গনের  তান্ডবে প্রায়  শতাধিক পরিবারের বসতভিটা,  গাছপালা, আবাদি জমি, কবরস্থান গিলে খেলেছে সর্বগ্রাসা তিস্তা নদী। আরো অনেককে  নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের  বাড়ি-ঘর। তিস্তার ভাঙনে ছয়বার ভিটে সরিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দা সোলেমান বসুনিয়া। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে তিনি ভিটে সরিয়ে অন্যত্র নিয়েছেন। সাজু মিয়া ও মজনু মিয়া বলেন, ‘ছয়বার বাড়ি সরাই, আমাদের আত্ননাদ শোনার কেউ নাই। বারবার ভিটা ভাঙে, তাও কাইয়ো শোনে না-দেখে না,বাবা। আমরা খুব অসহায়।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে একই কথা বললেন, ঐ এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী সহিদুল ইসলাম। তিস্তার ভাঙনে সর্বহারা হয়ে এখন পথের ভিখারী হতে হয়েছে অনেককে। বাড়ি-ঘর সরাতে সরাতে হাফিয়ে গেছে হামিদুল ইসলাম,জয়নাল, দেলবর হোসেন, আবু সাঈদ, উমাল উদ্দিন, সহিদার রহমান, অবির উদ্দিন, কমর উদ্দিন,মকবুল হোসেন, সইফুদ্দিসহ ভুক্তভোগীরা।

জানাগেছে, তিস্তা নদীর ভাঙনে দলদলিয়া ইউনিয়নের ২-৩ নম্বর ওয়ার্ড (কর্পূরা) পুরোটাই এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ অংশ ইউনিয়নের মানোচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। ছয় মাসে অন্তত সহস্রাধিক  পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। আবাদি জমি বিলীন হয়েছে অন্তত ৬’শ একর। ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান পুত্র  কামরুজ্জামান রানা সুন্সি বলেন, ‘গত ছয় মাসে তিস্তার ভাঙনে অন্তত ৪’শ পরিবার  বাস্তুহারা হয়েছে। বর্তমানে নদীর তীব্র ভাঙনে মানুষ দিশেহারা হয়ে গেছে। ভাঙন  ঠেকাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে এ মৌজাটি ইউনিয়নের মানোচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। বর্তমানে চাপরারপাড় ও বসুনিয়া পাড়ায় যে ভাবে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে, দ্রুত প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে দু-চার দিনের মধ্যে গ্রাম ২’টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এলাকাবাসী জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে ভাঙ্গনের তীব্রতা বারলে, সপ্তাহ খানেক আগে পাউবো’র উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষকে ভাঙ্গন ঠেকাতে যয়াযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলেও এখনো কোন প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহন করেননি বলে তারা হতাশ হয়ে পরেছে। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে ভাঙ্গন রোধের বিষয়ে জানার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্ঠা করে তাকে পাওয়া যায়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Theme Created By Uttoron Host