বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

এক স্থানেই দুই স্মৃতিসৌধ, ক্ষুব্ধ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা

রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
Update : মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪, ৬:১৪ অপরাহ্ন

রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকুপার ভয়াল কামান্না দিবস আজ মঙ্গলবার। এদিনে ঝিনাইদহের তৎকালীন শৈলকুপা থানা সদর থেকে ৮-৯ মাইল পূর্ব দিকে কুমার নদ ঘেঁষে কামান্না গ্রামে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে শহীদ হন ২৭ মুক্তিপাগল যুবক, এক গৃহবধূসহ ২৯ ব্যক্তি।

বগুড়া ইউনিয়নের সবুজে ঘেরা এ গ্রামটিতে ঘটে যায় ইতিহাসের হৃদয়বিদারক ঘটনা। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছরের মতো এবারও পালিত হচ্ছে ঐতিহাসিক কামান্না দিবস। তবে এত রক্তক্ষরণের পরও পূরণ হয়নি মুক্তিযোদ্ধাদের লালিত স্বপ্ন। অধরাই রয়ে গেছে বিগত ৫৩ বছরেও। তাদের দাবি, সেখানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর, বিশ্ববিদ্যালয়, পর্যটন কেন্দ্র, উন্নতমানের সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে। স্বাধীনতার পরই তৎকালীন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ, কোরবান আলী, ইউসুফ আলী, নূর ই আলম সিদ্দিকী প্রমুখ রাজনীতিবিদ তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু কেউই কথা রাখেননি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী জানান, ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে ৩৫ জনের মতো স্বাধীনতাকামী যুবক সেনা কর্মকর্তা শমসের হোসেনের নেতৃত্বে আশ্রয় নেন কামান্না হাইস্কুলের পশ্চিম দিকে মাধব ভৌমিকের বাড়িতে। কেউ আবার পার্শ্ববর্তী কিরণ শিকদারের বাড়িতে। নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়ায় রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ না করেই তারা ঘুমিয়ে পড়েন যে যার মতো। খবরটি শৈলকুপা রাজাকার ক্যাম্পে পৌঁছতে আর বিলম্ব হয় না।

শোনা যায়, পাকিস্তানি বাহিনীর অনুগত চর হিসেবে  কাজ করেছিল গ্রামের বর্তমানে প্রয়াত এক স্কুলশিক্ষক। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী কামান্নায় যাচ্ছে- এ খবরটি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাঠানো হলেও কোনো অজানা কারণে তা আর কামান্নায় মুক্তিযোদ্ধাদের কানে পৌঁছেনি। ফলে তৎকালীন মহকুমা শহর ঝিনাইদহ, থানা শহর শৈলকুপা আর পাশের মাগুরা থেকে কয়েকশ হানাদার বাহিনীর সদস্য ও তাদের স্থানীয় সহচর রাজাকার, আলবদর ও আলশাসম মাঝরাত থেকেই ঘিরে ফেলে মাধব ভৌমিকের বাড়ি, আশপাশের এলাকা। অবস্থান নেয় ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। রাত পোহানোর কয়েক ঘণ্টা আগেই তারা অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমকাতুর দামাল ছেলেদের ওপর। মুহুর্মুহু গুলির শব্দে ঘুম ভাঙে বীর সন্তানদের। কিন্তু অস্ত্র হাতে থাকলেও তা থেকে গুলি বের করে হানাদারদের মোকাবিলা করার সুযোগ পাননি তারা। হায়েনাদের গুলি আর বেয়োনেটের আঘাতে ঝরে পড়ে একে একে ২৭ মুক্তিপাগল যুবকের প্রাণ।২০২১ সালে কামান্নায় ২৭ শহীদ স্মৃতি দিবস পালন উপলক্ষে বাড়িটির মালিক পানু কাজীর ছেলে কাজী শাহিনুজ্জামান, যিনি কাজী রাসেল নামে সমধিক পরিচিত। তিনি পাঁচ শতাংশ জমি দান হিসেবে লিখে দেন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের নামে। কামান্নায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বা মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মিত হবে—এ কারণে জমিটি লিখে দেওয়া হয় বলে জমিদাতা কাজী শাহিনুজ্জামান রাসেল জানান।ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) পার্থপ্রতিম শীল দানকৃত জমির দলিল বুঝে নেন। কিন্তু কী কারণে তার দান করা জমিতে স্মৃতি জাদুঘর বা কমপ্লেক্স না বানিয়ে আরেকটা স্মৃতিসৌধ বানানো হলো, তার মানে তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানালেন এই প্রতিবেদককে। কামান্না দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান লাল ও খলিলুর রহমান জানান, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কামান্না ২৭ শহীদ স্মৃতি সংঘের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বগুড়া ইউনিয়ন ইউনিটের উদ্যোগে নির্বাচন কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব বিশ্বাস লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা খ ম আমির আলী প্রধান অতিথি এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শৈলকুপা উপজেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার রহমত আলী মন্টু বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।বীর মুক্তিযোদ্ধা, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অনুরোধে কামান্নায় একটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর স্থাপনের লক্ষ্যে কাজী শাহিনুজ্জামান ওরফে কাজী রাসেল তার নিজের ৫ শতাংশ জমি লিখে দিলে সেখানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৯৫০ টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ করার সময় একটি সাইনবোর্ড সেঁটে দিয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কামান্না বাড়ি স্মৃতিসৌধ’। অথচ ১৯৭১ সালের ৬টি গণকবর ঘিরে ওই বছরই প্রতিষ্ঠা করা হয় কামান্না ২৭ শহীদ স্মৃতিসৌধ। আর সেটি নতুন করে বানাতে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে বছর দুয়েক হলো। একই স্থানে একই ঘটনায় দুটি স্মৃতিসৌধ বানানোর মানে খুঁজে পাচ্ছেন না এলাকাবাসী, জমিদাতা কাজী রাসেল ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারা অবিলম্বে নতুন স্মৃতিস্তম্ভটি ভেঙে ফেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর বা মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স তৈরির আবেদন জানিয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host