রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪০ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

শৈলকুপায় যত্রতত্র করাতকল, উপেক্ষিত উচ্ছেদ আদেশ

রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
Update : বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৪, ৫:৫০ অপরাহ্ন

রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে করাতকল (স’ মিল)। উপজেলায় প্রায় অর্ধশত অবৈধ করাতকলে প্রতিদিন সাবাড় হচ্ছে বনজ, ফলদসহ নানা প্রজাতির গাছ। সেই সঙ্গে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। করাতকল চলানো নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকলেও দিনরাতের বেশিরভাগ সময় সচল থাকে এসব কল। এতে কলের আশপাশের বাড়িতে বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে বলে একাধিক ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

এদিকে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তার পক্ষ থেকে শৈলকুপার অবৈধ করাতকল উচ্ছেদের আদেশ দিলেও এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেননি উপজেলা বন কর্মকর্তা। স্থানীয় লোকজন ও বৈধ করাতকল ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর অভিযোগ দিয়েও সাড়া না পেয়ে হতাশ হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, অবৈধ করাতকল মালিকদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি।

করাতকল স্থাপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। করাতকল স্থাপনবিধি অনুযায়ি, সরকারি কার্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানের ২০০ মিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। সংরক্ষিত বনভূমির সীমানার ১০ কিলোমিটারের মধ্যেও করাতকল স্থাপনে নিষেধ আছে। এছাড়া সকাল ৬টার আগে ও সন্ধ্যা ৬টার পরে এসব করাতকল চালানো যাবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিন্তু শৈলকুপায় করাতকল স্থাপন ও চালানোয় সরকারি সব বিধিনিষেধ উপেক্ষিত হচ্ছে। প্রায় অর্ধশত করাতকলের কোনো বৈধ কাগজপত্র নাই। বেশকিছু করাতকল একেবারেই স্পর্শকাতর জায়গায় অবস্থিত। এতে বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় অর্ধশত করাতকল রয়েছে। অনুমোদন ছাড়াই যুগের পর যুগ এসব করাতকল চালাচ্ছেন মালিকরা। কয়েকবার অভিযান চালিয়ে সতর্ক করা হলেও প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করেই চলছে এসব করাতকল। সড়কের পাশে অবস্থিত অধিকাংশ করাতকলে চিড়াই করার জন্য ফেলে রেখেছে শত শত গাছের গুঁড়ি। ফলে লোকজন মূল সড়কের উপর দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে।

জানা গেছে শৈলকুপা পৌর এলাকার হাবিবপুর, কবিরপুর, সিনেমা হলরোড, ফাজিলপুর, চরআউশিয়া ছাড়াও উপজেলার বারইপাড়া, নাদপাড়া, গাড়াগঞ্জ, বসন্তপুর, সাধুহাটি, বরিয়া, কাতলাগাড়ি খুলুমবাড়ি, তমালতলা, কাচেরকোল, কচুয়া, মদনডাংগা, শেখপাড়া, আলমডাংগা, গাড়াখোলা, চড়ইবিল, ভাটই, লাঙলবাধ, ধাওড়া, রয়েড়া, বকশীপুর, হাটফাজিলপুর, আবাইপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার সংলগ্ন ও লোকালয়ে স্থাপন করা হয়েছে অধিকাংশ করাতকল।

উপজেলার রয়েড়া বাজারে অবস্থিত লাইসেন্সবিহীন মায়ের দোয়া স-মিলের মালিক মো. রুবেল বলেন, ‘আমরা এখনো লাইসেন্স (অনুমতি) পাইনি, তবে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। আশা করি খুব দ্রুত আমরা লাইসেন্স পাব।’

মাইনুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা ও অভিযোগকারী বলেন, ‘অবৈধ করাতকলের বিষয়টি বহুবার পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হলেও কোনো সুরাহ হয়নি, বন বিভাগ কর্মকর্তা ভাটা মালিকদের কাছ থেকে উৎকোচ নেন।’ স-মিল মালিকদের নিকট থেকে ক মাসোহারা আদায় করেন বলেও দাবি করেন।

শৈলকুপা-কাতলাগাড়ী রোডেল বৈকালীন দুধবাজার সংলগ্ন একটি স-মিল একেবারে আবাসিক এলাকার মধ্যে অবস্থিত। এর চারিপাশে বাসাবাড়িতে পরিপূর্ণ। দিনভর কলের শব্দে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নষ্টের পাশাপাশি অসুস্থ ব্যক্তি ও বৃদ্ধদের বাড়িতে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। ওই এলাকায় করাতকল স্থাপনের অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স-মিল মালিক জানান, তারা লাইসেন্স ছাড়াই কল চলতে পারছেন, তাহলে লাইসেন্স করার দরকার কী? লাইসেন্স পেতেও অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়, তাই এভাবেই চলছেন তারা।

উপজেলা স-মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ইরাদ আলী বলেন, ‘উপজেলায় অর্ধশত স-মিল রয়েছে, এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া কোনো স-মিলের লাইসেন্স নেই।’

মিল সমিতির সাধারণ সম্পাদক এলিট খন্দকার জানান, ‘সমিতিভুক্ত সদস্যদের অনেকবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র করতে বলা হলেও উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তার সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগ করে তারা মিল চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে বন কর্মকর্তা ও স-মিল মালিকরাই ভালো বলতে পারবেন কীভাবে চলছে।’

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বন কর্মকর্তা মখলেসুর রহমান বলেন, ‘শৈলকুপাতে কিছু কিছু স’মিলের লাইসেন্স থাকলেও বেশিরভাগের লাইসেন্স নেই। কিছুদিন আগেও আমরা অবৈধ কয়েকটি স’মিলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। নতুন করে কিছু নোটিশ করা হয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গড়ে ওঠা স-মিলের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।’ তবে বিভাগীয় কর্মকর্তার আদেশ উপেক্ষা করে মাসের পর মাস কীভাবে অবৈধ করাতকলগুলেলা চলছে, এ বিষয়ে তিনি উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাস বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে বেশকিছু মিলে নোটিশ করা হয়েছে, আরো নোটিশ পাঠানো হবে। এর নির্দিষ্ট মেয়াদ পরেই অবৈধ স-মিলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host