রাজীব দত্ত, করিমগঞ্জ,আসাম: ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা করিমগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ শহরের বিপিন চন্দ্র পাল স্মৃতি মিলনায়তনে
২ ও ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হলো দু’ দিন ব্যাপী ঐতিহাসিক সার্ক শীর্ষ সাহিত্য মহা সম্মেলন।এই সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলনে অসম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, মণিপুর, বাংলাদেশ, মেঘালয়, দিল্লি, কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড, নেপাল,ভূটান থেকে প্রায় চার শতাধিক কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সঙ্গীত শিল্পী, মানবাধিকার কর্মী, সমাজসেবী এই মহা সম্মেলনে অংশ নেন।মূল অনুষ্ঠানটি ছিল ৩ নভেম্বর,এদিন সকাল ১০টায় বিশ্ব মানবধর্ম বিকাশ পরিষদের চেয়ারম্যান বরাকের মহারাজ খ্যাত বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক ড. নীহার রঞ্জন দেবনাথ ছিলেন অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির প্রধান ও সঞ্চালক। প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়।
এরপর গীতা, কোরান ও ত্রিপিটক পাঠ করেন যথাক্রমে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্য,নিউ জলপাইগুড়ির মওলনা শহিদুল ইসলাম ও আগরতলার সাহিত্যিক কৃপামোহন চাকমা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লক্ষ্মী পাঠক।সভায় বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণুপদ দাস, উদ্বোধক কবি হিমেন্দু দাস, মানবধর্ম বিকাশ পরিষদের চেয়ারম্যান ড.নীহার রঞ্জন দেবনাথ প্রমুখ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের অধীন ট্রাস্টের দক্ষিণ এশিয়া কার্যনির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট আনন্দ মহল সরকার। তিনি তার বক্তব্যে বলেন “সার্ক শীর্ষ দেশগুলোর সাহিত্য সংস্কৃতির প্রসারে ও বিকাশে মানব ধর্ম বিকশিত হয়,সেই প্রচেষ্টায় তিনি নিবেদিত প্রাণ,এর জন্য তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান যা যা করণীয় করবেন। প্রয়োজন বৃহত্তর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মানব কল্যাণ সাধনে সচেষ্ট হবেন”।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ,লেখক, ইতিহাস ও সাহিত্য গবেষক কলকাতার সিটি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. মহীতোষ গায়েন। তিনি ঐতিহাসিক অশীন দাশগুপ্তের বক্তব্য তুলে ধরে ‘ইতিহাস ও সাহিত্যের মধ্যে অঙ্গাঙ্গী মেলবন্ধনের ব্যাখ্যা করেন। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বরাক আগমনের বিষয়টি উত্থাপন করে বরাক উপত্যকার সামুদায়িক উন্নয়নের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকার ও আসাম সরকারকে যৌথ ভাবে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসার দাবি জানিয়ে বলেন, গৌহাটি থেকে করিমগঞ্জে পৌঁছানোর রাস্তা ভীষণ খারাপ,তার সংস্কারের কথা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন,” করিমগঞ্জের জনজীবনে যোগাযোগ মাধ্যম উৎকৃষ্ট হলে, সাহিত্য,সমাজ, সংস্কৃতি আরো সুসার ও উৎকর্ষিত হবে।এই প্রসঙ্গে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাংলা আকাদেমি ও কেন্দ্রীয় সরকারের সাহিত্য একাডেমীকে করিমগঞ্জ সহ সার্ক অন্তর্ভুক্ত দেশীয় রাজ্যগুলির কবি সাহিত্যিকদের যথাযথ মূল্যায়ন ও সাহিত্য সংস্কৃতির প্রসারে সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করে বলেন সাহিত্য ও সংস্কৃতি সমাজের দর্পণ,তা যদি মূল্যায়িত,বিকশিত ও উৎকর্ষিত হয় তবেই জাতি,ধর্ম, বর্ণ,দল, মত নির্বিশেষে সমাজ ও সভ্যতা উৎকর্ষিত ও বিকশিত হবে।”
এছাড়া অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ শ্যামাপ্রসাদ দে,ইতিহাস গবেষক অধ্যাপক ড. সর্বজিৎ যশ, বঙ্গভূমি ও মঙ্গলদীপ সাহিত্য পত্রিকার যুগ্ম কর্ণধার ড. সহদেব দলুই ও ড. অর্ণব দত্ত, কবি তরুণ কান্তি মন্ডল, ইলিয়াস ঘরামী, লেখক মাধব ব্যানার্জি, দীপঙ্কর পোড়েল, পৌষালী দেবনাথ, সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিক প্রদীপ পুরকায়স্থ, চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় ,অনুরাধা অনু প্রমুখ ।অনুষ্ঠানে দেশ বিদেশ থেকে আগত বহু কবি কবিতা পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে দীর্ঘ ৩দশক ধরে ইতিহাস, সাহিত্য চর্চা ও সাংগঠনিক দক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ ইতিহাস গবেষক,লেখক, সম্পাদক ও সাংগঠনিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. মহীতোষ গায়েনকে “নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক” ও স্মারক প্রদান করেন মানবধর্ম বিকাশ পরিষদের চেয়ারম্যান বরাকের মহারাজা উপাধিতে সম্মানিত ড. নীহার রঞ্জন দেবনাথ।ঐতিহ্যবাহী ঝাঁপি পরিয়ে, উত্তরীয় গামছা দিয়ে বরণ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আনন্দ মহল সরকার। এছাড়া নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক পান অধ্যাপক ড. সর্বজিৎ যশ। অনুষ্ঠানে অতিথিদের অসমের ঐতিহ্যমন্ডিত গামছা,সরাই, ঝাঁপি, বিভিন্ন পদক প্রদান করা হয়। এছাড়া শহিদ কমলা ভট্টাচার্য, মায়ারাণী দেবী স্বর্ণপদক দেওয়া হয়- ড. সহদেব দলুই,ড.অর্ণব দত্ত, তরুণ কান্তি মন্ডল,মাধব ব্যানার্জি, দীপঙ্কর পোড়েল সহ ২০জন গুণীজনকে স্বর্ণ পদক দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজক তথা ড. নীহার রঞ্জন দেবনাথের একটি কাব্যগ্রন্থ “মহারাজার কলমে- র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। চারটি দেশের প্রায় ৮১জন কবির কবিতা নিয়ে ড. নীহার রঞ্জন দেবনাথ এবং ড. সহদেব দলুই সম্পাদিত কবিতা সংকলন ‘সপ্তর্ষি’-র মোড়ক উন্মোচিত হয়,এটির সঞ্চালনা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা কবি, সম্পাদক,অধ্যাপক ড. মহীতোষ গায়েন। সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে দেশ ও বিদেশের শিল্পী, কবিদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের পরদিন চারটি দেশের কয়েকজন খ্যাতনামা ব্যক্তিদের নিয়ে বিশ্ব মানব ধর্ম বিকাশ পরিষদের কমিটি গড়া হয়।গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের অসম রাজ্য কমিটি,যার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন ড. নীহার রঞ্জন দেবনাথ, তিনি বলেন, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা,উৎকর্ষতা বৃদ্ধি, প্রচার,প্রসার এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্য, শান্তি, সংহতি ও বিশ্ব মানবপ্রেম গড়ে তোলাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য”। অচিরেই এই দুই কমিটিতে বিভিন্ন রাজ্য ও দেশ থেকে কিছু খ্যাতনামা ও আদর্শবাদী, গুণীজনদের অন্তভূর্ক্ত করা হবে বলে তিনি জানান।