এনএসবি ডেস্ক: বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর অন্তত ৯৫ জন সদস্য। এই অবস্থায় বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে। সেগুলো হল- তাদের কোথায় কীভাবে রাখা হবে? তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াই বা কী হবে? আর ফেরত গেলে তারা যুদ্ধক্ষেত্র ফেলে পালিয়ে আসার অপরাধে শাস্তির মুখোমুখি হবে কি না? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে ১৯৪৮ সালে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে মিয়ানমার। তবে জন্মের শুরু থেকেই রাষ্ট্রটি ষড়যন্ত্র, পাল্টা ষড়যন্ত্র আর সেনা শাসনের কবলে জেরবার। যুদ্ধ চলাকালে ১৯৪২ সালে সে সময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশ মিয়ানমার দখল করে নেয় জাপান। জাপানে প্রশিক্ষিত বার্মা ইন্ডিপেনডেন্ট আর্মির সহায়তায় দেশটির দখল নেয় তারা।বার্মা ইন্ডিপেনডেন্ট আর্মি পরে অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট পিপলস ফ্রিডম লিগে রূপান্তরিত হয় এবং মিয়ানমারে জাপানি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৪৫ সালে অং সানের নেতৃত্বাধীন অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট ফ্রিডম লিগের সহায়তায় জাপানের দখল থেকে মিয়ানমারকে মুক্ত করে ব্রিটেন। গঠন করা হয় অন্তবর্তীকালীন সরকার।এর দুই বছর পর রাজনৈাতিক প্রতিদ্বন্দ্বী উ সু-র হাতে খুন হন অং সান। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন উ নু।এরপর ১৯৬২ সালে দেশটির ওপর চেপে বসে সামরিক শাসন। দশকের পর দশক চলা স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন অং সান সুচি। কিন্তু ভঙ্গুর গণতন্ত্র ভেঙে পড়ে অল্প দিনের মধ্যেই। তিন মাস না যেতেই ক্ষমতার চেয়ার দখল করে সামরিক জান্তা।বে দীর্ঘদিন ধরে চলা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বড় প্রকাশ দেখা যাচ্ছে সম্প্রতি। দেশটির ভেতরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে গৃহযুদ্ধে জেরবার জান্তা সরকার। দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে। সবশেষ গেল দুদিনে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় একশ মিয়ানমার সেনা।একটু পেছনে ফিরলে দেখা যায়, গেল জানুয়ারিতে দেশটির সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির তাড়া খেয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রায় ৩০০ সদস্য। একজন কর্নেলের নেতৃত্বে ৩৬ কর্মকর্তা এবং বাকিরা নিচু পদের সেনা। গেল ২৩ জানুয়ারি তাদের মধ্যে ১৮৪ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। বাকিদেরও পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।দ্যা ডিপ্লোম্যাটের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, শান প্রদেশে লড়াইরত বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করায় গত ২০ জানুয়ারি ছয়জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে শাস্তি দিয়েছে মিয়ানমার জান্তা। নাইপিদোতে সামরিক আদালতে এদের তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনাদের কীভাবে কোথায় রাখা হবে। তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া কী হবে–এসব নিয়ে প্রশ্ন ছিল নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কাছে। চিঠি চালাচালি, আলোচনা যা-ই হোক, যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পরামর্শ তাদের। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, প্রতিবেশী দেশের সংঘাত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলেছে বাংলাদেশকে। বিষয়টি তুলে ধরতে হবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। পাশাপাশি সব ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নিতে হবে আরও কঠোর পদক্ষেপ।