মোঃ আনোয়ার হোসেন আকুঞ্জী, খুলনা।।
“লাইব্রেরীতে মানবাত্মার ধ্বনিরাশি বইয়ের পাতায় বন্দি হয়ে থাকে। মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃংখলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে। লাইব্রেরীতেই মানব হৃদয়ের উত্থান পতনের শব্দ শোনা যায়।” কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ কথাগুলোর সংমিশ্রণ যেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আন্দুলিয়া শওকত মোল্যা স্মৃতি উম্মুক্ত পাঠাগার। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শওকত আলী স্মৃতি উম্মুক্ত পাঠাগারে নিয়মিত ক্ষুদে পাঠকদের বই পড়া দেখে অনেকেই অভিভূত। পাঠাগারটি যেন ক্ষুদে পাঠকদের মিলন মেলা।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে গ্রামটি। যে সব শিশু কিশোররা খেলাধুলা বা মোবাইল নিয়ে সময় পার করতো তারা অনেকেই এখন সুযোগ পেলেই আড্ডা দেয় পাঠাগারে। শিশুদের কাছেও এ পাঠাগারে রাখা পত্রিকা ও বিভিন্ন ধরনের বই এখন অন্যতম আকর্ষণ ।
মফস্বল অঞ্চলে পাঠাগারের সংখ্যা খুবই কম। প্রত্যন্ত এলাকায় পাঠাগার নেই বললেই চলে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরের অন্যান্য বই সম্পর্কে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো ধারণা নেই। এটা কাটিয়ে উঠতে শিশু-কিশোরদের হাতে বই তুলে দিতে ডুমুরিয়া উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামে গড়ে উঠেছে শওকত আলী স্মৃতি উম্মুক্ত পাঠাগার।
কলেজ ছাত্র আবিদ হাসান, রাব্বি বিশ্বাস ও আল আমিন মোলা জানায়, কলেজ ছুটির পর বিকেলের অবসরে চলে আসি এই পাঠাগারে। এখানে এসে গল্পের বই, মণীষীদের জীবনী, ইসলামী বই ও পত্রিকাসহ নানা রকম বই পড়ি। আগে অবসরে শুধু দোকানে আড্ডা মেরে ও মোবাইলে গেমস খেলে সময় পার করতাম। এখন আমরা পাঠাগারে আড্ডা দিয়ে অনেক আনন্দ পাই।
পাঠাগার সহকারী ফেরদৌস আলম বলেন; গ্রামের সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান একজন পত্রিকা প্রেমী, পত্রিকা পড়া তার নেশা। প্রতিদিন তিনি ছুটে আসেন পাঠাগারে। তার সুবিধার জন্য আমি তাকে একটি পাওয়ার ওয়ালা চশমাও কিনে দিয়েছি।
অজানাকে জানতে প্রতিদিন শিশু কিশোর ও তরুণেরা ছুটে আসেন পাঠাগারে। বর্তমানে অসংখ্যা বই রয়েছে গ্রন্থাগারটিতে। সাহিত্য, ইতিহাস, চাকরির খবর, বিজ্ঞান, জীবনী, সংবাদপত্র, শিশুসাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে বইয়ের সমাহার এখানে।
২০২২ সালে শওকত মোল্যা উম্মুক্ত পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন আন্দুলিয়া গ্রামের উদ্যোগী তরুণ নূরুজ্জামান। পৃষ্ঠপোষক মোল্যা রেজোয়ান তার পিতার স্মৃতি হিসেবে পাঠাগারটির নামকরণ করেছেন। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়াতে রয়েছেন।
শওকত মোল্যা উম্মুক্ত পাঠাগারের পরিচালক মোঃ নূরুজ্জামান বলেন, বই পড়ে শিক্ষিত সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে লাইব্রেরির যাত্রা শুরু করেছি। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীও তরুণ সমাজ অবসর সময়ে নতুন স্থাপিত পাঠাগারে এসে নিজে আলোকিত হবে এটি আমরা প্রত্যাশা করি। আমি বিশ্বাস করি আপনাদের সহযোগিতা পেলে এই পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা সার্থক হবে।
শুভকামনা রইল সবার জন্য ❤❤❤
সাংবাদিক সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ