মোঃ আনোয়ার হোসেন আকুঞ্জী, খুলনা:খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার হাসানপুর গ্রামের চিংড়ি চাষি তবিবুর রহমান তার মিষ্টি পানির ঘেরে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করে এলাকায় সাফল্যর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পাশাপাশি উপজেলায় শ্রেষ্ঠ চিংড়ি চাষির পুরস্কার ও পেয়েছেন।
সফল চাষি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে; ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামের চিংড়ি চাষি তবিবুর রহমান জোয়াদ্দার (৪৬) নিজের ১ একর ২০ শতাংশ জমিতে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রচলিত পদ্ধতিতে মিষ্টি পানিতে গলদা চিংড়ি ও রুই-কাতলা জাতীয় মাছের চাষ করতেন। ২০২১ সালে তিনি বাগদা চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু লোকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ওই চিংড়ি ঘেরের মিষ্টি পানিতে বাগদা চাষের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম ওই ঘেরের ৮ শতাংশ ক্যানেল (খাল) জীবানুনাশক দিয়ে পরিস্কার করে বাজার থেকে ৫০ কেজি ওজনের ৫ বস্তা লবন এনে ক্যানেলর পানিতে ঢালেন। এর ৩ দিন পর উন্নত জাতর ৫০ হাজার বাগদা রনু ছাড়েন। ওই ক্যানেল ১৫ দিন ধরে খাবার দিয়ে পরিচর্যার পর বাগদা পোনাগুলো ১ ইঞ্চি’র মত বড় (লম্বা) হওয়ার পর বারিং থেকে মিষ্টি পানি তুলে আস্তে আস্তে ঘেরটি ভরে দেন। এরপর ২টি এরেটরের (অক্সিজন প্লাট) মাধ্যমে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখার পাশাপাশি একটানা ৯০ দিন যাবৎ সিপি খাবারের সঙ্গে সামান্য লবন মিশিয়ে খাওয়ানা-সহ নিয়মিত ওষুধ-পরিচর্যা শেষে মাছ ধরেন। সে বছর তিনি গড় ৮’শ ৮০ টাকা কেজি দরে আড়তে ২৮ মন বাগদা(অনুমান ৩৫ হাজার পিস) বিক্রি কর ১২ লাখ টাকা আয় করেন। এরমধ্যে ৮ লাখ টাকা খরচ বাদ ৪ লাখ টাকা লাভ হওয়ায় চাষির সামনে স্বপ্নের নতুন দুয়ার খুলে যায়।
৪ লাখ টাকা লাভের পর ২০২২ সাল তবিবুর বড় আশা নিয়ে অনেক মৎস্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরামর্শ করে ঘেরের পানির গভীরতা বাড়াতে মেশিনের সাহায্যে জমির ওপর থেকে প্রায় ২ ফুঠ মাটি কেটে নিয়ে বাঁধগুলো বড় করেন। এবং এপ্রিল মাসে পূর্বের পদ্ধতি অনুসরণ করে ৬০ হাজার বাগদা রেনু ছেড়ে পরিচর্যা করেন। ১’শ ২০ দিনের মাথায় ঘের থেকে প্রায় ৪০ মন বাগদা আড়তে বিক্রি করে ১৪ লাখ টাকা আয় করেন। ওই বছর তার ১০ লাখ টাকা খরচ হলেও ৪ লাখ টাকা লাভ থাকে। তাছাড়া মাছ তোলার পর শীতের সময় ঘেরের জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধানের বাম্পার ফলন ও আইলে প্রচুর সবজি উৎপন্ন হয়। আর ওই বছরই ডুমুরিয়া উপজেলা থেকে মিষ্টি পানির শ্রেষ্ট বাগদা চাষির পুরস্কার ও অর্জন করেন।
পূর্ব-অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চলতি বছর আধা-নিবিড় পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য এপ্রিল(বশাখ) মাস ৫ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে ঘেরটি পুনঃসংস্কারের পাশাপাশি পানিতে ১০টি এরেটর (অক্সিজন প্লাট) ও চারপাশে ৫ ফুট উচু নেট স্থাপন করেন। এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখ উন্নত জাতের ৮০ হাজার বাগদা রেনু ছাড়েন। ইতোমধ্যে ১০১ দিনের মাথায় সরেজমিনে বাগদার বাম্পার ফলন দেখতে ও চাষিদের উৎসাহিত করতে গত ৪ আগষ্ট শুক্রবার সকাল ১১টায় তার খামার পরিদর্শন করেন, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী খুলনা- ৫ সাংসদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ । ওই সময় ডুমুরিয়া উপজলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দিক’র সামনে ছোট খ্যাপলা-জাল দিয়ে ঘেরে খ্যাপ দিলে প্রতিবার ৫০-৬০ পিস বড়-বড় বাগদা চিংড়ি উঠতে দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গ ডুমুরিয়া উপজেলার হাসানপুর গ্রামে মিষ্টি পানিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করে উপজেলায় শ্রেষ্ঠ চিংড়ি চাষির পুরস্কার পাওয়া তবিবুর রহমান বলেন, এখন আমার স্বপ্ন, মিষ্টি পানিতে বাগদা-চিংড়ি চাষের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। পাশাপাশি আমি জাতীয় পুরস্কার জিততে চাই। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দিক বলেন, আশা করছি তবিবুরর ঘের থেকে এ বছর ২৮’শ কজি বাগদা ধরা যাবে।