রাজধানীর পরিবেশ রক্ষা ও সবুজায়ন বাড়াতে আশার আলো দেখাচ্ছে ছাদবাগানের জন্য ১০ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা। এতে ছাদবাগান করায় উৎসাহ পাচ্ছেন নগরবাসী। ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই হোল্ডিং ট্যাক্সে এ ছাড় দিতে চায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তবে সাতপাঁচ ভেবে নীতিমালা করার আহ্বান জানান নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব। সম্প্রতি সময় সংবাদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান তিনি।
নগর পরিকল্পনাবিদ হাবিব জানান, রাজধানীর পরিবেশ রক্ষা এবং সবুজায়ন বৃদ্ধিতে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে ছাদবাগানের জন্য ১০ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা। এর ফলে নতুন করে ছাদবাগান করার উৎসাহ পাচ্ছেন নগরবাসী। তবে কর মওকুফের ক্ষেত্রে সঠিক নীতিমালা তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, কার ছাদ, ওই ছাদে কে বাগান করবে; ছাদ বাগান করলে পুরস্কারটা কে পাবে। যিনি হোল্ডিং ট্যাক্স দেন তিনি; না, যে ভাড়াটিয়া গাছ লাগিয়েছে তিনি পাবেন। ওই বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াকে বাগান করতে কতটা উদ্বুদ্ধ করছেন–এসব বিষয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার।
আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, ‘ছাদবাগান করার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে আর সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা কাজ করব। এ মাসের মধ্যে আমরা পলিসিগুলো ঠিক করে নেব। প্রতিটি বাড়ির ছাদে ফলমূল ও শাকসবজির বাগান থাকবে। বাগান করতে বাড়ির মালিকদের উৎসাহিত করা হবে।’
রাজধানী মিরপুরে কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিজের বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন শখের বাগান। নিজের অবসর তো কাটছে ছাদবাগান পরিচর্চায়। আম, কলা, পেঁপেসহ নানা ফলের জোগান আসছে এ বাগান থেকে। সম্প্রতি ছাদবাগান নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে কিছুটা ফুরফুরে মেজাজে আছেন তিনি।
কামাল হোসেন বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের বিষয়টি রাজধানীর দুই সিটির বাড়িওয়ালাদের জানানো দরকার। অনেকে জানেন না। ছাদবাগান করলে পরিবেশ রক্ষা পাবে, উপকৃত হবেন নগরবাসীও।
প্রসঙ্গত, এ পরিবারের মতো রাজধানীজুড়ে ক্রমেই বাড়ছে ছাদবাগান। নগরে বাড়ছে সবুজ, বাড়ছে প্রশান্তি। পাখির চোখে এই শহরে বড় বড় বৃক্ষ কাটা পড়লেও ছাদগুলো জোগান দিচ্ছে সবুজের। ইট-পাথরের নাগরিক জীবনে একটু প্রশান্তি দিতে ছাদবাগানের বিকল্প নেই। তাই ছাদবাগানে উৎসাহ দিতে ২০২০ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে কর মওকুফের আবেদন করেন ডিএনসিসি মেয়র। প্রস্তাব করা হয় ১০ ভাগ কর মওকুফের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুধু উত্তরই নয়, সব সিটি করপোরেশন আর পৌর এলাকায় ছাদবাগানে ১০ শতাংশ কর মাফের ঘোষণা দেয় মন্ত্রণালয়। নিয়ম মেনে বাগান করলে চলতি অর্থবছর থেকেই হোল্ডিং ট্যাক্সে এ ছাড় দিতে চায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
একটি আদর্শ শহরে অন্তত ২৫ ভাগ সবুজ এলাকা থাকা দরকার হলেও ঢাকায় আছে মাত্র সাত শতাংশ। ছাদবাগানে কর মওকুফ হলে সবুজায়ন বৃদ্ধি পেয়ে তাপমাত্রা কমে আসবে বলে আশা পরিবেশবিদদের।
উল্লেখ, ছাদবাগান করলে গাছ পরিচর্যার জন্য ওই ভবনের হোল্ডিং ট্যাক্স ১০ শতাংশ মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত ১৮ জুন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী জানান, এখন থেকে সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার বাড়ির মালিকরা এ সুবিধা পাবেন।
এর আগে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম জনগণকে ছাদবাগানে উৎসাহিত করতে ১০ শতাংশ কর ছাড়ের ঘোষণা দেন। আর সেটি অনুমোদনের জন্য ২০২০ সালের নভেম্বরে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ছাদে বৃক্ষরোপণ করে ঢাকা মহানগরীকে যারা সবুজ ঢাকায় রূপান্তরিত করতে সহযোগিতা করছেন তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স চার কিস্তি একত্রে পরিশোধ সাপেক্ষে হালসনের চার কিস্তির ওপর ১০ শতাংশ বিশেষ রিবেট সুবিধা জারি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সদয় সম্মতির জন্য অনুরোধ করা হলো। সেই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতেই মন্ত্রণালয় সব সিটি করপোরেশনের জন্য পরিকল্পিত ছাদবাগানের ওপর করছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে।