কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি: সুন্দরবনে অব্যাহত বন্যপ্রাণী নিধনের এক ভয়ঙ্কর চিত্র উঠে এলো মঙ্গলবার। খুলনা রেঞ্জ বন বিভাগ ও নলিয়ান কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে দাকোপের ঠাকুরবাড়ি খেয়াঘাট এলাকা থেকে ১১০ কেজি হরিণের মাংসসহ আরিফুল সরদার (২৫) নামের এক শিকারীকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত আরিফুল দাকোপ উপজেলার কালীনগর গ্রামের কিনারুল সরদারের পুত্র।বেলা ১১টার দিকে পরিচালিত এই অভিযানে আরিফুলের সাথে থাকা আরও চারজন শিকারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। অভিযানে খুলনা রেঞ্জের রেঞ্জ সহযোগী মোঃ ইসমাইল হোসেন, কালাবগী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ মজুমদার, সুতারখালী স্টেশন কর্মকর্তা দেওয়ান মিজানুর রহমান এবং নলিয়ান কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার রাজু আহমেদসহ বন বিভাগ ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এক শ্রেণীর অসাধু জেলে মাছ ধরার ছদ্মবেশে সুন্দরবনে হরিণ শিকারের ফাঁদ পেতে নির্বিচারে হরিণ নিধন করছে। পরবর্তীতে বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা ফাঁদে আটকা পড়া হরিণ জবাই করে মাংস লোকালয়ে এনে বিক্রি করছে। এই অব্যাহত শিকার প্রকৃতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তারা বলছেন, বন্যপ্রাণী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য, বিশেষ করে সুন্দরবনের হরিণ।
এদের শিকারের ফলে পরিবেশের স্বাভাবিক জৈবিক চক্র ব্যাহত হচ্ছে।সুন্দরবনের মতো একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হরিণ শিকার কেবল আইনের লঙ্ঘনই নয়, বরং সেখানকার জীববৈচিত্র্যের জন্য এক বড় হুমকি। এর ফলস্বরূপ পরিবেশগত পরিবর্তন এবং বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।খুলনা রেঞ্জের রেঞ্জ সহযোগী মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন যে একটি সংঘবদ্ধ শিকারী চক্র সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকার করে বিক্রির উদ্দেশ্যে লোকালয়ে নিয়ে আসছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে বন বিভাগ ও কোস্টগার্ড যৌথ অভিযান চালিয়ে একজনকে মাংসসহ আটক করতে সক্ষম হয়।এ বিষয়ে সুতারখালী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা দেওয়ান মিজানুর রহমান বলেন, আটককৃত আরিফুল তার সাথে থাকা চারজন শিকারীর পালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও, আটককৃত হরিণের মাংসের ঘটনায় বন্যপ্রাণী নিধন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।সুন্দরবনে এই ধরনের অবৈধ শিকার কার্যকলাপ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবেশবিদ ও স্থানীয়রা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। বন বিভাগ এবং কোস্টগার্ডের এই যৌথ অভিযান একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আরও জোরালো পদক্ষেপ এবং নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অন্যথায়, এই বনভূমির অমূল্য সম্পদ দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।