কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে ডাকাত দলের কাছে অস্ত্র ভাড়াদানকারী চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫ এর সদস্যরা। আর তাদের আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল পরিমাণ বুলেট, কার্তুজ, সেনাবাহিনীর নকল ইউনিফর্ম, অত্যাধুনিক বাইনোকুলার ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র।
শনিবার (০৮ জুলাই) বিকেল ৩টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারস্থ র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) মো. আবু সালাম চৌধুরী।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- চকরিয়া উপজেলার নলবনিয়া গ্রামের মৃত সিদ্দিকের ছেলে খায়রুল আমিন (৪৩), ঈদগাঁও উপজেলার মধ্যম শিয়াপাড়ার মৃত আব্দুস ছাত্তারের ছেলে মাহাবুব তৈয়ব (৬৪), বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজ নগর এলাকার মৃত নজরুল মিয়ার ছেলে নূর ইসলাম (৫০), চকরিয়ার দরগাহ পাড়ার মৃত আব্দুল মোতালিবের ছেলে মো. আব্দুল হাসিম (৩৫), একই উপজেলার দক্ষিণ মেধা কচ্ছপিয়া এলাকার মৃত আব্দুর শুক্কুরের ছেলে জুলফিকার আলী ভুট্টো (৪৮), পূর্ব হাজীপাড়ার মো. হোসেনের ছেলে মো. সেলিম (২৮) ও গর্জনতলী গ্রামের মো. হোসেনের ছেলে শাহাব উদ্দিন (৩২)।
র্যাব কর্মকর্তা মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, কক্সবাজারের চকরিয়া ও মহেশখালী উপজেলার উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র ডাকাত দলের নিয়মিত তৎপরতা খবর পাওয়া যায়। যার প্রেক্ষিতে সশস্ত্র ডাকাত দলের সাথে জড়িত অপরাধীদেরকে গ্রেপ্তার প্রচেষ্টার পাশাপাশি তাদের অস্ত্রের উৎস খুঁজে বের করতে অনুসন্ধানে নামে র্যাব।
‘এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১৫ জানতে পারে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার স্থল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম ছিলখালির ঘর-বসতিহীন সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় অবস্থান করে একটি চক্র টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ডাকাত দলের নিকট আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাতিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী নিয়মিত ভাড়া দিয়ে থাকে। আরো জানা যায়, এক ঘণ্টার হাঁটা পথ ছাড়া সেখানে যাওয়ার আর কোনো স্থলপথ নেই। আশপাশে ১/২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অপরিচিত কোনো মানুষ ঢুকলেই ডাকাতদের নিযুক্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে তাদের কাছে তথ্য চলে যায় এবং তখন তারা গা ঢাকা দিয়ে দেয়।’
মো. আবু সালাম চৌধুরী আরও জানান, উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১৫ এর একটি দল চক্রটিকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে শুক্রবার (০৭ জুলাই) মধ্যরাতে লবণের বড় নৌকার পাটাতনে লুকিয়ে সেই আস্তানার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। একপর্যায়ে সংযুক্ত একটি ছোট খালের মাধ্যমে আস্তানার একেবারে নিকটবর্তী হয়ে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই র্যাবের আভিযানিক দল নৌকা থেকে নেমে সেখানে অতর্কিত অভিযান শুরু করে। উপস্থিত দুষ্কৃতকারিরা সশস্ত্র অবস্থায় থাকলেও পরিস্থিতির আকস্মিকতায় ও র্যাব সদস্যদের এরূপ কৌশলী অবস্থানের কারণে গুলি ছোড়ার কোনো সুযোগ পায়নি। এ সময় চক্রটির অস্ত্রধারী ০৭ জন সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব।
‘এসময় তাদের আস্তানায় তল্লাশি করে ২টি ওয়ান শুটার এক নলা বন্দুক, ১টি ওয়ান শুটার কাটা রাইফেল, ০১টি ওয়ান শুটার রাইফেল (এলজি), ১টি এয়ার রাইফেল/গান, ২ রাউন্ড মেশিনগান (এমজি) এর বুলেট, ১০ রাউন্ড রাইফেলের বুলেট, ১১ রাউন্ড ১২ বোর কার্তুজ, ৮৯ রাউন্ড এয়ার রাইফেল বল, ১টি বড় রামদা, ১ সেট সেনাবাহিনীর ভুয়া ইউনিফর্ম, ১টি বাইনোকুলার, ৮টি মোবাইল ফোন এবং ১০টি সীম কার্ড উদ্ধার করা হয়।’
র্যাব কর্মকর্তা মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার চক্রটির সদস্যরা জানায় তারা আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মের আদলে তৈরি নকল ইউনিফর্ম, দেশীয় অস্ত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী মূলত বিভিন্ন ডাকাতদলের কাছে বিক্রয় এবং ক্ষেত্রবিশেষ ভাড়া দিয়ে থাকে। এছাড়াও উদ্ধারকৃত মোবাইল ও সিম ব্যবহার করে ক্রেতা ও ভাড়াগ্রহণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে।
উদ্ধারকৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ ও অন্যান্য আলামতসহ গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থার জন্য কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় লিখিত এজাহার দাখিল করা হয়েছে বলেও জানায় র্যাব কর্মকর্তা মো. আবু সালাম চৌধুরী।