রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: কাটা-ধোয়ার পর শুকনা পাট বাজারে পুরোদমে তুলতে শুরু করেছেন ঝিনাইদহের শৈলকূপার কৃষকরা। এবারে পাট পচানো ও ধোয়ার কাজে বেগ পেতে হয়েছে কৃষকদের। বেড়েছে খরচ। আবার পানিস্বল্পতায় ঠিকমতো জাগ দিতে না পারায় পাটের আঁশ কালচে হয়েছে। অনেক চাষিকে পাট জাগ দেওয়ার জন্য ১ থেকে ২ কিমি দূরে যেতে হয়েছে। এতকিছুর পরও বাজারে তুললে মিলছে না প্রত্যাশিত দাম। ফলে বিপাকে পড়েছেন পাটচাষিরা।
শৈলকুপার পাটের বাজারগুলো জমে উঠতে শুরু করেছে। নতুন বাজারে সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক পাটের হাট বসে। এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বসে পাটের বাজার। এসব বাজারে যানবাহনের ওপর থেকে দরদাম করে কেনাবেচা চলছে।
মৌসুমের শুরুতে পাটের বাজার ৩ হাজার টাকা মণ হলেও বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে ২ হাজার ২শ টাকায়। অবশ্য কালচে নিম্নমানের পাট হলে ১৫শ থেকে ১৭শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মধ্যম মানের পাট ১৯শ টাকা দরে; আবার পাটের রঙ উন্নত মানের হলে মণপ্রতি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪শ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে। গড় হিসাবে মণপ্রতি পাট ১৮শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারীরা এখান থেকে ট্রাক ভরে পাট নিয়ে যাচ্ছেন। খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, ঢাকাসহ দেশের িিভন্ন জেলায় যায় এ অঞ্চলের পাট।
ছোট মৌকুড়ি গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান জানান, তার ১ বিঘা জমিতে পাট ছিল। তিনি বলেন, ‘আমার জমিতে আনুমানিক ১ হাজার হাতা পাট হয়েছে, পাট কাটতে নিয়েছে ৪ টাকা হাতা করে ৪ হাজার টাকা, টানতে নিয়েছে ৪ টাকা হাতা করে ৪ হাজার টাকা, ধুতে নিয়েছে ৫ টাকা হাতা করে ৫ হাজার টাকা আর বাজারে আনতে নিয়েছে ৭শ টাকা। মোট খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৭শ টাকা। বিক্রি করেছি ২ হাজার টাকা দরে ২০ হাজার টাকা। আশা ছিল আরও ভালো দাম পাব, কিন্তু পেলাম না।
কিত্তিনগর গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানায়, এবার ঠিকমতো বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর ও ডোবায় সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। বাজারে বর্তমান পাটের যে দাম, তাতে খরচ বাদ দিলে কিছুই থাকছে না। ভেবেছিলাম পাটের দাম ভালো পাব, কিন্তু আশানারূপ দাম না পাওয়ায় আমরা হতাশ।
পাট ব্যবসায়ী উজ্জ্বল আলী বলেন, ‘বাজারে সোনালি পাটের চাহিদা বেশি। তবে পানির অভাবে কৃষকরা ঠিকমতো জাগ দিতে না পারায় বাজারে কালচে পাট বেশি দেখা যাচ্ছে। আগের বছরের তুলনায় এবার পাটের মান তুলনামূলক খারাপ। এখানে পাটের আমদানি বেশি হওয়ায় প্রতিবছর শৈলকুপা বাজার থেকে পাট কিনি।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবুল হাসনাত জানান, এবার উপজেলায় ৮ হাজার ৩শ ৯৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। পাট উৎপাদন হয়েছে ২০ হাজার ২২০ মেট্রিক টনের মতো। অন্যান্য বছরের তুলনায় ফলন মোটামুটি ভালো হলেও এ বছর পাটের দাম কিছুটা কম।