সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১০ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

শৈলকুপায় মাদ্রাসা সুপারের আচরণে শিক্ষিকা অতিষ্ঠ

রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
Update : সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন

রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকুপা নাগিরাট মকরমপুর দাখিল মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছেন একই প্রতিষ্ঠানের সহকারি শিক্ষিকা মনিরা পারভীন। অকথ্য গালিগালাজ ও মানুষিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে গত ২৮ মে সভাপতি বরাবরে তথ্যপ্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শৈলকুপা উপজেলার নাগিরাট মকরমপুর দাখিল মাদ্রাসা সুপারের নিকট সহকারি শিক্ষক (ইংরেজি) হিসেবে মনিরা পারভীন যোগদান করে সুনামের সাথে দায়িত্বপালন করছেন। তিনি তার বাচ্চার অসুস্থতার জন্য মৌখিকভাবে সুপারের নিকট ছুটির আবেদন করেন। এসময় মাদ্রাসা সুপার আব্দুল আজিজ তাকে শর্ত সাপেক্ষে কয়েক মাসের লিখিত ছুটির জন্য লিখিত আবেদন করার পরামর্শ প্রদান করেন। সে মোতাবেক মনিরা পারভীন আগষ্ট হতে ডিসেম্বর ৫ মাস প্রতিমাসে ৮ হাজার টাকা হিসেবে ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এসময় অগ্রিম হিসেবে সুপার আব্দুল আজিজ ওই শিক্ষিকার নিকট হতে তারিখ বিহীন রুপালী ব্যাংক শৈলকুপা শাখার ২টি চেক গ্রহণ করেন, সেভিংস হিসাব নং-৫৯৪২০১১০০০৬০৯। একারনে প্রতিমাসে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে ৮ হাজার টাকা করে পরিশোধ করা হয়। ২০২৩ সালে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাস ছুটি নবায়নের স্বার্থে ১০ হাজার টাকা হিসাবে মনিরা পারভীনের নিকট হতে পরবর্তিতে ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন মাদ্রাসা সুপার আব্দুল আজিজ। সদ্য যোগদানকারী ওই শিক্ষিকার বিভিন্ন দাপ্তরিক নিয়ম কানুন না জানার দূর্বলতা এবং সুপারের নানা রকম কুটকৌশলে পড়ে বেতন করিয়ে দেওয়ার প্রলোভনে ১৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আব্দুল আজিজ। একপর্যায়ে শিক্ষিকা মনিরা পারভীন নিজ দায়িত্বে তার বেতন করেন। মাদ্রাসা সুপার আব্দুল আজিজ গোপনে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতেই কারণ অকারনে মনিরা খাতুনকে মানুষিক চাপে রাখেন এবং তার সাথে অশালীন কথাবার্তা ও গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অপরদিকে আগষ্ট হতে ডিসেম্বর ৫ মাস প্রতিমাসে ৮ হাজার টাকা হিসেবে ৪০ হাজার টাকা গ্রহণ করে গনিতের শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুনকেও একই ছুটির ফাঁদে ফেলেন মাদ্রাসা সুপার। যেন টাকা হলেই ছুটি মেলে মাদ্রাসাটিতে। তবে মাঝে মধ্যে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে যাওয়ার চুক্তি ছিল উভয় ক্ষেত্রে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক জানান, একই সাথে কৌশলী ছুটির নিজস্ব তৈরি ফাঁদে নতুন দুই শিক্ষিকার নিকট হতে ১৬ হাজার টাকা গ্রহণ করে উক্ত টাকার বিপরিতে স্বপ্না পাল নামীয় একজন শিক্ষাকে মৌখিকভাবে ভাড়ায় নিয়োগ দেন মাদ্রাসা সুপার। স্বপ্না পালকে ৪ মাসে ৯ হাজার টাকা হিসাবে ৩৬ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। শেষমাসে বাড়তি আবেদন করায় স্বপ্না পালকে খুশি করতে আরো ১৫’শ টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। নীরব চাঁদাবাজির মত ব্লাক মেইলিংয়ের শিকার মনিরা পারভীন। একজন অভিভাবক সদস্য জানান, মাদ্রাসা সুপার মনিরার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করেন না বলে প্রচুর অভিযোগ পাওয়া যায়, বিষয়টি একাধিক শিক্ষক জানলেও সুপারের ভয়ে কেউ মুখ খোলেনা।
মনিরা পারভীন বলেন, সুপারকে আর্থিকভাবে সন্তোষ্ট না করায় নিয়মিত মানুষিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। অকারনে খারাপ ব্যবহার, নিয়ম বহির্ভূত নির্দেশ এবং অশালীন কথাবার্তার বিষয়টি অভিভাবক সদস্যদের গোপনে জানালেও কোন সুরাহা হয়নি বরং উল্টো বিপদের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এব্যাপারে মকরমপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল আজিজ মুঠোফোনে বলেন, অত্র অভিযোগের বিষয়টি তিনি অবগত হওয়ার পর পরিচালনা কমিটির সাথে আলাপ আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান করা হয়েছে। তবে একই সাথে দুই শিক্ষিকার ছুটি দিয়ে তাদের থেকে ব্যাংক চেক, বিকাশ ও নগদ টাকা গ্রহনের বিষয় এড়িয়ে যান। তিনি দাবি করেন মনিরা খাতুনের অভিযোগ সঠিক নয়।
এ ব্যাপারে নাগিরাট মকরমপুর দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মোসাহেদুজ্জামান টিটো জানান, ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষিকা মনিরা খাতুন মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে খুব শিঘ্রই একটি তদন্ত কমিটি করে পরবর্তি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কি কারনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এ বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। মাদ্রাসা সুপারের অর্থনৈতিক অনিয়ম কিংবা অর্থ আত্মসাৎসহ প্রয়োজনীয় অসংগতি খতিয়ে দেখা হবে বলে মন্তব্য করেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহম্মেদ খান জানান, কোন শিক্ষকের ছুটি দিয়ে তার থেকে টাকা নিয়ে মৌখিকভাবে ভাড়ায় অন্য ব্যক্তির নিয়োগ সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত। মাতৃত্বকালীন অথবা বিশেষ অসুস্থজনিত ছুটি ছাড়া এজাতীয় লম্বা ছুটির বিধান নেই উপরোন্ত টাকা নিয়ে শিক্ষকের ছুটি দেয়ার নজির প্রথম জানতে পারলাম, ঘটনা সত্য হলে বিষয়টি খুবই দূঃখজনক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host