রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: দেয়ালে ও ছাদে ধরেছে ফাটল। অধিকাংশ স্থানে খসে পড়েছে পলেস্তারা। বেড়িয়ে পড়েছে রড। সামান্য বৃষ্টিতেই ফাটল ধরা ছাদ থেকে পড়ছে পানি। খসে পড়ছে পোকায় খেয়ে নষ্ট করা দরজা- জানালা সহ অন্যান্য উপকরণ। জানালার গ্রিলগুলোও মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। এমন অবস্থার মধ্যে চলছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা সাবরেজিস্টার অফিসের কার্যক্রম। একদিকে ভাঙা ভবন,অন্যদিকে সেবা নিতে আসা শত শত মানুষের দীর্ঘ লাইন, এ যেন দুর্ভোগের চুড়ান্ত পর্যায়। এভাবেই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন কর্মকর্তারা। আর সেবা নিতে এসে হয়রানি আর ভবন ভাঙার ভয়ে ফিরে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
অন্যদিকে পুরাতন এই ভবনের পাশেই ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ভবন। তবে দীর্ঘদিনেও তা হস্তান্তর করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সাবরেজিস্টার অফিস কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন ভবনে এখনও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়নি। শেষ হয়নি পানি সঞ্চালন,টয়লেট নির্মাণের পূর্ণাঙ্গ কাজ। বাদ রয়েছে রংয়ের কাজও। কর্মকর্তাদের রুমে শুধুমাত্র কয়েকটা টেবিল আর হাতলওয়ালা চেয়ার ছাড়া ব্যবহারের জন্য অন্য কোন আসবাবপত্র দেওয়া হয়নি।
সেবা প্রত্যাশীরা বলছেন, ‘ভয় নিয়ে জমি রেজিস্ট্রির কাজ করতে আসেন তারা। বৃষ্টি হলে ছাদ থেকে পানি পড়ে। ভবন ভাঙার ভয়তো আছেই। সরকার কোটি টাকা খরচ করে নতুন ভবন বানালেও দুর্ভোগ কমেনি। চালু হয়নি নতুন ভবন।’
সাবরেজিস্টার অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ফাইল রাখার জায়গা নেই। পুরোনো আসবাবপত্র ভাঙাচোরা। লোডশেডিংয়ে জেনারেটরের ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টির পানি পড়ে সকল ফাইল ভিজে যায়। এই অবস্থায় শত শত মানুষকে সেবা দেওয়া যেন যুদ্ধের মতো।’
সেবা নিতে আসা বকশীপুর গ্রামের রহমত আলী বলেন, ‘পুরাতন ভবনে জায়গা কম,তা-ও ভাঙাচোরা। যেকোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। ভয়ে থাকতে হয় সবসময়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হয়।’
দামুকদিয়া গ্রামের মাসুদ মোল্লা বলেন, ‘সরকার এত টাকা দিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করলেও এখনও তা চালু হয়নি। ফলে দিন দিন দুর্ভোগ বাড়ছে। আমরা চায় দ্রুতই নতুন ভনবটি চালু করা হোক।’
মোতালেব হোসেন নামে এক সেবা প্রত্যাশি বলেন, ‘এই কার্যালয়ে সেবা নিতে এলে ভয়ে থাকতে হয়। তাই সেবা নেওয়ার সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকি। ডাক পড়লেও কেবল ভেতরে যায়।’
উপজেলা সাব রেজিস্টার কর্মকর্তা সোনালী খানম বলেন, ‘হঠাৎ-ই ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। তাতে আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। একাধিকবার গণপূর্ত বিভাগকে জানিয়েছি,তবে এখনও নতুন ভবনে ওঠার অনুমতি মেলেনি। এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসে সেবা দেওয়া খুবই কষ্টদায়ক। যেকোন সময় বড় ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে।’
এদিকে নতুন ভবন নির্মাণের ঠিকাদার শামীম হোসেন বলেন, ‘নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। শুধু পানি সঞ্চালন লাইনের কিছু কাজ বাকি আছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই ভবনটি হস্তান্তর করা হবে।’