শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ডেট লাইন ডুমুরিয়ার থুকড়া : মুক্তিযুদ্ধের গৌরব থেকে মাদকপুরী সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন তুহিন হত্যার প্রতিবাদে বোয়ালমারী প্রেসক্লাবের মানববন্ধন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ২ ফরিদপুরের যৌনপল্লীর শিশুরা এবার জন্মসনদ পেল সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ঝিনাইদহ প্রেস ইউনিটির মানববন্ধন শৈলকুপায় বিয়ে বাড়িতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ, আহত-৭ শৈলকুপায় আনসার কমান্ডার পরিচয়ে জেলেদের কাছ থেকে কিস্তিতে চাঁদা আদায় কুড়িগ্রামের উলিপুরে কমিউনিস্ট পার্টির ৯ম উপজেলা সম্মেলন রানু সভাপতি ও প্রদীপ সম্পাদক ডুমুরিয়ায় পানিবন্দী মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

শৈলকুপায় আনসার কমান্ডার পরিচয়ে জেলেদের কাছ থেকে কিস্তিতে চাঁদা আদায়

রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
Update : শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫, ৫:৩০ অপরাহ্ন

রয়েল আহমেদ, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: আনসার কমান্ডার, ইউএনওর গানম্যান, আবার কখনও বিজিবি সদস্য এমন নানা ছদ্মবেশে ঝিনাইদহের শৈলকুপার গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিস্তিতে চাঁদা আদায় করছেন লাল্টু হোসেন।  অভিযান ও মামলার ভয় দেখিয়ে সাপ্তাহিক, মাসিক এমনকি বাৎসরিক চুক্তিতে আদায় করছেন লক্ষাধিক টাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুদিয়া গ্রামের লাল্টু হোসেন চায়না দুয়ারি জালের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ভয় দেখিয়ে শতাধিক জেলের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা ও মাছ নেন। তার রয়েছে নিজস্ব একটি চাঁদাবাজ চক্র, যারা জেলেদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করে থাকে। অভিযানে জব্দ করা জাল পুড়িয়ে ফেলার কথা থাকলেও সেগুলো চুপিসারে বিক্রি করা, নিজে রেখে দেওয়া অথবা অন্য জেলের কাছে দিয়ে আবার নদীতে পাতানোর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অভিযানে কাজ করা শ্রমিকদের পারিশ্রমিক না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
জেলেদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগে জানা যায়, নিজেকে মৎস্য বিভাগ ও আনসার বাহিনীর কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এসব অনিয়ম করে আসছেন লাল্টু। পুরো উপজেলাজুড়ে প্রায় শতাধিক জেলে রয়েছেন তার নিয়ন্ত্রণে। চুক্তি অনুযায়ী জেলেরা তাকে নিয়মিত টাকা দিয়ে থাকেন। টাকা পেলে তিনি মোবাইল ফোনে আগাম অভিযানের খবর পৌঁছে দেন, ফলে জেলেরা আগেভাগেই নদী থেকে জাল উঠিয়ে ফেলতে সক্ষম হন।
তবে কেউ টাকা দিতে বিলম্ব করলে বা না দিলে, নিজের অনুগত জেলের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে সেই জেলের জাল জব্দ করে পুড়িয়ে দেন তিনি। অভিযান পরিচালনার জন্য লাল্টু নিজে একটি ট্রলারও কিনেছেন। এমনকি ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্যদের ট্রলার দখলে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
একসময়ের ফটো স্টুডিওর মালিক লাল্টু এখন প্রতিমাসে শুধুমাত্র জেলেদের কাছ থেকেই আদায় করেন লক্ষ লক্ষ টাকা। স্টুডিও ব্যবসা ছেড়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে করছেন অপকর্ম। সামান্য আনসার স্বেচ্ছাসেবী হয়ে তার চালচলন যেন বড় কোনো সরকারি কর্মকর্তার মতো। চড়েন দামি মোটরসাইকেলে,করেছেন বিলাশবহুল বাড়ি। নদীতে অবৈধ চায়না দুয়ারি জালের অভিযানে কর্মকর্তাদের হাত করে নিজেও বনে গেছেন সরকারি কর্মকর্তা। মৎস্য কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আনসার কর্মকর্তা এমনকি অফিসের সবাই যেন তার হাতের মুঠোয়।
দামুকদিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী জেলে আবুজার বলেন, “সাপ্তাহিক ও মাসিক চুক্তিতে অভিযানের খবর ও জাল না পোড়ানো বাবদ লাল্টুকে টাকা দিয়েছি। টাকা দিতে দেরি হলে বা না দিলে কোথায় জাল পেতেছি তা অন্য জেলেদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে অভিযানের সময় জাল তুলে পুড়িয়ে দেয়।”
আরেক ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর বলেন, “পেটের দায়ে নদীতে এসব অবৈধ জাল পাতি। তার উপর আবার লাল্টু মামলার ও অভিযানের ভয় দেখিয়ে টাকা ও মাছ নেয়। কয়েকবার আমি জাল তোলা অভিযানে শ্রমিকের কাজ করেছি। টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও দেয়নি। আবার পোড়ানো জালে থাকা লোহার শিক বিক্রি করেও সেই টাকা আত্নসাৎ করেছে। জাল বাঁচানোর জন্য আমরা তাকে টাকা দিয়েছি।”
নুর ইসলাম নামে আরেক জেলে বলেন,“আনসার কমান্ডার পরিচয়ে মামলা করার ভয় ও অভিযানের খবর দেওয়ার জন্য টাকা নিয়েও খবর দেয়নি। উল্টে আমার ৭টি জাল পুড়িয়ে দিয়েছে। অবৈধ জালের কারখানা বন্ধ করে দিলে আমরা আর এই জাল পাবো না,ফলে পাততেও পারবো না।”
তবে এতসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে লাল্টুর মুঠোফোনে কল দিলে লাল্টুর মেয়ে পরিচয়ে এক নারী ফোন রিসিভ করেন। লাল্টু হোসেনের পেশা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন,“তার বাবা একজন আনসার কমান্ডার। ”
পরে লাল্টু হোসেন নিজে ফোন করলে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে জেলেরা মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন যাতে অভিযানে আমি না যাই। এলাকার সব জায়গা আমি চিনি,এজন্য অভিযানে জাল তুলতে সুবিধা হয়। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে। ” এক পর্যায়ে এই প্রতিবেদকের সাথে গোপনে দেখা করতে বলেন লাল্টু হোসেন।
এবিষয়ে ৯নং মনোহরপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা আনসার কমান্ডার শহিদুল ইসলাম বলেন, “এলাকার অনেক জেলের কাছ থেকে লাল্টু হোসেনের টাকা নেওয়ার বিষয়ে শুনেছি। গোপনে তদন্ত করছি। সত্যতা পেলে উপজেলা আনসার কমান্ডারের কাছে জানাবো।”
লাল্টুকে নিয়ে এতসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শৈলকুপা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান এই প্রতিবেদককে লিখিত দেন।  সেখানে তিনি উল্লেখ করেন,লাল্টুর বিষয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে অভিযোগের বিষয়ে জেনেছেন। তবে লাল্টু তাদের সদস্য না। সে একজন স্বেচ্ছাসেবক। পূজা,ভোট বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাকে দিন হাজিরায় কাজ করানো হয়। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন,“সাংবাদিকদের মাধ্যমে সমস্ত অভিযোগের বিষয়ে জেনেছি। তদন্ত চলছে,প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযানে যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ সেই লাল্টু হোসেনকেই কেন নেওয়া হয় প্রশ্নে মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, “তিনি স্থানীয় হওয়ায় সমস্ত কিছু ভালো চেনেন ও জানেন। এজন্য অভিযানে তাকে সাথে রাখা হয়।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host