আমার ভ্রমণ পার্টনার জনাব শরিফুল বাশার একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ, তিনি পূর্বেই আকাশবাড়ী হলিডেইজ এর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ২৬ জন লোকের শ্রীলংকা মালদ্বীপ ভ্রমণ টিমের সংগে আমাদের যুক্ত করেন। পরিকম্পনা মোতাবেক আমি ২২.১০.২০২৪ ইং রোজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটায় উঠে প্রস্তুতি গ্রহণ করি। অতঃপর ফজরের নামাজ আদায় করে পূর্বাশার গাড়িতে ঢাকার উত্তরার উদ্দশ্যে রওনা হই এবং সকাল সাড়ে ১১: ৩০ টায় আমার পার্টনার শরিফুল বাশারের বাসায় পৌছি এবং অবস্থান করি। দুপুরে লাঞ্চ ও রাতের ডীনার সেরে সাড়ে ১০:৩০ টায় বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হই। রাত ২:০০ টায় নির্ধারিত সময় বিমান ছেড়ে ভোর ০৫:৩০ মিনিটে কলোম্ব বিমান বন্দরে পৌছি এবং ট্রানজিট ফ্লাইটের উদ্দেশ্যে অপেক্ষা করি অতঃপর সকাল ০৭:৩০ মিনিটে বিমানে উঠে সকাল সাড়ে ০৯:৩০ টায় মালের বিমান বন্দরে পৌছি । বিমান বন্দরের কার্য্যক্রম শেষ করে মালেতে আমাদের হোটেল ইলা গার্ড এ ১১:০০ টায় পৌছি। হোটেল বরাদ্দ পেতে একটু দেরি হয় বেলা ১২:০০ টায় হোটেলে রুম বরাদ্দ পাই। হোটেলটি সমুদ্রের পাড়ে বেশ পরিছন্ন। আমরা ফ্রেস হয়ে হোটেলে খেতে যাই। মোটামুটি বাঙ্গালী হোটেল। এরপর আমরা লাঞ্চ খাই এবং হোটেলে ফিরে আসি। হোটেলে রেষ্ট নিয়ে আমরা মালে শহর দেখতে বের হই। মালে শহরের প্রেসিডেন্ট হাউজ, কবুতর চত্বর, প্রেসিডেন্ট পার্ক, রেড ক্রিসেন্ট হাউজ সহ বড় বড় মসজিদ গুলো ঘুরে দেখি এবং আসর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করি। এরপর সমুদ্রের পাড় দিয়ে হাটতে শুরু করি। ভারত মহাসাগর পরিবেষ্ঠিত শহরটি বড়ই পরিপাটি ও পরিছন্ন। কোথাও পলিথিন, ছেড়া কাগজ কিংবা বোতল দেখতে পায়নি এমনকি একটি ফকির ও দেখতে পাওয়া যায়নি। বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায় দেশটি কলরবে মুখরিত। ২৪.০৯.২৪ তারিখ সকালে আমরা ৩০ জন স্পীট বোর্টে হেমাকুচি বিচ দেখতে রওনা হই । ভ্রমণ বাবদ ৫০ ইউ এস ডলার পেমেন্ট দিতে হয়। হেমাকুচি বিচের অদূরে বোট রাখার পর আমরা সমুদ্রে নামি এবং হেটেই বিচে পৌছাই। এসময় আমাদের ভ্রমণ সঙ্গীরা সমুদ্রের অনুভিতি বাস্তবে দেখে অভিভূত হন। এরপর আমরা ফিরে এসে একটি হোটেলে লাঞ্চ করি এবং নামাজ আদায় করি। অতঃপর আমরা ডলফিন জোনে যাই সেখানে অসংখ্য ডলফিন দেখতে পাই।
ডলফিন দৃশ্যটি আমাদের অভিভূত করেছে। এরপর আমরা স্ক্রু ড্রাইভিং জোনে আসি এবং অনেকেই স্ক্রু ড্রাইভিং করেন। বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য মাছ দেখতে পাওয়া যায়। অতঃপর আমরা ০৪ টায় হোটেলে ফিরে আসি। আমাদের এ ভ্রমণে সকল সদস্যই খুশি হন। এরপর ২৫ তারিখ সকালে নাস্তা খাই। শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়ে লাঞ্চ সারি এবং হুলু মালের সেন্ট্রাল পার্কে যাই। সেখানে মেরাথন রেস দেখি এতে প্রায় চার হাজাহার ছেলে মেয়ে অংশগ্রহণ করেছে বলে জানাযায়। এই ইভেন্টটি তাদের জাতীয় পর্যায়ে হয়েছে বলে যানা যায়। আমরা বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি এর মধ্যে ছাত্র, পুলিশ, মিলিটারি, কোষ্টগার্ড সহ অনেকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। মালদ্বীপে কোন সক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থা নাই, তবে সুশৃঙ্খল ।
প্রশাসনিক ভাবে পুলিশ, কোষ্টগার্ড, মেলেটারি আছে বলে জানা গেছে।
২৬ তারিখ আমরা পুনরায় বাসে চড়ে মালে শহর দেখে ১২:০০ টায় হোটেলে ফিরে আসি। এবং বেলা ৩ টায় এয়ারপোর্টে পৌছে FITS Air এর বোর্ডিং পাস ইমিগ্রেশন কার্য্যক্রম শেষ করে সন্ধ্যা ০৭ টায় রওনা হয়ে রাত ০৯:৩০ মিনিটে কলোম্ব এয়ার পোর্টে পৌছি। এবং রাত ১০:০০ টায় ইমিগ্রেশন শেষ হয়। এর জন্য ২৫ ডলার প্রয়োজন হয়। এরপর হোটেলে পৌছি রাত্র ১১ টায়। এবং রাত্রী জাপন করি। ২৭ তারিখ সকাল বুফে ব্রেকফাস্ট সারি এবং ক্যান্ডির উদ্দ্যেশ্যে রওনা হই। তবে কলোম্ব শহরের বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখি যার মধ্যে শহরের পুরাতন একটি মসজিদ যা ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কলোম্ব শহরে মুসলিমদের অধিক্য আছে তারা অধিকাংশই ব্যবসায়ী বলে জানা যায়। এছাড়া শহরের প্রসিডেণ্ট ভবন, প্রধানমন্ত্রীর ভবন, হায়েষ্ট টাউয়ার যা ৫০ মিটার উচ্চতা সাগর ঘাট, প্রেমদাশা স্টেডিয়াম, ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড সহ কলোম্বর দর্শনীয় স্থানসমুহ দেখি এবং উত্তর ক্যান্ডীতে যাওয়ার পথে পিনাওয়ালা হাতি পার্ক, ওয়াটার ফল ও চা বাগান দেখি। উত্তর ক্যান্ডি ব্রিটিশ নির্মিত। বর্তমানে সকল নির্মাণ-ই ব্রিটিশ হেরিটেজের আদলেই তৈরি হচ্ছে। ক্যান্ডি অঞ্চলের লোকেরা ব্রিটিশ দর্শন ধারন করে। ব্রিটিশদের তৈরি করা অনেক ভবনই এখন ফাইফ ষ্টার হোটেল হয়েছে। এছাড়া সরকারি অফিস চালু হয়েছে। অতঃপর আমরা রাত্রে হোটেলে ফিরে আসি ও অবস্থান করি। ২৯.০৯.২০২৪ আমরা বুফে নাস্তা করে কলম্বোর উদ্দেশ্যে রওনা হই। পথিমধ্যে সিটি মিউজিয়াম বোটানিক্যাল গার্ডেন, ক্যান্ডি লেক, সহ সব স্থাপনা দেখে একটি ফার্নিচার ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট ভিজিট করি। সন্ধ্যা ০৫ টায় কলম্ব এয়ার পোর্টে পৌছি এনং ফরমালিটিজ শেষ করে FITS Air এ চড়ে রাত ১১:০০ টায় ঢাকা এয়ারপোর্ট এ পৌছি।
সার্বিক মন্তব্যঃ
উভয় দেশই সৌন্দর্য মন্ডিত, মালে ভারত মহাসাগর পরিবেষ্টিত। শ্রীলঙ্কা ভারত মহাসাগর পরিবেষ্ঠিত হলেও এর শেষ গন্তব্য বঙ্গোপসাগরে পৌছেছে। শহরের মাঝ দিয়ে মহাভ্যালী নদী প্রবাহিত হয়েছে যার দৌর্ঘ্য ৩৫০ কিলোমিটার। নদীটি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পতিত হয়েছে। শ্রীলংকা ও মালে শহরের রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিছন্ন। শহরে কোন ট্র্যাফিক জ্যাম নাই। এমনকি কোন শব্দ দূষণ ও নাই। পলিথিন,পানির বোতল, ছেড়া কাগজ কিংবা কোন স্তূপীকৃত কোন আবর্জনা দেখতে পাওয়া যায়নি। মালেতে কোন ভিক্ষুক নাই। শ্রীলংকা তেও কোন ভিক্ষুক নাই তবে উত্তর ক্যান্ডির উপত্যক্যাতে একজন ভিক্ষুক দেখা গেছে তবে তার কোণ আচকিং নাই। শ্রীলঙ্কা শহরটি পাহাড় ও সাগর পরিবেষ্টিত। মালদ্বীপ পর্যটন নির্ভর। অন্যদিকে শ্রীলংকা বিশ্বের অন্যতম চা উৎপাদন কারী দেশ, এবং পর্যটন শিল্পেও সমৃদ্ধ। এছাড়া কিছু শিল্প কারখানা আছে বলে প্রতিয়মান হয়েছে। ২ টি দেশ ভ্রমণ করতে গেলে অনুমানিক একলক্ষ টাকা খরচ হয়। তবে, ভ্রমণ করলে টাকার চেয়ে আনন্দ ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার জন্য উৎকৃষ্ট স্থান।
মালদ্বীপ ও শ্রীলংকা বিষয়ক ধারণাপত্রঃ
মালে হল মালদ্বীপের রাজধানী ও সর্বাধিক জনবহুল শহর। এ শহরের জনসংখ্যা ১৩৩৪১২ এবং আয়তন ৯.২৭ বর্গ কিলোমিটার (৩.৫৮ বর্গ মাইল)। এটি পৃথিবীর অন্যতম সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভৌগোলিকভাবে শহরটি উত্তর মালা অ্যাটল(কাফু অ্যাটল) এর দক্ষিণে অবস্থিত। প্রশাসনিকভাবে শহরটিতে একটি কেন্দ্রীয় দ্বীপ, একটি বিমানবন্দর এবং মালে সিটি কাউন্সিল পরিচালিত আরোও দুটি দ্বীপ রয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে এটি ছিল রাজা শাসিত দ্বীপ। যেখানে প্রাচীন রাজবংশ শাসন করত আর সেখানেই প্রাসাদটি অবস্থিত। শহরটিকে তখন মহল বলা হত। পূর্বে এটি দুর্গ ও দরজা দ্বারা সুরক্ষিত একটি শহর ছিল.১৯৪৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হবার পরই রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম নাসির এর শাসনকালে শহরটিকে পুনঃনির্মাণ করা হয় এবং রাজপ্রাসাদ(গনদুয়ারা),সুরম্য দুর্গসমূহ(কোশি) এবং ঘাঁটিসমূহ(বুড়ুজ) ধ্বংস করা হয়। তবে মালে ফ্রাইডে মসজিদ রয়ে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে জমি ভরাটকরণ অভিযানের মাধ্যমে দ্বীপটিকে যথেষ্ট পরিমাণ বর্ধিত করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে মালে রাজনৈতিক প্রতিবাদ ও মাইলফলক ঘটনাবলির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
ভৌগোলিকভাবে মালে ক্যাফু অ্যাটেলে অবস্থিত হলেও প্রশাসনিকভাবে এটি এর অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় না। নগরীর কেন্দ্রীয় অংশটি মালে এর কিছু দ্বীপ দ্বারা গঠিত। আরও তিনটি দ্বীপ শহরের একাংশ গঠন করে। কেন্দ্রীয় দ্বীপে একটি বাণিজ্যিক বন্দর রয়েছে যেটি দেশের সামগ্রিক বাণিজ্যিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করে। কেন্দ্রীয় দ্বীপটিতে ব্যাপকভাবে নগরায়ন করা হয়েছে। অন্তনির্মিত অঞ্চলটি মূলত পুরো ভূখণ্ডই দখল করেছে। দেশের জনসংখ্যার একতৃতীয়াংশেরও কম সংখ্যক জনগণ রাজধানী শহরে বসবাস করে এবং ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা ২০,০০০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১০০,০০০ জনে। প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক কেন্দ্র হওয়ায় মালদ্বীপ এর বেশিরভাগ অধিবাসী ও অন্যান্য অঞ্চল এ বসবাসকারী দেশ ও বিদেশ এর অনেক কর্মীরা মাঝেমধ্যে দ্বীপটির স্বল্পমেয়াদী বাসস্থানগুলোতে থাকেন।
পুরো দ্বীপপুঞ্জটি মালদ্বীপের রাজধানীর নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে। “মালদ্বীপ” শব্দের অর্থ হল “মালে এর দ্বীপপুঞ্জ”
মালে দ্বীপের প্রধান চারটি ওয়ার্ড বা বিভাগের নামগুলো দিয়েছিল মূল গিরাভারু জেলেরা। “মাফান্নু” শব্দটি “মা” যার অর্থ বিশাল এবং “ফান্নু” (একটি স্থান যেখানে একটি গ্রামের পথ সমুদ্রের সাথে মিলিত হয়) শব্দ থেকে আগত। এনবেয়ারো থেকে হেনভিরু(যেখানে জেলেরা তাদের টোপ পায়),গালু-ওলহু(পাথরের খাঁজ) থেকে গালোলহু এবং মাথি-আনগোলহি(বাতাসের গলিপথ) থেকে মাচাংগোলী।
প্রথমদিকের বিদেশি উৎসগুলিতে মালে কে বলা হত আম্ব্রিয়া বা মাহল। মালদ্বীপবাসীদের কাছে যা “ফুরমালা” অর্থাৎ “সর্বশ্রেষ্ঠ মালে” নামে পরিচিত ছিল।
১৩৩৩ সালে ইবন বতুতা মালে ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি শহরটির পাশাপাশি মালদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জেরও একটি বিস্তৃত বিবরণ প্রদান করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে রানী রীন্দি খাদিজা মালের বাসিন্দা ছিলেন যা থেকে পরবর্তীতে দ্বীপের মধ্যস্থলে তৎকালীন সুলতান শাসকদের রাজপ্রাসাদের অন্তর্ভুক্ত থাকার ব্যাপারে আভাস পাওয়া যায়। প্রাসাদের আঙিনায় কতকগুলো গর্তের ভেতরে কড়ির মজুত ছিল,যা বাণিজ্য করার জন্য প্রস্তুত রাখা হত।
ইবনে বতুতা কাঠের তৈরি কয়েকটা মসজিদের কথাও উল্লেখ করেছিলেন। সুলতান মুহাম্মাদ ইমাদুদ্দিন ১৭শ শতাব্দীতে মালে দুর্গ তৈরি করেছিলেন। তিনি এ দ্বীপের উত্তর ,পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে প্রাচীর তৈরি করেছিলেন। মাছ ধরার জাহাজ ও ছোট ধোনি নৌকাগুলো একটি আভ্যন্তরীণ বন্দর ব্যবহার করত। বড় জাহাজগুলি ভিলিংলি এবং হুলহুল দ্বীপের বাহিরের বন্দরে নোঙর করা হত। দ্বীপটি এক বর্গমাইলেরও কম জায়গা দখল করেছিল এবং এর চারপাশে একটি অগভীর হ্রদ ছিল।
১৮৮৮ সালে মালেতে ২১৪৮ জন বাসিন্দা ছিল,কিন্তু জনসংখ্যার বৃদ্ধি মানুষকে বসবাসের জন্য নতুন স্থান অনুসন্ধানের দিকে ধাবিত করে। ১৯২৫-১৯২৭ সালে তৃতীয় মুহাম্মাদ শামসুদ্দিনের শাসনামলে পুরাতন দুর্গ ও জরাজীর্ণ দালানসমূহ ভেঙে ফেলা হয়েছিল এবং আরও ক্ষুদ্র পরিসরে পুনর্নিমাণ করা হয়েছিল। রাস্তাগুলো প্রশস্ত ও সোজা করা হয়েছিলো। প্রাক্তন বড় কবরস্থাঙ্গনগুলো মেরামত ও পরিষ্কার করা হয়েছিল আরও আবাসনের জায়গা অর্জনের জন্য।
১৯৬৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম নাসিরের শাসনামলে শহরটি পুননির্মাণ করা হলে রাজকীয় প্রাসাদ(গণদুয়ারু) , সুরম্য দুর্গগুলো (কোশি) এবং ঘাঁটিসমূহ (বুড়ুজ) ধ্বংস করা হয়। শুধু জাতীয় জাদুঘর ভবন, সুলতানের শেষ বাসভবন এবং মালে জুমার মসজিদ রয়ে গিয়েছিল। মালের জনসংখ্যা শীঘ্রই ১৯৬৭ সালে ২৯,৫২২ জনে এবং ১৯৭৭ সালে ২৯,৫২২ জনে উন্নীত হয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কথা চিন্তা করে ১৯৮৬ সালের দিকে মালের চারপাশে অগভীর হ্রদটি দখলে নেয়া হয়।
মালের সর্বাধিক সম্মানজনক স্থানটি হল মেধুজিয়ারেই,যা মালের ফ্রাইডে মসজিদের রাস্তা জুড়ে অবস্থিত এবং সেখানে শায়খ আব্দুল বারাকাত ইউসুফের সমাধি অবস্থিত। ১৯৫৩ সালে তিনিই সর্বপ্রথম মালদ্বীপের অধিবাসীদের ইসলাম ধর্মের সাথে পরিচয় করিয়েছিলেন বলে বিবেচনা করা হয়।
দর্শনীয় স্থান সমূহ
পুরাতন ফ্রাইডে মসজিদ
এটি দেশের অন্যতম পুরিাতন একটি মসজিদ যা ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। নান্দনিক স্থাপনা শৈলী, শৈবাল পাথরের অপূর্ব ব্যবহার ও তাতে সেটে দেয়া আছে পবিত্র কুরানের আয়াত, যার কারণে মসজিদটি বিশেষায়িত।অমুসলিমরাও মসজিদটি পরিদর্শন করতে পারবেন তবে সেক্ষেত্রে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি নেয়া প্রয়োজন।
জাতীয় জাদুঘর
জাতীয় জাদুঘর যে বিলিডংটিতে অবস্থিত সেটি চীনের পক্ষ হতে উপহার হিসেবে প্রাপ্ত।এখানে ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির বিশাল সংগ্রহ যা থেকে এই দ্বীপের ইতিহাসের অনেকখানি জানা যায়।
চীন মালদ্বীপ মৈত্রী সেতু
এই অসাধারণ নির্মানশৈলীর সেতুটি মালেকে হুলহুল দ্বীপের সাথে সংযুক্ত করে।
জাতীয় শিল্প জাদুঘর
একই ছাদের নিচে রয়েছে জাতীয় গ্রন্থগার, বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসমূহ ও মালদ্বীপের বিভিন্ন শিল্পের অস্থায়ী প্রদর্শনী।যদিও স্থায়ী কোন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা এখানে নেই।
শ্রীলঙ্কা যার সাবেক নাম সিলন এবং দাফতরিক নাম গণতান্ত্রিক সমাজবাদী শ্রীলঙ্কা প্রজাতন্ত্র হল দক্ষিণ এশিয়ার একটি দ্বীপরাষ্ট্র। এটি ভারত মহাসাগরে, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে ও আরব সাগরের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত; এটি মান্নার উপসাগর ও পক প্রণালী দ্বারা ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। ভারত এবং মালদ্বীপের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার একটি সামুদ্রিক সীমান্ত রয়েছে। দেশটির বিধানিক রাজধানী শ্রী জয়বর্ধনপুর কোট্টে এবং বৃহত্তম শহর ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র কলম্বো।
শ্রীলঙ্কা একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র, বিভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা ও জাতিসত্তার আবাসস্থল। সিংহল জাতি দেশের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। তামিল জাতি, যারা একটি বড় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, তারাও দ্বীপটির ইতিহাসে একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছে। অন্যান্য দীর্ঘকালীন প্রতিষ্ঠিত গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে মূর, বার্ঘার, মালয়, চীনা এবং আদিবাসী বেদ্দ।
শ্রীলঙ্কা চা, কফি, নারিকেল, রাবার উৎপাদন ও রফতানিতে বিখ্যাত। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংবলিত সমুদ্রসৈকত, ভূদৃশ্য তদুপরী সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শ্রীলঙ্কাকে সারা পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
নামকরণঃ
প্রাচীনকাল থেকেই শ্রীলঙ্কা অনেক নামে পরিচিত হয়ে আসছে। প্রাচীন গ্রীক ভূগোলবিদগণ একে তপ্রোবান[২৪][২৫] এবং আরবরা সেরেনদীব নামে ডাকত। ১৫০৫ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজরা এই দ্বীপে পৌঁছে এর নাম দেয় শেইলাও যার ইংরেজি শব্দ হল সিলন। ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের অধীনে থাকা অবস্থায় তারা এই নামেই পরিচিত ছিল। ১৯৪৮ সালে এই নামেই স্বাধীনতা পায় এবং পরে ১৯৭২ সালে দাপ্তরিক নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়,মুক্ত, সার্বভৌম ও স্বাধীন প্রজাতন্ত্রী শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা নামটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ “শ্রী” ও “লংকা” থেকে। শ্রী শব্দের অর্থ পবিত্র এবং লংকা অর্থ দ্বীপ।
উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে শ্রীলঙ্কা সর্বোচ্চ সাক্ষর জনসংখ্যার একটি দেশ, যার সাক্ষরতার হার ৯২% এবং ৮৩% মানুষ মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষিত। শিশুদের ৯ বছর মেয়াদী বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. সি. ডব্লিউ. ডব্লিউ কান্নানগারা কর্তৃক ১৯৪৫ সালে প্রণীত অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা এ দেশের সাক্ষরতায় বিরাট অবদান রাখে। তিনি শ্রীলঙ্কার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে একটি করে মাধ্যমিক মহা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৯৪২ সালে বিশেষ শিক্ষা কমিটি একটি যোগ্য ও মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রস্তাব করে। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে গ্রেড ১ থেকে ১৩ পর্যন্ত পাঠদান ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত ও’লেভেল এবং এ’লেভেল পরীক্ষা যথাক্রমে ১১ এবং ১৩ গ্রেডে অনুষ্ঠিত হয়। বেশির ভাগ বিদ্যালয় ব্রিটিশ বিদ্যালয়ের ধাঁচে গড়ে তোলা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের পাশাপাশি অনেক আন্তর্জাতিক মানের বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। শ্রীলঙ্কায় প্রায় ১৬টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে কলোম্ব বিশ্ববিদ্যালয়, পেরাদেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জয়াবর্ধনপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, জাফনা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
শ্রীলঙ্কায় পরিবহন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত GM EMD G12 – ALBERTA লোকোমোটিভ
শ্রীলঙ্কার বেশির ভাগ শহরের মধ্যেই রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হয়েছে জাতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। ১৯৮৭ সালের ২৬শে এপ্রিল প্রথম রেলওয়ে লাইন স্থাপিত হয়েছিল কলম্বো ও ক্যান্ডির মধ্যে। শ্রীলঙ্কার মোট সড়কের পরিমাণ ১১,০০০কিমি (৬,৮৪০মাইল) যার বেশির ভাগই পাকা সড়ক। জাতীয় অর্থনীতিকে সচল রাখতে এবং দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে সরকার অনেক রাজপথ নির্মাণ করার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে কলম্বো-কতোনায়েক, কলম্বো-ক্যান্ডি, কলম্বো-পেডিনা এবং অন্যান্য শহরের মধ্যবর্তী সংযোগ সড়ক কলম্বোর যানজট কমানোর জন্য। ভারতের চেন্নাই ও জাফনার মধ্যবর্তী সংযোজ সেতু করার পরিকল্পনা সরকারের আছে। শ্রীলঙ্কার ৪৩০ কিমি অন্তবর্তী জল যোগাযোগ রয়েছে। শ্রীলঙ্কার ১২টি পাকা বিমান বন্দর এবং দুইটি সাধারণ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরন কেন্দ্র রয়েছে। দেশটি তার গভীর সমুন্দ্রবন্দরের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত তার মধ্যে কলম্বো, ত্রিকামেলি ও গালে অন্যতম।
ভাষা
সিংহলি এবং তামিল শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় ভাষা। শতকরা ১০ ভাগ লোক ইংরেজিতে সার্বক্ষণিক কথা বলে এবং শিক্ষা, গবেষণা ও ব্যবসায়িক কাজে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার অনেক বেশি। বার্ঘার সম্প্রদায়ের লোকজন পর্তুগিজ ও ডাচ ভাষা ভিন্ন উচ্চারণে বলে থাকে। অন্যদিকে মালয় সম্প্রদায়ের লোকজন মালয়ের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে থাকে। শ্রীলঙ্কার ৭০% মানুষ বৌদ্ধ, ১৫% হিন্দু ও ৭.৫% ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
মোঃ হাফিজুর রহমান
ভ্রমণকারী
মোবাইলঃ ০১৭১৩-৩৬৪৭৩১