অলোক রায় স্টাফ রিপোর্টার: মাগুরার মহম্মদপুরে ব্যাটারি চালিত নতুন ভ্যান পেয়ে উপজেলার সেই প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ শেখের মুখে হাসি ফুটেছে। সোমবার সকলের সহযোগিতায় ৬১ হাজার টাকা কেনায় ব্যাটারি চালিত নতুন একটি ভ্যান তার হাতে তুলে দেন মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনামে প্রতিবেদন ও ভিডিও প্রকাশিত হলে সাড়া পড়ে। “ভ্যান হারিয়ে দিশেহারা প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ”- ৩২ বছর বয়সী মোহাম্মদ শেখ। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে শারীরিক প্রতিবন্দ্বী এই মানুষটি ব্যাটারি চালিত ভ্যানগাড়ি চালিয়ে সংসার চালায়। কিন্তু আয়ের একমাত্র উৎস ছিল ভ্যান ,সেটি হারিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ে। একটি নতুন ভ্যান পেয়ে উপার্জন ফিরে পাবে বলে আনন্দে সে তার পরিবারের লোকজন খুশি বাধ যেন মানছে না।
মোহাম্মদ শেখ মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের বড়রিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা । সে ওই গ্রামের মৃত সিদ্দিক শেখের ছেলে।
মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ভ্যানটি মোহাম্মদ শেখের হাতে তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন, মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল, প্রধান শিক্ষক এ.কে.এম নাসিরুল ইসলাম, প্রেসক্লাব মহম্মদপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ বিপ্লব রেজা বিকো, সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুনবী, সিনিয়র সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন শাহীন, প্রেসক্লাবের সদস্য বৃন্দ সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
মোহাম্মদ শেখের বাড়ির কয়েক শতক জমি ছাড়া আর কোনো জমি নেই। স্ত্রী শুকুরন অন্যের বাড়িতে কাজ করে। প্রায় তিন বছর আগে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ করে ব্যাটারিচালিত একটি অটোভ্যান কেনে। অটোভ্যান চালিয়ে দিনে গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার উপার্জনের মাধ্যমে তার সংসার চলত। একমাস আগে রাতে বাড়ির বারান্দায় ভ্যানটি চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে সকালে দেখতে পান ভ্যানটি নেই । অনেক খোঁজাখুঁজির পরও ভ্যানটির সন্ধান মেলেনি। এতে সে পরিবার নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে।
২০০৭ সালে নারকেল গাছ থেকে পড়ে প্রতিবন্ধী হয় সে। কিন্তু কেনোদিন কারও কাছে হাত পাতেনি। শত কষ্টে নিজের আয় নিজেই করে। হুইল চেয়ারে চলাফেরা করলেও ব্যাটারি চালিত অটোভ্যান চালাতে পারে। ভ্যানটি চুরি হওয়ায় চরম দুর্দশার মধ্যে পড়ে।
নতুন অটোভ্যান কেনার মতো টাকাও নেই তার।
মোহাম্মদ শেখের মা আছিরন বলেন, ভ্যানটাই ছিল আমার ছেলের আয়ের সম্বল। ভ্যান নেই আয় নেই। সংসার চলত না। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছিল ভ্যান কেনার সামর্থ নেই তার। নতুন একটি ভ্যান পাবে কল্পনাও করতে পারে নি। ভ্যানটি পেয়ে সে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।এখন সে আবার আয় করতে পারবে। সংসারে সবার মুখে খাবার তুলে দিতে পারবে। নতুন চকচকে ভ্যান পেয়ে দারুণ খুশি।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ শেখ ভ্যানটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। সবার সহযোগিতা নিয়ে তার হাতে নতুন একটি ব্যাটারি চালিত অটো ভ্যান তুলে দিতে পারায় সবার সাথে তিনিও আনন্দ প্রকাশ করেছেন।