নিউ ইয়র্ক, চেন্নাই এবং গুয়াংজুসহ বিশে^র বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানে এয়ারবাসের নতুন ১০টি উড়োজাহাজ যুক্ত হলে রুট সম্প্রসারণ সহজ হবে এবং এতে করে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ফ্লাইট পরিচালনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে, এমনটিই জানিয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শফিউল আজিম। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, বিশে^র ১৯টি গন্তব্যস্থলে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ড্রিমলাইনারের মতো অত্যাধুনিক উড়োজাহাজসহ মোট ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে তাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে। ইউরোপের অন্যতম কোম্পানি এয়ারবাস থেকে নতুন করে আরও ১০টি উড়োজাহাজ ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আকাশপথে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বাড়াতে আগামী ১লা সেপ্টেম্বর জাপানের নারিতা এবং ১৪ই সেপ্টেম্বর চায়নায় গুয়াংজু রুটে পুনরায় ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় এই উড়োজাহাজ সংস্থাটি। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শফিউল আজিম দীর্ঘ আলাপচারিতায় মানবজমিনকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে চেন্নাই আমাদের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে। এ ছাড়া চায়নার গুয়াংজুর বন্ধ ফ্লাইটটি আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আমরা নতুন করে চালু করতে যাচ্ছি। পাশাপশি জাপানের নারিতা হয়ে অন্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং কোড শেয়ারিংয়ের চেষ্টা করছি।শুধু এশিয়া নয় পশ্চিমা দেশ বিশেষ করে ইউরোপেও আমাদের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা সম্প্রসারণের কাজ হাতে নিয়েছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে নিউ ইয়র্কে যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়টি রয়েছে সেজন্য বিমান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তার সকল কিছু ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে আমরা নিউ ইয়র্ক ফ্লাইটেও সরাসরি যেতে পারবো। এক্ষেত্রে সে সকল দেশগুলোর এয়ারলাইন্সের সঙ্গে আমাদের কোড শেয়ারিং সহ বিভিন্নভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমাদের সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি এবং তাদের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টের কিছু আনুষ্ঠানিক কাজ চলমান রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এই বছরের শেষের দিকে নতুন রুটে ফ্লাইটের কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। জনপ্রিয় রুটগুলোতে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়লে অন্য এয়ারলাইন্সগুলো বিমানের টিকিটের দাম কমাতে বাধ্য হবে এবং এতে করে সাধারণ মানুষের জন্য টিকিট ক্রয় সাধ্যের মধ্যে থাকবে। এখন প্রয়োজন সাহসী এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া।
শফিউল আজিম বলেন, জাপানের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খুবই ভালো। বাংলাদেশে তাদের ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে। জাপানের সঙ্গে আগে আমাদের সেভাবে কোনো নেটওয়ার্ক ছিল না। সেক্ষেত্রে এটাকে বাংলাদেশ বিমানের বড় একটি অর্জন বলতে চাই। এক সময় এই রুটে ফ্লাইট চলাচল থাকলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন নতুন করে চালুর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হয়েছে। আমাদের এখানকার ছাত্ররা জাপানে পড়তে যাচ্ছেন। জাপানের ব্যবসায়ীরা এখানে আসছেন। প্রতিবেশী দেশ থেকে অনেকেই জাপানে ভ্রমণ করে থাকেন। সুতরাং আমাদের সঙ্গে পশ্চিমে নেটওয়ার্ক আছে। ঢাকা থেকে পূর্ব দিকে ফ্লাইট নেটওয়ার্ক কম ছিল। এটার মধ্যদিয়ে আমাদের নতুন দিগন্ত চালু হলো। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কীভাবে সকলের থেকে নিজেদের আলাদা প্রমাণ করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাকে কোড শেয়ারিং বলে। এসপিএ বলে। একেকটি একেক ধরনের ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থায় একটি এয়ারলাইন্স আরেকটি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে পার্টনারশিপে কাজ করতে পারে। আমরা সেগুলোকেই ব্যবহার করছি।
এক্ষেত্রে আমার নিজের বিমান যাবে না। কিন্তু আমার বোডিং কার্ড যাবে। কিংবা আমার লভ্যাংশটা তার সঙ্গে শেয়ার করবো। সে আমার সঙ্গে শেয়ার করবে। অথবা তারা যে সকল স্থানে যায় না সেখানে আমরা যাবো। আমরা যেখানে যাচ্ছি না সেখানে তারা যাবে। তাহলে আমার যাত্রীর অপশন বা সুযোগ বেড়ে গেল। দুটি এয়ারলাইন্সের মধ্যে গুড আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং পার্টনারশিপে এটা হয়ে থাকে। বিমান বাংলাদেশ সম্প্রতি গালফ এয়ারের সঙ্গে পার্টনারশিপে কাজ শুরু করেছে। গালফ এয়ার বাংলাদেশ থেকে বাহরাইন পর্যন্ত আমাদের ফ্লাইট নেয়। কিন্তু গালফ এয়ার আমাদের যাত্রীদের নিয়ে যাবে বিমানের টিকিটে। আবার বাংলাদেশ থেকে যদি কেউ ইউরোপে যেতে চায় সেক্ষেত্রে গালফ এয়ার বাহরাইন হয়ে ইউরোপে চলে যাবে। আমার বিমান যেহেতু ইউরোপে যাচ্ছে না তাই আমার থেকে টিকিট কেটে এই সুবিধাটি নিয়ে ইউরোপে চলে যেতে পারবে। একইভাবে ইউরোপ থেকে যদি কেউ বাংলাদেশে আসতে চায় গালফ এয়ার তাদেরকে নিয়ে আসতে পারবে। যেহেতু বাংলাদেশ বিমানের ইউরোপে যাওয়ার সুযোগ নেই তাই প্রোফিট বা মুনাফাটা ভাগাভাগী হবে। তিনি আরও বলেন, বিমানের যাত্রীসেবার মান কীভাবে বাড়ানো যেতে পারে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। কেউ যদি অপরাধ করে থাকে সে বিষয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।