সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৩ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

বাবার কোলে মাথা রেখে মুনতাহারকে আর এভাবে বেড়ানো হবেনা

মোঃ শাহানুর আলম, স্টাফ রিপোর্টার
Update : শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৩, ৭:১৮ অপরাহ্ন

মোঃ শাহানুর আলম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ গত কয়েক দিন আগে সাড়ে ৯মাস বয়সী মেয়ে মুনতাহারকে নিয়ে মেট্রোরেলে ভ্রমন করার ছবি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে দিয়েছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মিনারুল ইসলাম। এর কয়েক দিনের মাথায় বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সেই ছোট্র মুনতারহার এবং স্ত্রীকে রেখে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।
গত ১৩ আগস্ট রাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মিনারুল ইসলাম মিনারের বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে, এতে মিনারুলসহ তার বাবা ফরমান মন্ডল (৭৫), মা খাদিজা বেগম (৬৫) এবং গ্যাস লাইনের মিস্ত্রি শরিফুল ইসলাম গুরতর অগ্নিদগ্ধ হয়। তাদের সকলকে উদ্ধার করে দ্রুত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটে ভর্তি করে। চিকিৎসা শুরু হলে ৯৫ভাগ দগ্ধ পিতা এবং তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। আইসিইউতে নেওয়ার আগে ১৪আগস্ট স্ত্রীকে আশ্বাস্ত করেছিল আমি ভাল আছি আমাকে নিয়ে চিন্তা করনা, আমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবো মেয়েকে দেখে রেখ। কিন্তু স্ত্রী’র কাছে দেওয়া আশ্বাস তিনি রাখতে পারলেন না ৪দিনের মাথায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়ে তিনি গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন এর দুদিন আগে ১৫আগস্ট ওই বার্ন ইনিস্টিটিউটেই মৃত্যুবরণ করেন বাবা ফরমান আলী মন্ডল। মা এখনো ওখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে। মিনারুল ইসলাম হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের লক্ষিপুর গ্রামের ফরমান আলী মন্ডলের ছেলে।
মাত্র ৯মাসের শিশু কন্যা মুনতাহার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর সমাপ্ত করা স্ত্রী সুরাইয়া খাতুনকে নিয়ে গাজীপুর বোর্ডবাজার এলাকার (মুক্তার বাড়ি ) থাকতেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কর্মকর্তা।
শুক্রবার (১৮আগস্ট) সকাল ১০টায় বাকচুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মিনারুলের জানাযায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে, ঝিনাইদহ এবং পার্শ্ববর্তি কুষ্টিয়া জেলা থেকে শত শত ছাত্র, শিক্ষক এবং রাজনৈতিক দলের শুভাকাঙ্খিরা তাকে এক নজর দেখতে আসে। তার জানাযায় অংশ গ্রহন করতে আসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্জের পক্ষে কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
জানাযায় বক্তব্য দেওয়া কালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, এতে হাজার হাজার মুসল্লী ও উপস্থিত জনতা অশ্রুশিক্ত হয়ে পড়েন। এছাড়াও তার সহকর্মী, বন্ধু, শুভাকাঙ্খি ও স্থানীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
বক্তব্য কালে সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, শুধু এই মিনারুলের জন্য আমি দলমত নির্বিশেষে ৩শ ছাত্রছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছি। মিনারুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬-০৭ শিক্ষা বর্ষে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোক্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি একজন ভাল সংগঠক ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ঝিনাইদহ ছাত্র কল্যাণ সমিতি গড়ে তোলেন এবং এই সমিতির মাধ্যমে ঝিনাইদহের শত শত হতদরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি এবং লেখাপড়ার খরচ চালাতে বৃত্তির ব্যবস্থা করতেন। ঝিনাইদহের সকল দানশীল ব্যক্তিদের এই সিমিতির সাথে সম্পৃক্ত করে প্রতিবছর ছাত্র ছাত্রীদের অর্থিক সহায়তা দিতেন। তিনি ছিলেন সকলের কাছে প্রিয় একটি মুখ। তার মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host