এদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধের দাবিতে ভারত-বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থল সীমান্ত পেট্টাপোলে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিজেপি। সোমবার দুপুরের পর পেট্টাপোল এলাকায় বিজেপি সমর্থকরা একত্রিত হতে থাকেন। সেখানে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। দুপুরের পর সেখানে বক্তব্য রাখবেন বিজেপি নেতা ও রাজ্যটির বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এই ঘটনায় সীমান্তে নিয়োজিত বিএসএফ বাড়তি সর্তকর্তা জারি করেছে। সীমান্তের জিরো পয়েন্টের কাছে কোনো বিক্ষোভকারীকে ঘেঁষতে দেয়া হচ্ছে না। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ছাড়াও রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকেও সীমান্তজুড়ে নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কাবস্থা।
মমতার এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, একটি বিশেষ গোষ্ঠি তাদের সর্বশক্তি দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তাদের এক্ষেত্রে শক্তি আমাদের চেয়ে বেশি। তবে আমরা সবাইকে বিষয়টি পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি।’
ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রধাননত ভারতীয় মিডিয়ায় অপপ্রচার চাালানো হচ্ছে। এর বাইরেও অনেক মিডিয়া ভারতীয় মিডিয়াকে উপজীব্য করে অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তবে আমরা বলতে চাই সব সরকারের আমলেই বছরে দুই-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। তবে সরকারের কাজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা সেটি করেছি। তবে দেশ ও দেশের বাইরে এ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।’
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে ভারতীয় মিডিয়াসহ সে দেশের রাজনীতিবিদরা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে যাচ্ছেন। ভারতীয় মিডিয়ায় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অপপ্রচারও চালানো হয়।
এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নানা সময়ে বক্তব্য দেয়া হয়েছে। ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের ঘটনায়ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার ও জামিন নাকচ করার বিষয়টি আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি। বাংলাদেশের হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলার পরে এ ঘটনা ঘটলো।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই ঘটনার অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও একজন ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ চাপানো হয়েছে; যিনি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে ন্যায্য দাবিগুলো উপস্থাপন করেছিলেন।হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
এর জবাবে পাল্টা বিবৃতি দেয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার উল্লেখ করেছে যে শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করার পর থেকে তার গ্রেফতারকে কিছু মহল ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে। বাংলাদেশ সরকার বলতে চায়, এই ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি শুধু সত্যকে বিকৃত করে না বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থি।’
এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটলেও তা নিয়ে তাদের সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে দেশটি অযাচিত উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ভারতের এই দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইস্যুতে অনধিকার চর্চা করছে ভারত। যা সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অন্যদিকে নিজ দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ভারতের বাংলাদেশ নিয়ে মাথাব্যথা কেন–এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও।
শেখ হাসিনার পতন ভারত হজম করতে পারছে না মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনে তাদের (ভারতের) অন্তরে ভয়ংকর অনল দহন। এর কারণ অতিমাত্রায় দাদাগিরি করার ফলে ভারতের সঙ্গে তার প্রত্যেক প্রতিবেশীর সম্পর্ক তলানিতে। শুধু হাসিনার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিল বাংলাদেশের ওপর। ভারত বাংলাদেশকে আশ্রিত রাজ্যের মতো বিবেচনা করত। সেই আশ্রিত রাজ্য হাত ফসকে গেছে।’তিনি বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর হাসিনাকে সামনে রেখে ভারত বাংলাদেশকে কার্যত দখল করে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। এখন বাংলাদেশকে আবার কীভাবে তাদের করতলে নেয়া যায়, সেই লক্ষ্যেই তারা নীলনকশা করছে।’