সনতচক্রবর্ত্তীঃ বর্ষার কদম-কেয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুটতে শুরু করে চালতার ফুল। এ ফুল সাদা রঙের। সুরভিত এই ফুলের ব্যাস ১৫ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার। ফুলে পাঁচটি মোটা পাপড়ি থাকে; বৃতিগুলো পাপড়িকে ঘিরে রাখে। পাপড়ির শুভ্রতা, হলুদ পরাগ ও তারকাবৃত্তির গর্ভদন্ড চালতা ফুলের মোহনীয় রূপ প্রকৃতিজুড়ে ঝিলিক তুলেছে। এতে মুগ্ধ সৌন্দর্যপিপাসুরাও। কদমের পরে বর্ষাকে চেনা যায় চালতা ফুলে। চালতা ফুল খুবই ক্ষণস্থায়ী। ভোরবেলাতে ফোটা ফুলের পাপড়ি সন্ধ্যায় ঝরে পড়ে। তাই চালতা ফুলের প্রকৃত রূপ দেখতে হলে দুপুর হওয়ার আগেই দেখতে হবে। তাই হঠাৎ এ ফুলের দেখা পাওয়া অনেকটা আবিষ্কারের মতোই।
চালতায় রয়েছে নানা খাদ্যগুণ। যেমন-
১.চালতা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’-এর ভালো উত্স।
২.প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এই ফল স্কার্ভি ও লিভারের রোগ প্রতিরোধ করে।
৩.চালতায় রয়েছে বিশেষ ধরনের কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা জরায়ু ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
৪.চালতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ যা বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৫.চালতায় উপস্থিত আয়রন রক্তের লোহিতকণিকার কার্যক্রমে সহায়তা করে। রক্তের সংবহন ঠিক রাখে। চালতার বিভিন্ন উপাদান হার্টের নানা রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
৬.চালতা পেটের নানা অসুখ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ডায়রিয়া সারাতে কাঁচা চালতার রসের তুলনা নেই।
৭.রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে চালতা।
৮.ঠাণ্ডা ও কাশির জন্য পাকা চালতার রস চিনি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৯.কিডনীর নানা রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে চালতা।
১০. অন্ত্রে বাসা বাঁধা কৃমির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চালতা অসাধারণ ক্ষমতা রাখে।
১১. পাকস্থলিতে যাদের আলসার আছে, তাদের জন্য উপযুক্ত ওষুধ হতে পারে চালতা।
১২.শুধু ফল নয়, চালতার মূল ও পাতারও রয়েছে ঔষধিগুণ। মচকে গিয়ে ব্যথা পেলে সেখানে চালতা গাছের মূল ও পাতা পিষে প্রলেপ দিলে ব্যথা কমে যায়।
শুধু খাদ্য হিসেবে নয়, রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও রয়েছে চালতার ব্যবহার। যেমন –
১৩.কাঁচা চালতার জলে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় নিয়মিত লাগালে চুল পড়া কমে যায়।
১৪.কাঁচা চালতার রসের সাথে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে সপ্তাহে দুবার চুলের গোড়ায় লাগালে খুশকি দূর হয়ে যাবে।
১৫.চালতার রসের সাথে চালের গুঁড়া মিশিয়ে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করলে মরাকোষ পরিষ্কারের পাশাপাশি ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল ও কোমল।
এর আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বৈজ্ঞানিক নাম Dillenia indica। শ্রীলঙ্কা, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কিছু দেশে চালতা জন্মে। ইংরেজিতে Elephant Apple নামে পরিচিত। বিশেষত এটি ভারতবর্ষীয় উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত।গাছ উচ্চতায় প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত হয়। শাখা-প্রশাখা অবিন্যস্ত ও প্রসারিত। সবুজ পাতা খাঁজকাটা ধরনের। আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে গাছটির দেখা মেলে। গাছটি থেকে শক্ত কাঠ হয়। এছাড়াও নৌকা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় চালতার কাঠ।
ফরিদপুর জেলার বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে ঘুরে দেখা যায় চালতে গাছের ডালে ডালে ছেয়ে গেছে ফুলে ফুলে । আর তার অপরূপ দৃশ্যে মুগ্ধ করছে সবাইকে।চালতে ফুলের এই সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে শিশুরা তাদের খেলার অনুষঙ্গ হিসেবে বেছে নিয়েছে এই ফুলকে।
সোমা,সরলা, নামে এক দুই নববধূ বলেন ,চালতে ফুল জানিয়ে দেয় বর্ষাকালের রুপ । আমরা এই ফুল দিয়ে চুলের খোপায় পড়েছি। তাই প্রকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এই বৃক্ষ লাগানো প্রয়োজন । তা না হলে আগমী প্রজন্ম
এ বৃক্ষ অপরূপ দৃশ্যে মুগ্ধ থেকে বঞ্চিত হবে।