মোঃ আনোয়ার হোসেন আকুঞ্জী,খুলনা॥ আধুনিক প্রগতির যুগে নারীরাও আর ঘরে বসে নেই। পুরুষের পাশাপাশি তারাও হয়ে উঠছে আত্মকর্মী। স্বাবলম্বীতার মাধ্যমে আর্থিক উপার্জন করে সহযোগিতা করছে স্বামীর সংসারে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কানাইডাঙ্গা গ্রামের অভিজাত বিশ্বাসের স্ত্রী অনন্যা তার অনন্য উদাহরণ। তিনি বাড়ির পাশে পুকুরে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। অনন্যার পুকুরে মাছ দেখে জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ক্লাস্টারের চাষীরা সন্তোষ প্রতাশ করেছেন।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভা-ারপাড়া ইউনিয়ের কানাইডাঙ্গা গ্রামের অনন্যা বিশ্বাস তার স্বামীর সহায়তায় বাড়ির ২৫ শতাংশ একটি পুকুরে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে লোনা পানিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি নদী থেকে লোনা পানি উঠিয়ে ভালোভাবে প্রসেসিং করে হ্যাচারী থেকে সেখানে ২৫ হাজার বাগদার পোনা ছাড়েন। মাত্র সাড়ে ৩ মাসে ঐ পুকুরে ২৩ মণ বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে।
নারী মাছ চাষী অনন্যা জানায়; আমরা আগে মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ করতাম। কিন্তু এতে তেমন লাভ হতো না। তাই কয়েক বছর যাবৎ বাগদা চিংড়ির চাষ করছি। রুটিন অনুযায়ী পানির কোয়ালিটি দেখে সবকিছু প্রয়োগ করি। কোন ত্রুটি হলে স্বামীকে জানাই। আমরা আর্থিকভাবে এখন অনেকটা স্বাবলম্বী হয়েছি।
অনন্যার স্বামী অভিজিত বিশ্বাস জানান; উন্নত পদ্ধতিতে বাগদা চাষ করে অল্প জমিতে বেশি লাভ করা সম্ভব হয়েছে। পাশে একজনের এই চাষ পদ্ধতি দেখে ২৫ শতাংশের পুকুরে ২৫ হাজার বাগদা চাষ করা হয়। ১২২ দিনের মাথায় মাছ ধরা হয়েছে। ২২ পিচ চিংড়ি ১ কেজি ওজন হয়েছে। সব মিলে প্রায় ২৩ মণ বাগদা উৎপাদন হয়েছে। সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ এবং বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ সাড়ে ৩ মাসে লাভ হয়েছে ৩ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন; আধা নিবিড় পদ্ধতিতে অল্প জমিতে অধিক মাছ চাষ করে যে লাভবান হওয়া সম্ভব তা একজন নারী মাছ চাষী অনন্যা দেখিয়ে দিয়েছেন। ডুমুরিয়ায় ২২ জন একক চাষী আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করছেন। উন্নত পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করলে অর্থনীতিতে দেশে একটা বিপ্লব সাধিত হবে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলায় ১৮টি ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট করা হয়েছে। সেখানেও আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হচ্ছে। এরমধ্যে ৭টি ক্লাস্টারে প্রায় ২ কোটি টাকা অফেরতযোগ্য অনুদান দিয়েছে সরকার। চিংড়ি খাতকে এগিয়ে নিতে সরকার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন; চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে চাষিদেরকে উদ্বুদ্ধ এবং কারিগরিভাবে সকল প্রশিক্ষন দিচ্ছে মৎস্য দপ্তর। চাষি যাতে রোগমুক্ত পোনা পায় সেজন্য এসপিএস হ্যাচারি পোনা পরীক্ষা করে চাষিদেরকে সরবরাহ করা হচ্ছে। তাছাড়া উন্নত এবং মানসম্মত ভেজালমুক্ত খাদ্য প্রয়োগের মাধ্যমে যাতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় সে জন্য নিয়োমিত প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।