বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

নতুন গুড়ের ঘ্রাণে গাছিরা ভুলে যান তার ঘাম ঝরানো কষ্ট

মোঃ শাহানুর আলম, স্টাফ রিপোর্টার
Update : বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৫:৪৮ অপরাহ্ন

মোঃ শাহানুর আলম, ঝিনাইদহঃ গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস, গুড় আর তা দিয়ে বানানো পায়েস ও নানা ধরনের পিঠা পুলি। গাছ কেটে একফোটা রস বের করতে যে ঘাম ঝরে তার মূল্য সহজে উঠে না। কিন্তু রস জ্বালিয়ে গুড় হলেই তার ঘ্রাণে কৃষক ভুলে যায় সেই ঘামের কষ্ট। নতুন প্রজন্মের কৃষকরা কষ্টের কারণে খেজুর গাছ কাটতে চায়না ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুরের রস। তবে এলাকায় ব্যাপক চাহিদা থাকায় বয়স্ক গাছিরা এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে। প্রতি বছর শীত মৌসুমেই দেখা মেলে এই খেজুর রসের পায়েস আর পিঠা- পুলির।
তাই এখন ভরা মৌসুমে খেজুরের রস পেতে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহের গাছিরা।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চটকাবাড়িয়া গ্রামে, খেজুরের রস আহরণ শুরু করেছেন ৬৫ বছর বয়সের কৃষক মন্টু মিয়া। তিনি নিয়মিতভাবে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।


সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ খেজুরগাছ। জমির আইলে ও পতিত জায়গায়ও রয়েছে অসংখ্য খেজুর গাছ। বিশেষ করে উপজেলার তাহেরহুদা, বোয়ালিয়া, বিরামপুর,শীতলী, ভাতুড়িয়া, কেষ্টপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা মেলে এ দৃশ্য। গাছিরা প্রথমে গাছের মাথা থেকে ডালপালা কেটে পরিষ্কার করেন। পরে নির্দিষ্ট স্থান হালকা করে কেটে পরিষ্কার করেন। এর কিছুদিন বিরতির পর গাছের পরিস্কার করা অংশ শুকিয়ে নিয়ে আবার কয়েক দফায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছেঁটে ফেলা হয় গাছের ছাল। গাছ কাটার এ কাজে গাছিরা ধারাল অস্ত্র ব্যবহার করেন। গাছ কাটার সময় খেজুর গাছের সঙ্গে নিজেদের শক্তভাবে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেন তারা। তাদের কোমরে থাকে বাশেঁর তৈরী ঠোঁঙ্গা (স্থানীয় ভাষায়) যার ভেতর থাকে গাছ পরিষ্কার করার দাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। গাছ তৈরির প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর থেকেই মূলত রস নামানোর পর্বটা শুরু হয়।
এরপর গাছের মাথার নির্দিষ্ট স্থানে পাত্রের ভেতর রস পড়ার জন্য বাঁশের তৈরী একটি নলি ও দুপাশে দু’টি চোখা বা খুঁটি পোতা হয় যার সাথে রস সংগ্রহের পাত্র ঝুলিয়ে রাখা হয়। এভাবেই গাছির নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে খেজুরের রস।
তারা আরও জানান, সপ্তাহের নির্ধারিত দিন বিকেলে গাছের মাথা হালকা ভাবে ছেঁটে নির্ধারিত স্থানে মাটির পাত্র ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন ভোরে গাছ থেকে পাত্র নামিয়ে আনা হয়। গাছভেদে দু’থেকে চার কেজি হারে রস পাওয়া যায়, যা থেকে এক থেকে দেড় কেজি গুড় হয়। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন পরপর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। রস জ্বালিয়ে গুড় বানাতেও কৃষকদের ভোগান্তি কম নয়। কারণ খেজুর গাছের ডাল ও অন্যান্য খড়ি সংগ্রহ করে এ রস থেকে গুড় বানাতে হয়। কাঁচা রস ২কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় এবং এক কেজি গুড় বাজারে বর্তমান ২৫০ থেকে ৩০০টাকায় বিক্রি হয়। অসৎ ব্যবসায়ীরা অনেক সময় রসের মধ্যে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরী করে। ভাল গাছিরা এগুলো করেনা, এই দাম কম হলেও গাছিরা সন্তষ্টচিত্তে প্রতিদিন তাদের গাছ পরিচর্যা ও রস সংগ্রহে ব্যস্ত থাকেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host