খুলনা প্রতিনিধিঃ সুন্দর ভৌত অবকাঠামো তবুও চিকিৎসক সংকটে মেলে না বহু রোগের চিকিৎসা। টেকনিশিয়নের অভাবে প্রায়ই অচল প্যাথলজি বিভাগ। ড্রাইভারের পদ শূন্য থাকায় চলে না অ্যাম্বুলেন্স। এছাড়া র্যাম্প না থকায় ভবণের সিড়িঁ ভেঙে স্ট্রেচারে (ঝোলা) মূমূর্ষ রোগী উপরে তুলতে হয়। এমন বেহাল অবস্থায় প্রতিনিয়ত ধুঁকছে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা মেলাতে রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে।
সরেজমিনে গিয়ে একাধিক রোগী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তম ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের বসবাস। এদের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা ডুমুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কাগজে-কলমে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শয্যা সংখ্যা ৫০। আর এ হাসপাতালে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নেয় ৬/৭ শত রোগী। ভর্তি রোগী থাকে প্রতিদিন গড়ে ৪০-৪৫ জন। এ সব রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতালে সরকারি মঞ্জুরকৃত পদ রয়েছে ২৬৮টি। যার মধ্যে চিকিৎসকসহ প্রথম শ্রেণিতে রয়েছে ৩৯টি পদ। কিন্তু এরমধ্যে অর্থোপেডিক্স, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজি, চক্ষু, ইএনটি, ইউএইচসিসহ ১৭টি পদই শূন্য।
এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩০, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৮০টি ও চতুর্থ শ্রেণিতে ১৯টি অর্থ্যৎ মোট ২৬৮ মঞ্জুরকৃত পদের মধ্যে প্রথম ণেীতে শূন্য রয়েছে ১৭টি, তৃতীয় শ্রেণিতে ৬৪টি এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ১০টি অর্থ্যাৎ ৯১টি পদ শূন্য রয়েছে। ফলে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সময় কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়েই বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীদের ফিরে যেতে হয়। অধিক সংখ্যক মানুষকে চিকিৎসা নিতে শহরমুখী হতে হয়। ইতোপূর্বে হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থাকলেও সম্প্রতি ৫০ শয্যায় উন্নতি হয়েছে। ফলে রোগীর ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে ৮ কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ৫১০ টাকা খরচ করে তিনতলা বিশিষ্ট ভবণ নির্মিত হয়। ভবণের নিচ তলায় বহিঃবিভাগ, দ্বিতীয় তলায় প্যাথলজি বিভাগ ও অফিস এবং তৃতীয় তলায় শিশু, নারী ও পুরুষ ওয়ার্ড। চলতি বছর জানুয়ারিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভবনটি বুঝে পেয়েই সেখানেই সকল সেবা প্রদান কার্যক্রম শুরু করছে। অথচ ভবনে রোগী উপরে তুলে নিতে কোন র্যাম্প নেই। ফলে হাতে অথবা স্ট্রেচারে (ঝোলা) উপরের তলাগুলোতে তুলতে হচ্ছে। এতে রোগী ও রোগীর স্বজনদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এমনকি রোগী দেখতে আসা অনেক স্বজনরাও সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপজেলার সাহস ইউনিয়নে কুখিয়া গ্রাম থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন ষাটোর্ধ্ব আব্বাস মুন্সী। তিনি জানান, হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে আল্ট্রাসোনো ও এক্সরে পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালে এসব টেস্ট এখন আর করা হচ্ছে না জানিয়েছেন প্যাথলজি বিভাগ। তাই বাধ্য হয়ে বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করতে হচ্ছে।
গত পহেলা আগষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বামুন্দিয়া গ্রামের মোঃ আফসার আলী শেখ। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে মৃতদেহ বাড়ি নিতে চেষ্টা করেন তার স্বজনরা। কিন্তু হাসপাতাল থেকে সাফ জানানো হয় ড্রাইভারের পদ দীর্ঘদিন শূন্য ফলে চালক না থাকায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ডুমুরিয়ার শোভনা গ্রাম থেকে মূমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন আজিদা বেগম (৪৫), রানাই গ্রামের মেহরাব আলীসহ অনেকেই। তারা জানান, হাসপাতালে আসলে রোগীকে ভর্তি দেওয়া হয়। কিন্তু রোগীর সাথে একা থাকায় তিনতলা নারী ওয়ার্ডে রোগী নিতে ভয়াবহ বেগ পেতে হয় তাদের। সকালে হাসপাতালে লোকজনও ছিল না। তাই কোলে করে উপরে নিয়েছেন তারা।
হাসাপাতালের ওয়ার্ডবয় মিরাজুল ইসলাম জানান, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা রোগ নিয়ে মূমূর্ষ রোগী আসেন প্রতিনিয়িত। কিন্তু র্যাম্প না থাকায় উপরে নিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আবার সিড়িঁ সংকীর্ণ থাকায় অনেক সময় স্ট্রেচার বাঁক গুলোতে বেঁধে যায় এবং পড়েও যেতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুনিয়র কনসাল্টসেন্ট ডাঃ আরাফাত মাহমুদ বলেন, জনবল সংকটে সঠিক সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া ডাক্তার, টেকনিশিয়ান ও অ্যাম্বুলেন্স চালক এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে জনবল দেওয়া জরুরী।
এ প্রসঙ্গে খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সোহেল বলেন, নকশায় র্যাম্প ছিল না। তবে লিফট-এর জায়গা রাখা আছে। কিন্তু অন্তত ৫তলা ভবন না হলে লিফট অনুমোদন হয় না। তবে বিকল্প কোন পথ খুঁজতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।