বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৪০ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

গ্রাম থেকে শহরে সোনামুখ স্বপ্নচারা ফাউন্ডেশন

Reporter Name
Update : বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫, ১২:২৭ অপরাহ্ন
Oplus_131072

এবিডি নোমান।। সোনামুখ পরিবারের সাথে আমার যাত্রা শুরু ২০২১ সালের পহেলা মে থেকে। সোনামুখ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা জনাব এ এম কামরুল ইসলাম আঙ্কেলের সাথে আমার পূর্বে কোনো পরিচয় ছিল না। পরিচিতি করিয়েছিলেন আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শিক্ষাবিদ ডক্টর আনোয়ার এইচ জোয়ার্দার এবং নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির শ্রদ্ধেয় রেজিস্ট্রার ড. শাহ আলম স্যার। সোনামুখ পরিবারের সাথে যুক্ত হওয়ার  বিরাট লম্বা কাহিনী আছে।

মূল কথায় আসা যাক।
পহেলা মে ২০২১ সালে আমাকে সোনামুখ পরিবার শহর শাখার মুখপাত্র  এবং সোনামুখ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব ছয় মাসের জন্য দেয়া হয়।

ভয়াবহ করোনার প্রকোপে বাংলাদেশ সহ সারাবিশ্ব যখন দিশেহারা তখন দায়িত্ব পাবার পরপরই এ এম কামরুল ইসলাম আঙ্কেল ঢাকা থেকে আমাকে ফোন করে প্রফেসর জগলুল কাদের স্যারের সাথে দেখা করতে বলেন। আমি যথারীতি যোগাযোগ করে জানতে পারলাম খুলনা শহরের ১ হাজার ঘরবন্দী মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে যারা মূলত কারো কাছে সহায়তা চাইতে পারে না।

অনলাইন বিজ্ঞাপন প্রচারের পর প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬০০ পরিবারকে তাদের পরিবারের কাছে ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেয়া হয়। এই কাজটি করোনার সময়ে আমার জন্য ভীষণ পীড়াদায়ক ছিলো। মানুষের উপকার হবে ভেবে আমি নিজে ও সহকর্মীরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। ৬০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার পর ঠিক ১০ থেকে ১৫ দিন পর আরও ৪০০ পরিবারের খাদ্য সহায়তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম।

এই বিশাল কাজের মাধ্যমে সোনামুখ পরিবারের সাথে আমার বিশ্বস্থতা বৃদ্ধি পায়। এরপর একে একে চলতে থাকে সামাজিক কর্মকাণ্ড। ইতিমধ্যে সোনামুখ পরিবারের অফিস দৌলতপুর বিএল কলেজ রোড হতে বয়রা বাজার পাবলিক কলেজের পূর্ব পাশে স্থানান্তর করা হয়।

সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো- অসহায় নারীদের ফ্রি মেডিকেল সেবা, প্রত্যেক ঈদে অসহায় পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার, শীতবস্ত্র প্রদান করা এবং এই কাজগুলো প্রতিবছর নিয়মিতভাবে চলতে থাকে।

বিদেশ থেকে সর্বোস্ব হারিয়ে ফেরত আসা নরনারীকে ফ্রী কাউন্সিলিং এবং তাদেরকে পুনরায় নিজ নিজ এলাকায় কর্মক্ষম করে তোলার উদ্দেশ্য চলে সোনামুখ পরিবারের নিরলস প্রচেষ্টা যার পুরো দায়িত্ব ছিলো আমার কাঁধে।

সবচেয়ে ব্যাতিক্রম ধর্মী কাজ ছিলো ২০২৩ সালে ১২৩ জন শিশুকে ডিভাইস পদ্ধতিতে ফ্রী সুন্নাতে খাৎনা প্রদান করা। আর সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট যেটি সম্পন্ন করি সেটি হলো দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন উপকূলে কালাবগীতে ১৫ লক্ষ টাকা ব্যায়ে একটি মসজিদ  নির্মাণ ও মিঠা পানির পুকুর খনন করা।
এই ১৫ লক্ষ টাকা আমি নিজ হাতে খরচ করি এবং মালামাল ক্রয় থেকে শুরু করে নদীপথে ট্রলারে  মালামাল পৌঁছানো পর্যন্ত সকল তদারকি করি। এই কাজটিই আমার এই স্বল্প জীবনের একটি অন্যতম স্মরণীয় কাজ হয়ে থাকবে।

সোনামুখ মসজিদ নির্মানে অর্থায়নে যারা সহযোগিতা করেছিলেনঃ

১. এস এম ফারুকি হাসান ,প্রতিক গ্রুপ, ঢাকা- ৭,০০,০০০/-
২. মিস্টার হাসিবুর রহমান, একমী গ্রুপ, ঢাকা- ৪,০০,০০০/-
৩. মি. জোনাইদ, ইপিলিয়ান গ্রুপ, ঢাকা- ১,০০,০০০/-
৪. ড. আনজির আজাদ, হংকং- ১০,০০০/-
৫. প্রফেসর জগলুল কাদের, খুলনা -১০,০০০/-
৬. ফাতেমা তুজ জোহরা, ডুমুরিয়া- ৬,০০০/-
৭. মাওলানা কামরুজ্জামান, মধুগ্রাম, ডুমুরিয়া- ৫,০০০/-
৮. ফাইজা হোসেন অন্বেষা,খুলনা-৫০০০/-
৯. সাবেরা ইমরোজ নীলা ,সোনামুখ পরিবার, খুলনা- ২,০০০/-
১০. এস এম কামরুল ইসলাম, খুলনা -৩,০০০/-
১১. জনাব আসলাম হয়দার, ঢাকা- ১০০০/-
১২. আব্দুল আহাদ, ইবনে সিনা, ঢাকা- ৬০০/-
১৩. মৌসুমি আক্তার ,খুলনা -২০০/-

সোনামুখ পরিবারের সকল সেবামূলক কাজ এখনও চলমান। সোনামুখ শহর শাখার সকল কাজের দায়িত্ব এখনো পালন করে চলছি। এখানে চলছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ড্রেস মেকিং ও টেইলারিং, স্পোকেন ইংলিশ ইত্যাদি কার্যক্রম। 

সোনামুখ শহর শাখার অফিস পরিদর্শন করে যেসকল সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ আমাদেরকে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তারা হলেন-
১.অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক জোয়ার্দ্দার,
২. অধ্যাপক মাজহারুল হান্নান,
৩.অধ্যাপক ড. সন্দীপক মল্লিক,
৪. অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার বিভূতি রায়,
৫. অধ্যাপক আব্দুল মান্নান,
৬. অধ্যাপক আনিসুর রহমান,
৭.অধ্যাপক বদিউজ্জামান,
৮.অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আক্তার,
৯.অধ্যাপক হাফিজুর রহমান,
১০.অধ্যাপক জগলুল কাদের,
১১.জর্মান প্রবাসী আনজাম মালিক,
১২. অধ্যাপক ড. বিশ্বাস শাহীন আহমেদ,
১৩. অধ্যাপক আব্দুল করিম,
১৪.অধ্যাপক ড. আ খ ম রেজাউল করিম,
১৫.অধ্যাপক ড. শাহ আলম ও মিসেস শাহ আলম
১৬.কর্ণেল ফয়সাল কাদের  ১৭. বাশারুল কাদের
১৮. বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ
১৮.বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদ
২০.কিংবদন্তি ফুটবলার শেখ মোহাম্মাদ আসলাম
২১.ভিকারুননূন নিসা স্কুলের শিক্ষক মোনা মারজান
২২.বাহাউদ্দীন আহমেদ
সহ প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গ।

সোনামুখ স্বপ্নচারা ফাউন্ডেশন:

২০২২ সালের শীতের বিকেল।হঠাৎ করে ফোনের স্ক্রীনে এ এম কামরুল ইসলাম আঙ্কেলের নাম ভেসে উঠলো। আঙ্কেল জানালেন কিছু উদার মনের মানুষ মোটা অংকের কিছু আর্থিক সহায়তা করতে চান। এই দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে।

প্রাথমিক অবস্থায় আঙ্কেল এই প্রকল্পের নাম নির্ধারণ করে বিশিষ্ট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ফেরদৌস রশিদী আঙ্কেলের দেওয়া ৪০,০০০/- টাকা খালিশপুর এলাকায় পাঁচজন নারীদের ৫ টি সেলাই মেশিন ক্রয় করে দেওয়ার মধ্যে এই প্রজেক্টের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।

শর্ত সাপেক্ষে যখন সেলাই মেশিন ক্রয় করে দেওয়ার টাকা ফেরত আসতে থাকে তখন আমার এই ধারাবাহিক সফলতা এ এম কামরুল ইসলাম  আঙ্কেল পর্যবেক্ষণ করে আন্দুলিয়াতে নিজ গ্রামে মুজাহিদ ভাইকে দিয়ে একই পদ্ধতিতে শুরু করান।

সোনামুখ স্বপ্নচারা ফাউন্ডেশন শহর এলাকায় আমি পরিচালনা করতে থাকি এবং এ এম কামরুল ইসলাম আঙ্কেলের নিজ গ্রামে মুজাহিদ ভাই। আমাদের সফলতা এবং সেবাগ্রহীতাদের সততায় ডোনারগণ ধীরে ধীরে টাকার পরিমাণও বাড়িয়ে দিতে থাকে। সোনামুখ স্বপ্নচারা ফাউন্ডেশনে মোট ৪,৭৩,০০০/- টাকার রোলিং হতে থাকে। এই অর্থের মধ্যে ২৮,০০০০/- টাকা ফেরদৌস আংকেল এবং ১,৯৩,০০০/- কামরুল আঙ্কেল প্রদান করে আমাদের  বিভিন্ন উপকার ভোগীর পাশে থাকেন।

উক্ত টাকা দিয়ে ৩৯টি সেলাই মেশিন বেকার নারীদের মাঝে প্রদান করা হয়। সপ্তাহে ৪০০/-টাকা করে সেবা গ্রহীতারা টাকা ফেরত প্রদান করেন এবং উক্ত টাকা তাদের উর্পাজনের একটি অংশ এবং সেলাই মেশিনের টাকা পুরোপুরি শোধ করে তারা সেলাই মেশিনের মালিক হয়ে যান।

বেকার নারীদের সেলাই মেশিন দিয়ে সাবলম্বী করার পাশাপাশি বিভিন্ন রেফারেন্সে বেকার যুবকদের নগদ অর্থ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার জন্য ফেরতযোগ্য অর্থ সহায়তা শুরু করলাম। সবাইকে বিনা সুদে ফেরত দেওয়ার শর্তে অর্থ সহায়তা শুরু হলো। একে একে ২২ জন ইজিবাইক, রিক্সা ও ক্ষুদ্র ব্যবসা করার জন্য সোনামুখ স্বপ্নচারা ফাউন্ডেশন (শহর শাখা) থেকে অর্থ সহায়তা নিয়ে ২২ জন সাবলম্বী হয়েছেন এবং এই  রোলিংকৃত টাকা প্রায় ১২ লক্ষ ৮৮ হাজার। কয়েক জন বাদে প্রায় সবাই টাকা প্রদান করে বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েছেন। সেই ৪০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হওয়া সোনামুখ শহর শাখা এবং আন্দুলিয়া গ্রামে যথাক্রমে ৬১ জন এবং ৩৯ জন উপকৃত হয়েছে ৪,৭৩,০০০ টাকা প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোলিং হয়। আজ সবাই সাবলম্বী এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালো আছে। এসব সম্ভব হয়েছে মহান করুণাময়ের কৃপায়। এ এম কামরুল ইসলাম আঙ্কেলের অনুপ্রেরণায় এবং আর্থিক সহযোগিতায়। বিশেষ কৃতজ্ঞ ফেরদৌস রশিদী আঙ্কেলের কাছে।

দায়িত্বরত অবস্থায় আমার অভিজ্ঞতাঃ

১। আমরা সবসময় গরীবদেরকে এড়িয়ে চলার ব্যাপারটা উপেক্ষা করেছি।সবাই তেল ওয়ালা মাথায় তেল দিতে পছন্দ করে,  সোনামুখ স্বপ্নচারা ফাউন্ডেশন ছিলো স্রোতের বিপরীত।

২।পুরুষদের চেয়ে নারী সুবিধাভোগীরা বেশি বিশ্বস্থ।৩৯ জনের সবাই সেলাই মেশিনের টাকা উপার্জন করে ফেরত দিয়েছে। সবার ফেরত দেয়া টাকা সবার মাঝে ছড়িয়ে গিয়েছে।

৩।একটুখানি সহযোগিতা পারে দীর্ঘস্থায়ী উপার্জনের অবলম্বন হতে। গরিব বলে অবিশ্বাস না করে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে পাশে দাঁড়ালে গরীব মানুষগুলো বিশ্বাসের মর্যাদা রাখে।

৪। যাদেরকে ব্যবসার জন্য ইজিবাইক, ভ্যান ক্রয়ের টাকা প্রদান করেছিলাম তাদের মধ্য থেকে প্রায় ৯৮ শতাংশ টাকা ফেরত দিয়েছেন।

৫। তবে  যারা বেশী বিশ্বস্ততার সুযোগ গ্রহণ করেছে এবং কিছু কিছু সময় টাকা মাফ করিয়ে নিয়েছে।

৬।  শহর এলাকায় জামিনদাররা প্রভাবশালী হওয়াতে টাকা মেরে খাওয়ার সুযোগ হয়নি।

৭।সেবাগ্রহীতারা বেশিরভাগ সময় সোনামুখ পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে পরিচিত বলেই টাকা ফেরত পাওয়া সহজ হয়েছে।

এসব কাজ করে আমি সন্তুষ্ট। কারণ আমার নিজের টাকায় এত মানুষকে উপকার করা আমার পক্ষে কখনো সম্ভব ছিল না সোনামুখ পরিবার এবং সোনামুখ স্বপ্ন চারা ফাউন্ডেশনে কাজ করে মানুষের রুটি রুজির কারণ হতে পেরে আমি গর্বিত।

লেখকঃ
পরিচালক
সোনামুখ পরিবার, খুলনা শহর শাখা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Theme Created By Uttoron Host