বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম
মাদারীপুরে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত ঢাকায় মেট্রো বন্ধ যারা এখনও যোগ দেননি, তাদের আর সুযোগ নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পিরোজপুরে আসন্ন দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে -ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ( অবসরপ্রাপ্ত) শামীম কামাল পিপলুর আগমন উপলক্ষে প্রস্তুতি মূলক আলোচনা সভা পিরোজপুরে ওয়ার্ল্ড ভিশন এর গ্লোবাল ক্যাম্পেইন ENOUGH প্রচারাভিযান উদ্বোধন কয়রায় দুর্নীতি বিরোধী মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ঝিনাইদহে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিক্ষোভ মিছিল মানববন্ধন ও সমাবেশ ঝিনাইদহে পুলিশের এক এসআইসহ ৩ জনকে বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিলসহ আটক করেছে র‌্যাব বাংলাদেশ প্রেসক্লাব আদিতমারী উপজেলা শাখা ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

গুডবাই আমেরিকা, হ্যালো চীন?

Reporter Name
Update : রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩, ৬:২৮ অপরাহ্ন

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব-প্রতিপত্তি ক্রমেই কমছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ৬ থেকে ৮ জুন সৌদি আরবে তিন দিনের সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তবে এবারের এই সফরের মধ্যদিয়ে সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ‘কৌশলগত সহযোগিতা’ এগিয়ে নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে পারে।গত বছরের জুলাইয়ে উপসাগরীয় দেশগুলোর জোট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে সময় বাইডেন ঘোষণা দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরে গিয়ে এমন শূন্যতা তৈরি করবে না, যার সুযোগ নেবে চীন, রাশিয়া বা ইরান।

কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেনের ঘোষণার ঠিক উল্টোটাই ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে তার আরব মিত্ররা ইরান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন এবং মস্কোর সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক রক্ষার মাধ্যমে ‘হাইব্রিড’ নীতি গ্রহণ করেছে।
 
সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রভাবশালী দেশ সৌদি ও ইরানের মধ্যে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি হয়। বাইডেন প্রশাসন যদিও প্রকাশ্যে এ চুক্তির গুরুত্বকে খাটো করে দেখিয়ে বিবৃতি দিয়েছে, তবে তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চল ও বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিষয়টি যে ওয়াশিংটনকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে তা স্পষ্ট হয়েছে।
গত দুই দশক ধরে তেল ও গ্যাস উৎপাদন বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত জ্বালানি খাতে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে। ফলে দেশটির হয়তো আর উপসাগরীয় তেলের প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে এই অঞ্চলের মোড়ল হিসেবে তারা থাকতে চাইছে, যাতে চীনের সঙ্গে যেকোনো সংঘাতময় পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সরবরাহ থেকে বেইজিংকে বিচ্ছিন্ন ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্রদের জন্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।
 
গত মাসে চীনকে সতর্ক করে ব্লিঙ্কেন বলেন, এখন আমাদের সামনে সবচেয়ে গুরুতর ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চীন। দেশটির সেই অভিপ্রায় আছে এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত একটি  অবাধ, মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সক্ষমতাও বাড়ছে চীনের।’
 
তবে ওয়াশিংটনের গণতন্ত্রের চেয়ে বেইজিংয়ের কর্তৃত্ববাদী শাসন কাঠামোই হয়তো উপসাগরীয় দেশগুলোর শাসকদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। এমন অবস্থায় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটাতে রাশিয়াকে সাহায্য না দিতে এ দেশগুলোকে হুঁশিয়ার করেছে ওয়াশিংটন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, যেকোনো একটি পক্ষে থাকতে হবে, অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্রসহ জি-৭ জোট কঠিন ব্যবস্থা নেবে।

তবে ওয়াশিংটনের এই হুমকিতে কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না। বরং এতে ঘটনা ঘটছে উল্টো। তেলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ এখন পর্যন্ত গ্রাহ্য করেনি সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল সৌদি আরব উৎপাদন বাড়ালে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কিছুটা কমবে। এতে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিরূপ প্রভাব অনেকটাই কমবে মিত্র দেশগুলোর ওপর।
 
সৌদি আরব তা তো করেইনি, উল্টো মস্কোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ার বিষয়েও অনিচ্ছুক রিয়াদ। কার্যত সৌদির শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি’ দেখাচ্ছেন, তাতে এই অঞ্চলে তার জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়ছে বলেই জানা গেছে।
 
এদিকে চলতি সপ্তাহেই সৌদি আরব বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে প্রতিদিন অন্তত ১০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল কম উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছে। গত রোববার (৪ জুন) দেশটির কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, আগামী জুলাই থেকে তেল উৎপাদন কমানোর বিষয়টি কার্যকর হবে।
 
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ওপেক প্লাসের সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রীদের বৈঠক শেষে সৌদি আরব এ সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সৌদি একাই নয়, জোটগতভাবে মোট ১৪ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমানো হবে। যেখানে সৌদি আরব একা ১০ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমাবে এবং ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ সৌদিসহ বাকি সদস্যরা মিলে প্রতিদিন মোট ১৪ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমাবে।
 
ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলো বিশ্বের অপরিশোধিত তেলের প্রায় ৪০ শতাংশ এককভাবে উৎপাদন করে থাকে। এর ফলে সৌদি আরবের নীতিগত এ সিদ্ধান্ত তেলের দামের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। গত বছরের ডিসেম্বরে সৌদি আরব সফর করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সফরে আরব সম্মেলন এবং চীন-জিসিসি সম্মেলনে যোগ দেন তিনি।
 
এছাড়া গত মার্চ মাসের শুরুতে চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরব দুই দেশই সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চুক্তিটির মধ্যস্থতা করেন। এছাড়া মার্কিন চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সম্প্রতি সিরিয়াও আরব লীগে ফিরে এসেছে।
 
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাপক বিরোধিতার পরও গৃহযুদ্ধের সময় সিরিয়ায় শিয়াগোষ্ঠীর সমর্থন পেয়েছিলেন আসাদ। এছাড়া শক্তিশালী দুই দেশ ইরান-রাশিয়ার সমর্থন অব্যাহত থাকায় ক্রমাগত আন্তর্জাতিক চাপ থাকার পরও সব মিলিয়ে ক্ষমতায় বহাল আছেন তিনি।
 
গৃহযুদ্ধের সময় ইরান সিরিয়া সরকারকে ক্রমাগত স্থল অভিযানে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছিল। একইসঙ্গে ২০১৫ সালে রাশিয়ার উপস্থিতিতে দৃশ্যপট রাতারাতি পাল্টে যায়। মস্কোর বিমান হামলায় সেসময় পিছু হটতে বাধ্য হয় সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। বড় শহরগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয় বাশার আল আসাদ বাহিনী। এখনও আসাদ সরকারকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপ্রক্ষ রাশিয়া ও ইরান।
 
প্রথমত মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সৌদি আরবের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন, এরপর সিরিয়ার আরব লীগে ফেরায় একে একে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের মিছিলে রাজনীতির মাঠে একপ্রকার নিঃসঙ্গ দিন কাটাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
 
বিশ্লেষকদের মতে, একসময় যে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধানই হত না, সেখানে দীর্ঘ ১২ বছর পর আরব লীগে সিরিয়ার ফেরায় স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্য অস্তগামী।
 
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই নতুন মনোভাব আরও কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। দেশটি ফ্রান্সের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক উন্নত করেছে। এছাড়া ইরান, রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক জোরদারে তৎপরতা বাড়িয়েছে।
 
এদিকে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত ব্রিকস গ্রুপে যোগ দিতে যাচ্ছে সৌদি আরব। ব্রিকসে সৌদি আরবকে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে একটি বার্তা দেয়া হবে বলে মনে হচ্ছে। তা হলো বৈশ্বিক আর্থিক সংস্থায় পশ্চিমাদের যে একচেটিয়া অবস্থান রয়েছে, তাকে চ্যালেঞ্জ জানানো।
 
এছাড়া ধনী দেশগুলোর সংস্থা জি-৭ এর বিপরীতে আলাদা একটা জোট গড়ার প্রচেষ্টা এটি। মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিশরও ব্রিকসে যোগ দিতে চায় বলে জানা গেছে।
 
এটা ঠিক যে, গত তিন দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাবশালী কৌশলগত শক্তি ছিল এবং আজও রয়েছে। কিন্তু আগামী তিন দশক তা অব্যাহত থাকবে কি না তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host