মোঃ আনোয়ার হোসেন আকুঞ্জী, খুলনা ব্যুরো।। আগামী বৃষ্টির প্রভাব মোকাবিলায় জলাবদ্ধতা রোধে প্রশাসন এবার সরব। বিল ডাকাতিয়া ও আশপাশের এলাকাবাসিকে বাঁচাতে দিন-রাত সেচ পাম্প দিয়ে পানি অপসারণের চেষ্টা চলছে। তবুও অতিবৃষ্টিতে পিছিয়ে পড়ছে কর্তৃপক্ষ, ডুবে গেছে খাল, বিল, বসত বাড়ি ও সবজি ক্ষেত।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল ডাকাতিয়া প্রায় ১৪ হাজার ৩শ’ হেক্টর আয়তনের। ডাকাতিয়া অঞ্চলের সাথে রয়েছে বিল বরুনা, ভায়না, মধুগ্রাম, তাওয়ালিয়া, খুকশিয়া, শিংগা, মাধবকাটি, খড়িয়া, মির্জাপুরসহ অসংখ্য বিল। খুলনা ও যশোরের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই বিলগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
১৯৬০-এর দশকে পোল্ডার নির্মাণের পর নদীতে পলি জমে নদীগুলো বারবার ভরাট হয়েছে। শোলমারী, হামকুড়া, ভদ্রা, শ্রী, হরি ও হামকুড়া নদীর মাধ্যমে জোয়ার-ভাটার পানির প্রবাহ দিয়ে বিলগুলো জলাবদ্ধতামুক্ত থাকত। বিল ডাকাতিয়ার দক্ষিণ সীমানা থেকে বাগমারা, রংপুর ইউনিয়নের শলুয়া বাজার পর্যন্ত শৈলমারী নদীর ওপর সাতটি স্লুইস গেট এবং অন্যান্য জলনির্গমন ব্যবস্থা রয়েছে।
কিন্তু হামকুড়া ও ভদ্রা নদীর ভরাটের পর বিকল্প হিসেবে শোলমারী স্লুইজ গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হলেও নদীতে পলি জমে বিল ডাকাতিয়া ও আশপাশের বিলগুলো বারবার জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
রঘুনাথপুর ইউনিয়নের দেড়ুলী, কৃষ্ণনগর, রংপুর ইউনিয়নের বটবেড়া, মুজাগুটা, বারানশী, সাড়াভিটাসহ অন্তত ৪৫টি গ্রাম প্রতিবছর পানিতে নিমজ্জিত হয়। এ পানি জমায় তারা শুধু ক্ষেতে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না, বরং বসতবাড়ি হারানোর উপক্রম। এমনকি ধানকাটা-খাওয়া তো দূরের কথা মাথা গুঁজে থাকার জায়গাও সংকট।
গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শোলমারি স্লুইজ গেট এলাকায় ২টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সেচ পাম্প বসানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চারটি স্কেভেটর মেশিন দিয়ে গেটের মুখ থেকে পলি অপসারণের কাজ চলমান।
স্থানীয়রা জানান, পাম্প ও কপাট দিয়ে পানি নিষ্কাশনে কাজ হচ্ছে, তবে পরিমাণে সীমাবদ্ধতার কারণে সম্পূর্ণ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় কৃষক রুবেল বলেন, ডুমুরিয়ার বিল ও গ্রামগুলোতে সারা বছর পানিতে নিমজ্জিত থাকায় ধান, মাছ ও সবজি উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়েছে। পাম্প ও কপাট দিয়ে পানি সরানো হচ্ছে, কিন্তু জলাবদ্ধতা এখনও রয়েছে।
সেচ পাম্প অপারেটর শাকিল আহম্মেদ জানান, ভাটার সময়ে একসাথে সেচ ও কপাট দিয়ে পানি সরানো সম্ভব হচ্ছে না, কারণ সামনে পানি জমে যাচ্ছে। এতে সমস্যার পরিমাণ বেড়ে যায়।
হামকুড়া নদী সংগ্রাম কমিটির সভাপতি শেখ সেলিম আকতার স্বপন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংগঠনের নামে আন্দোলন করলেও আমাদের দাবি পূরণ হয়নি। নদীর নব্যতা বজায় রাখতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি। নব্যতা না রক্ষা করলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সোনামুখ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা এ এম কামরুল ইসলাম বলেন, নদীর নব্যতা রক্ষায় খাল ও সংযোগ খাল উন্মুক্ত রাখা এবং সব বিলের সংযোগ রক্ষা অত্যাবশ্যক। শলুয়া বাজারের স্লুইজ গেট খুলে পানি নিষ্কাশনের পথ সুগম করতে হবে। শোলমারি অঞ্চলে পাম্প সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং পানি নদীতে পৌঁছানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন জানান, বিল ডাকাতিয়া অঞ্চলে জলাবদ্ধতা রোধে অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারি সহায়তায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ২টি সেচ পাম্প বসানো হয়েছে এবং ৪টি স্কেভেটর মেশিন দিয়ে পলি অপসারণ করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আরও মেশিনের জন্য অবহিত করেছি।
খুলনা পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, নদীর নব্যতা রক্ষা, পলি অপসারণ ও জল নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে এবং আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।