প্রাকৃতিক চিনির বদলে কোমল পানীয়, চুইংগাম ও আইসক্রিমে ব্যবহার করা হয় কৃত্রিম চিনি, যা বাণিজ্যিকভাবে ‘অ্যাসপারটেম’ নামে পরিচিত। আর এটি সেবনে ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ডব্লিউএইচওর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিশ্ব ক্যানসার গবেষণা সংস্থার (আইএআরসি) এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আগামী ১৪ জুলাই আইএআরসি আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে ঘোষণা দেবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, ১৯৮১ সাল থেকে ডব্লিউএইচও এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (এফএও) সমন্বয়ে গঠিত কমিটি জানিয়েছিল, বয়স এবং স্বাস্থ্যের ওপর ভিত্তি করে একেক জনের অ্যাসপারটেম গ্রহণের সীমা একেক রকম। তবে তখনকার প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট মাত্রার অ্যাসপারটেম গ্রহণে কোনো সমস্যা নেই চলে জানানো হয়।
তবে পরে এ ব্যাপারে আইএআরসি কয়েকবার আপত্তি জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও ঠিক কতটুকু অ্যাসপারটেম গ্রহণ করা যাবে বা ক্যানসারের ঝুঁকি আসলে কতখানি সে বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি। তবে এবার এ ব্যাপারে শিগগিরই বিস্তারিত ঘোষণা আসবে বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের কোমল-পানীয় কতটা নিরাপদ?
বাংলাদেশের প্রায় প্রতি বয়সের মানুষের কাছে সোডা বা কোমল পানীয় জনপ্রিয়। অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতন বা ডায়াবেটিস আছে বলে ডায়েট কোমল পানীয় পান করে থাকেন। এছাড়া শিশুদের কাছে চুইংগাম ও আইসক্রিম অতি জনপ্রিয় একটি খাবার। ডায়েট কোমল পানীয়, চুইংগাম ও আইসক্রিম মিষ্টি লাগার মূল কারণ অ্যাসপারটেম।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ৬ হাজার খাদ্যদ্রব্যে চিনির বদলে অ্যাসপারটেম ব্যবহার করা হয়। শুধু কোমল পানীয় না চুইংগাম, ইয়োগার্ট ও আইসক্রিমেও ব্যবহৃত হচ্ছে অ্যাসপারটেম। বিশেষ করে শিশুখাদ্যে অ্যাসপারটেম ব্যবহারের ফলে অল্প বয়সে অধিক অ্যাসপারটেম ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরছেন শিশুরা।
প্রতিবেদন নিয়ে হৈচৈ
আইএআরসির প্রতিবেদন নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর অনেকেই বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির মতে অ্যাসপারটেমে ক্যানসারের ঝুঁকি আছে। মূলত প্রতিষ্ঠানটির ক্যাটাগরি অনুযায়ী গ্রুপ-১-এ থাকা পণ্য সরাসরি ঝুঁকিপূর্ণ বলে গণ্য করা হয়। গ্রুপ-২-এ থাকা পণ্যকে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে ধরা হয়। গ্রুপ-২ বি-এ থাকা পণ্য ক্যানসারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত না হলেও, ঝুঁকিপূর্ণ বলে সন্দেহ করা হয়। আর গ্রুপ-৩-এ থাকা পণ্য ঝুঁকিপূর্ণ না বলে নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে, আইএআরসির প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব বেভারেজ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক কেট লোটম্যান বলেছেন, ‘এ ধরনের অবিবেচক প্রতিবেদনের কারণে মানুষ আবার চিনির ব্যবহার বাড়িয়ে দেবে। এটা মূলত ভোক্তাদের ভুল পথে পরিচালিত করবে।’
এদিকে, গত বছর ১ লাখ মানুষের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি চিনি ও অ্যাসপারটেম সেবন করে তাদের ক্যানসার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি। তবে এর মধ্যেও একেক জনের জীবনমান দ্বারা গবেষণার মূল বিষয়টি প্রভাবিত হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এক্ষেত্রে অ্যাসপারটেম কোন গ্রুপের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, তা এখনও জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি। এ ব্যাপারে আমেরিকান ওপেন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্যাভিন ম্যাককনে বলেন, আইএআরসি বলছে ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ সেটি স্পষ্ট করে বলতে পারছে না। এতে করে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে এক রকমের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
অ্যাসপারটেম মূলত চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা চিনির চেয়ে ২০০ গুণ বেশি মিষ্টি। মিথাইল এস্টার দিয়ে তৈরি অ্যাসপারটেম দামে চিনির থেকে সস্তা হওয়ায় কোম্পানিগুলো কোমল পানীয়তে দেদারসে এ উপাদানটি ব্যবহার করে আসছে।
১৯৭৪ সালে অ্যাসপারটেমকে খাদ্য উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন এটিকে ব্যবহারযোগ্য বলে স্বীকৃতি দেয়। তবে এর পেছনে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।