মোঃ শাহানুর আলম, হরিণাকুণ্ড(ঝিনাইদহ) সংবাদদাতাঃ বিদেশি জাতের মাল্টা,কমলা আর কুল চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন হরিণাকুণ্ডুর কৃষি উদ্যোক্তা মনিরুল ইসলাম। নিজের স্বপ্ন পুরনের আশায় বিদেশ থেকে বাসায় এসে ব্যবসা-বাণিজ্য না করে শুরু করেন কৃষি কাজ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতায় তার নিজের চার বিঘা জমিতে রোপন করেন বিদেশি জাতের মাল্টা,কমলা, বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, থাই ও আপেল কুলের মিশ্র ফলের বাগান। কুল চাষ করেই এখন বদলে গেছে মনিরুলের জীবন। তার পুরো বাগান জুড়ে এখন লাল-সবুজের সমারহ।
ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শিতলী গ্রামের মো. মনিরুল ইসলাম (৫৫) এর সফলতায় অন্য কৃষকরাও ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বিদেশি জাতের এই কুল চাষের উপযোগী হওয়ায় সাফল্য পেয়েছেন মনিরুল ইসলাম । মনিরুলের মতন উপজেলার অনেক চাষি এখন ড্রাগন, মাল্টা, কমলাসহ, কুল চাষ করে ভাগ্য বদলের চেষ্টা করছেন। আগামীতে এই অঞ্চলে কুল চাষসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৌসুমী ফলের চাষ বাড়ার আশা করছেন তারা।
সরেজমিনে বাগানে গিয়ে দেখা যায়, মনিরুল ইসলাম প্রায় চার বিঘা জমির ওপর কুল বাগান, এক বিঘা মাল্টা, এক বিঘা কমলাসহ বেল, ড্রাগন, লিচু, আম, জাম, কাঠালের চাষ করেছেন।
হরিণাকুণ্ডু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে হরিণাকুণ্ডুর বিভিন্ন এলাকায় উচ্চফলনশীল বিদেশি জাতের কুল চাষ হচ্ছে। বাজারে বল সুন্দরী, আপেল কুল, কাশ্মীরি, ভারত সুন্দরী ও টক-মিষ্টি কুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ছোট বড় অনেক বাগান হয়েছে এখানে।
শায়না এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধীকারী মনিরুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি আলাদা ভালো লাগা ছিল। তাই লেখাপড়া কমবেশি করে বিদেশে পাড়ি জমায় অর্থ ইনকামের জন্য। সেই টাকা দিয়ে ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে সরকারি কর্মকর্তা হয়েছে, মেয়েটা কলেজে পড়াশোনা করছে, আমার স্বপ্ন ছিল কৃষি নিয়ে কিছু করার। চিন্তাভাবনা করে এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয় এবং পরামর্শ নিয়ে বিদেশি জাতের মাল্টা, কমলাসহ কুল বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়। পরে হরিণাকুণ্ডু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধিনে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের জমিতে বিভিন্ন জাতের ফল চাষের জন্য মাটি প্রস্তুত করি।
তিনি আরও বলেন, বাড়ির আঙ্গিনায় বাগান হওয়ায় চারা রোপণ করার পর আমি আর আমার স্ত্রী বাগানের পরিচর্যা করতাম। রোপনের ৯ মাসের মাথায় সব গাছে ভালো ফলন এসেছে। ডিসেম্বরের ১০ তারিখ থেকে বিক্রি শুরু করি। খুব অল্প সময়ে ভালো লাভজনক ফল বিদেশী কুল। প্রতিটি গাছে গড়ে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কেজি ফল পাব। প্রতি কেজি কুল এখন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি করছি। তিনি আরও বলেন, আশা করছি আমি আমার বাগান থেকে এই বছর কমলা, মাল্টা, কুলসহ অন্যান্য ফল বিক্রি করে ৭থেকে ৮ লক্ষ টাকা আয় করবো।
এছাড়াও তিনি আশা প্রকাশ করেন ফলের চারা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে চাষিরা প্রতারিত হন। এজন্য তিনি এলাকার যুবক কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য শায়ান এগ্রো ফার্মা প্রতিষ্ঠা করছেন এর মাধ্যমে কমলা, মাল্টা, বিদেশী বিভিন্ন জাতের কুলের চারা বিক্রয় করবেন যাতে যুবক কৃষি উদ্যোক্তারা আর প্রতারিত না হয়।
এব্যাপারে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর বলেন এধরণের কৃষি উদ্যোক্তাকে আমরা সব সময় অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকি তাছাড়া নতুন উদ্যোক্তাদেরকেউ আমরা কৃষি অফিস থেকে সকল ধরণের সহযোগীতা করার চেষ্টা করি। মনিরুল ইসলামের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানায়। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপসহকারী উদ্ভীদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মনিসংকর বিশ্বাস, ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান।