বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৬ অপরাহ্ন
নোটিশ
যে সব জেলা, উপজেলায় প্রতিনিধি নেই সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। বায়োডাটা সহ নিউজ পাঠান। Email: newssonarbangla@gmail.com

ঐতিহ্য হারাতে বসেছে রাজৈরের রাজারাম মন্দির

Reporter Name
Update : রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৬:০৭ অপরাহ্ন

সুজন হোসেন রিফাত মাদারীপুর প্রতিনিধি : সংস্কারের অভাবে নিজের জৌলুশ হারাতে বসেছে মাদারীপুরের  রাজৈর ের ঐহিত্যবাহী রাজারাম রায় চৌধুরীর বসতভিটা ও মন্দির। রাজৈর পৌর এলাকা থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দুরে  ও  মাদারীপুর  শহর থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাজৈর উপজেলার খালিয়া এলাকায় অবস্থিত এই মন্দিরটির।

স্থানীয় ও সরজমিন  থেকে জানা যায়,  ২৩ শতাংশ জমির ওপর অবস্থিত রাজা রাম মন্দিরটি। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য, ১৬ ফুট প্রস্থ ও ৪৭ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি দেখতে অনেকটাই চৌচালা ঘরের মতো। পুরো মন্দিরজুড়ে টেরাকোটায় রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন দৃশ্যাবলী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দেব-দেবী, পশু-পাখি ও লতা-পাতার অসংখ্য চিত্র আছে।

এই মন্দিরের ব্যাপারে প্রবাদ আছে, বহু বছর আগে রামের বাবা-মা ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র। তারা দুজনেই উজানি রাজার বাড়িতে দাস-দাসী হিসেবে কাজ করতেন। রাম তখন খুবই ছোট। রামকে তারা উজানি রাজার বাড়ির বারান্দায় রেখে বাইরে কাজে যেতেন। তখন রোদ-বৃষ্টিতে ফণীমনসা এসে রামকে ছায়া দিয়ে রাখতো। একদিন উজানি রাজা দেখেন রোদের মধ্যে ফণীমনসা শিশু রামকে ছায়া দিচ্ছে। বিষয়টি দেখে রাজা উজানি ও রানী দুজনে মিলে রামের মা-বাবাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেন। সঙ্গে দান করেন জমিদারি। তারপর বড় হয়ে রাম ধরে রাখেন সেই রাজস্ব।

স্থানীয় বিনয় মজুমদার বলেন, প্রাচীনকালে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। এটি দেখতে খুব সুন্দর। তবে দিনে দিনে এর সৌন্দর্য্য নষ্ট হতে চলছে। তাই সংস্কার দরকার।

মাদারীপুরের ফ্রেন্ডস অভ নেচারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রাজন মাহমুদ বলেন, মাদারীপুরের রাজৈরের খালিয়া এলাকায় যে একবার যাবে তার বার বার যেতে ইচ্ছে করবে। পুরাকীর্তির দর্শনে বিমুগ্ধ হয়ে যাবে নির্দ্বিধায়। কয়েক বছর আগে রাজা রাম মন্দিরের কাছে সুবিখ্যাত শান্তিকেন্দ্র ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে দিনের পর দিন এই এলাকা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্র পরিণত করার কোনো পদক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। পর্যটকেরা এসব অসুবিধা মোকাবিলা করে এখানে আসছেন। ফিডার সড়ক এ মন্দিরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করায় যাতায়াতে সুবিধা হয়েছে। শীতকালে দেশের শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থীরা আসে। কোলাহলে মুখরিত হয়ে থাকে রাজারাম রায় চৌধুরীর এলাকাটি।

তিনি আরও বলেন, রাজা রাম মন্দির এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পুরাকীর্তি ও জমিদার বাড়িগুলো নিয়ে একটি সুন্দর পর্যটন কমপ্লেক্স গড়ে তোলা যায়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ পর্যটন করপোরেশনের কাউকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না। পর্যটন করপোরেশনের পুরাতন পর্যটন কেন্দ্রগুলো নিয়ে আঁকড়ে আছে। নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কোনো উদ্যোগ নেই। দর্শনীয় এ এলাকাটি পর্যটনের অধীনে আনা হলে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হবে এই এলাকাটি।

বৃহত্তর ফরিদপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদের সদস্য ও মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক সুবল বিশ্বাস বলেন, দেশভাগের সময় রাজা রামের পরিবারের লোকজন অন্যত্র চলে যান। বংশীয় পরিচয় হিসেবে শুধু আছে মন্দির ও বসতভিটা। এরইমধ্যে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বসতভিটা ভেঙে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীন এ ঐতিহ্য । অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পুরনো মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। আর মন্দিরটি টিকিয়ে না রাখা হলে জেলার ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐহিত্য বিলুপ্তি হতে পারে।

সংস্কৃত মন্ত্রণালয় থেকে মন্দিরটি দেখাশোনার জন্য দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সুশীল বোস বলেন, সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত হয় প্রাচীন ভাস্কর্য শিল্পের অনুপম নিদর্শন খালিয়া রাজা রাম রায় চৌধুরী মন্দির। এটি দীর্ঘদিনের পুরনো মন্দির হওয়ায় সংস্কার করা প্রয়োজন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By Uttoron Host